একজন জুলফিকার আলী এবং আমাদের অস্বস্তি…

সালেহ নোমান
Published : 3 May 2012, 03:46 PM
Updated : 3 May 2012, 03:46 PM

জুলফিকার আলী মজুমদার র‌্যাব- ৭ এর দায়িত্ব নেয়ার পর চট্টগ্রামে তার প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিলো আমার। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে র‌্যাব ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক হিসেবে বারবার বলছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম দিয়ে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণে মনোনিবেশ করবেন তিনি।

সাংবাদিকের মন কোন কিছু সহজে বিশ্বাস করতে চাইনা। জুলফিকারের সেই দিনের সেই প্রতিশ্রুতি তো সহজে বিশ্বাস করতে চাইনি। তারপরও জোর করে আস্থা রেখেছিলাম কারন র‌্যাব পুলিশের উপর আস্থা না রাখলে আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা কোথায় দাড়াবো? রাষ্ট্রের আইন, বিচার আর শাসন বিভাগের উপর আস্থা যদি না থাকে তাহলে তা হবে রাষ্ট্রের উপরই আস্থা না থাকার নামান্তর।

ওই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে অফিসে ফেরার পথে কয়েকজন বন্ধু সাংবাদিক মন্তব্য করেছিলেন, জুলফিকার নতুন কিছু বলেননি, যাও কিছু বলেছিলেন তা মূলত বলার জন্য বলা। এতে নিউজ হওয়ার মত তেমন কিছু নেই। সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকরা কিছু বিষয়ে সুনিদিষ্ট করে জানতে চাইলেও জুলফিকার সাহেব উত্তর দিয়েছিলেন রাজনীতিবিদদের মতো, র‌্যাবের মত একটি প্রতিষ্ঠানের কমান্ডারের মত নয়।

এরপর সাংবাদিকদের মধ্যে বিগত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় চট্টগ্রামের দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা জুলফিকার স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন বলে গল্প হয়েছে । ওয়ান ইলেভেনের ওই সময়টাতে জুলফিকার মজুমদারের কার্যক্রম নিয়ে তখন তেমন একটা কিছু না জানার কারনে সাংবাদিকদের এইসব গল্পকে আমার কাছে কিছুটা রটনা বলে মনে হয়েছে।

তালসারা দরবারে অভিযান এবং টাকা লুটের ঘটনা যখন জানাজানি হল তখন অন্য অনেকের মত কিছুটা হলেও হোঁচট খেয়েছিলাম। যে র‌্যাব এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা লুটপাটে জড়িত থাকলে সমগ্র বাহিনীর কি অবস্থা তা ভেবে কিছুটা হলেও অস্তিত্ব অনুভব করলাম।

আবার এই অস্থিত্ব কাটতে শুরু করলো যখন দেখলাম বিষয়টি তদন্ত করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর জুলফিকার আলীকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অবশেষে সুনিদিষ্ট মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা হিসেবে এবং আরো আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে যে জুলফিকারের ভয়ে তটস্থ ছিলেন চট্টগ্রামের অনেক দুষ্কৃতিকারী সেই জুলফিকার এখন কারাগারে, অনেক মুখরোচক আলোচনার রসদ।

অপরাধ দমন বাহিনী হিসেবে র‌্যাবের অনেক অর্জনের পাশাপাশি বিতর্ক ও কম নয়। এই বিতর্কগুলো যে জুলফিকার আলীদের মত কিছু ব্যাক্তির জন্য, তা এখন স্পষ্ট। এই জুলফিকারদের লোভের লক লকে জিহবা যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে র‌্যাবের অর্জনগুলো অনেক বেশি স্পষ্ট হবে দেশবাসীর কাছে।