তেজগাওএ গাড়ী পোড়ানো ও সচিবালয়ে বোমা হামলার জন্য গনতন্ত্র বাজি রেখেছেন, রক্তাত্ত বিডি নিউজের জন্য কি করবেন?

সালেহ নোমান
Published : 29 May 2012, 08:46 AM
Updated : 29 May 2012, 08:46 AM

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ী পোড়ানো আর সচিবালয়ে বোমা ফাটানোর ঘটনায় গত একমাস ধরে রাজনীতি তোলপাড়। ক্ষমতা বলয়ের প্রধান দুই কেন্দ্রের উপর আঘাত আসায় সরকার গনতন্ত্রের ভবিষ্যত বাজি ধরে বিরোধী দলের ৩৫নেতাকে জেলে পাঠিয়েছে। উঠে পড়ে লেগেছে তাদের শাস্তি দিতে। সংবাদপত্র তথা মিডিয়াতো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিক নিয়ে অহনিশি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সেই মিডিয়া যখন হামলার শিকার হয় তখন সরকার কি করে,সেটা আমরা দেখতে চাই……..

দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদ পত্র বিডিনিউজ২৪ এ সন্ত্রাসীরা দল বেধে হামলা করে সাংবাদিকদের রক্ত ঝরালো। এর আগে রাস্তায় তিন ফটো সাংবাদিককে পিটিয়ে রক্তাত্ত করলো পুলিশ। তারও আগে দুই সাংবাদিক সাগর- রুনি দম্পতি খুন হলো নিজের বাসায়। এইসবতো সাম্প্রতিক ঘটনা।

এই সরকারের সময় একক পেশাজীবি হিসেবে সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। খুন হয়েছে ১৪জন সাংবাদিক, আহত হয়েছে আরো কয়েক"শ । এককভাবে আর কোন পেশাজীবি এত বেশি হারে খুন নির্যাতন হয়নি।

এক এগারোর সরকার বিদায় নেয়ার পর সাংবাদিকদের চোখের পানি আর গায়ের রক্ত ঝরা শুরু হয়েছিলোতো সরকারের হাতে। বর্তমান সরকারই মিডিয়া হাউজগুলোতে প্রথম আক্রমন শুরু করে। প্রথমে চ্যানেল ওয়ান পরে দৈনিক আমার দেশ পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে সাংবাদিকদের টেনে হিচড়ে নির্যাতন করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহার খাতুন ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ইউনাইটেড হাসপাতালে বিডি নিউজের আহত সাংবাদিকদের দেখতে গিয়ে নানা কথা বলেছেন। সাগর- রুনি দম্পতি খুনের পর এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলা কথাগুলো কোন কাজে আসেনি। তাই ইউনাইটেড হাসপাতালে গভীর রাতে একই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বচনগুলো এখন পর্যন্ত অর্থহীন।

সরকারের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ জমা হলেও আমরা সাংবাদিকরা তা চেপে রাখি। কারন আমাদের ক্ষোভ বিরোধী দলের কথাবার্তার সাথে মিলে যাবে সেজন্য। সরকার বিরোধী প আমাদের ক্ষোভকে কাজে লাগাবে এই আশংকায় আমরা প্রায় সময় বিক্ষুদ্ধ হলেও তা খুব একটা প্রকাশ করিনা। শুধু এই সরকারের সময় কেন, প্রত্যেক সরকারের সময়ই কম বেশি একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ।

সচিবালয়ে বোমা হামলা এবং প্রধান্মন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ী পোড়ানোতে সরকার অপমানবোধ করছে তা তাদের পরবর্তী কার্যক্রমে স্পষ্ট। একসাথে ৩৫জন বিরোধী দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাকে জেলে পাঠিয়ে সে অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা হয়তো ধরে নিয়েছেন মতার কেন্দ্রে এই হামলা তাদের প্রশাসনিক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল। তাই তারা গনতন্ত্রবাজি ধরতেও দ্বিধা করেনি। বিরোধী জোটের নেতাদের জেলে পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই গনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বিপন্ন হওয়া নিয়ে জাতি আশংকিত হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রের চতূর্থ স্তম্ভ মিডিয়া যেভাবে একের পর এক হামলার শিকার তাতে এই আতংক আরো বাড়ছে।

নিজ ঘরে খুন, রাস্তায় পুলিশের পিটুনী আর নিজ অফিসে সন্ত্রাসীদের হাতে রক্তাত্ত হওয়াতো মিডিয়া কর্মীদের জীবনে নিত্য ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। কোন ঘটনারই দোষীরা গ্রেফতার না হওয়ায় সাংবাদিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করে এইসব ঘটনায় সরকারের প্রত্য পরো ইংগিত আছে। এক কথায় বলা যায় রাষ্ট্রের চতূর্থ স্তম্ভ মিডিয়া আজ সত্যিই বিপন্ন।

সরকারের নির্যাতনের বিচারের জন্য বিরোধী দলতো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার কথা বলছে। তবে আমরা আশা করিনা এমন কোন পরিস্থিতি তৈরী হবে যে, আমাদের দেশের নেতা নেত্রীদের নামে আন্তর্জাতিক পরোয়ানা জারি হবে। এখনো আমরা আশা করি এইসবের অবসান হবে।

আজকের দিন পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে হলেও আশা রাখছি, সাগর রুনিসহ সকল সাংবাদিকদের খুনীরা ধরা পড়ে শাস্তি পাবে, তিন ফটো সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় দোষী এসি শহীদুল গ্রেফতার হয়েছে, বিডি নিউজে হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়ে জেলে গেছে।

আর আমাদের আশা ভংগ হলে হয়তো সরকারে কিছু যায় আসবেনা। কিন্তু নিত্য গুম খুনের ঘটনা যদি কখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উঠে তখন নির্যাতিত সাংবাদিকরাও বিচার প্রার্থী হবেন কিনা জানিনা তবে, এইসব ঘটনা মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রমান হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে।