গলাকাটা নয় অখণ্ড পাসপোর্টই সম্ভবপর!

সাজ্জাদ আহসান
Published : 26 Sept 2011, 10:46 AM
Updated : 26 Sept 2011, 10:46 AM

প্রায়শই এমন সংবাদ পাওয়া যায় যে বিমানবন্দরে বিদেশ যাবার প্রাক্কালে গলাকাটা পাসপোর্টসহ কিছু যাত্রী আটক হয়েছেন। বিশেষত বিদেশী ভিসা রয়েছে এমন সব পাসপোর্টের বাহকের ছবি পরিবর্তন করে এই আইন বিরোধী কাজটি করা হতো বলে শুনেছি। মোদ্দা কথা ভিসা জালিয়াতির জন্যই পাসপোর্ট ব্যবচ্ছেদ করা হতো। হালে শুনেছি অনেক রোহিংগা জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে। অর্থাৎ হালে গলাকাটা নয় অখন্ড পাসপোর্টই সম্ভবপর হচ্ছে। কিভাবে এত বড় অনিয়ম হচ্ছে সেটা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ঠিক কিভাবে এটা হচ্ছিল তা জানা যাচ্ছিল না। আজকের দৈনিক অর্থনীতিতে প্রকাশিত -`শ খানেক পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পানের দোকানে!` খবরটি পড়ে উত্তরটি জানা গেল। ডি এস বি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মচারী আবেদনকারীর ঠিকানায় না গিয়ে, উল্লেখিত ঠিকানায় সত্যি ঐ আবেদনকারী থাকেন কিনা তা যাচাই না করে, পানের দোকানে বসে 'যাচাই' এর মত স্পর্শকাতর মতামত দিয়ে দেয়ার ঘটনা সংবাদটিতে প্রকাশিত হয়েছে।

এই সংবাদটি যদি সত্যি হয় তাহলে তা ভাবার মত। এতে উক্ত সরকারী কর্মচারী শুধু নিজ দায়িত্ব অবহেলার দায়ে দুষ্ট হবে না সেই সাথে পুরো জাতির দায় অবহেলার বিষয়টিও সামনে চলে আসবে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে এপর্যন্ত যত বাংলাদেশী বিদেশ গেছেন বা যাচ্ছেন আসছেন তাদের প্রত্যেকেরই পাসপোর্ট এর বৈধতা এখন প্রশ্ন উচ্চকিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের কেউই আমরা এই পাসপোর্ট জালিয়াতির কলঙ্ক থেকে মুক্ত নই।

পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন দেখা যাচ্ছে যে শুধুমাত্র পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেই যথেষ্ট। আমি মনে করি এতে সমাজ বিরোধী লোকের পক্ষে এই পদ্ধতটিকে স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগানো খুব সহজ। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় উন্নত বিশ্বের মত যাচাই এর কাজটি বহু স্তর বিশিষ্ট হতে পারে। সরকারের উচিত এখন থেকে ইস্যুকৃত প্রতিটি পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য একটি জাতীয় ডাটাবেজ এ সংরক্ষণ করা উচিত। সেইসাথে পাসপোর্ট প্রদানের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশন এবং ইউনিয়ন পরিষদের ডাটাবেজ / সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধীকরণের ডাটাবেজ অথবা হাসপাতালের ডাটাবেজ , ব্যাংক হিসাবের ডাটাবেজ এর সাথে মিলিয়ে নিয়ে তবে পাসপোর্ট প্রদান করা। এই ডাটাবেজগুলোর মধ্যে যে গুলো এখন হালনাগাদ আপাত সেগুলোর সহায়তা নেয়া যেতে পারে অধিকতর যাচাই এর জন্য। পুলিশের বাড়িতে গিয়ে যাচাই এর সাথে অনলাইন-এর স্বল্প সময়ের যাচাই প্রক্রিয়া মিলিয়ে নিলে পাসপোর্ট জালিয়াতির দায় থেকে আমরা সকলেই মুক্ত হতে পারব। যদি জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিতভাবে এই অনলাইন যাচাই এর কাজটি শুরু করা যায় তাহলে তা শুধু পাসপোর্ট জালিয়াতি বন্ধে সহায়ক হবে তা নয় সেই সাথে তা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে ।