কোনটা বেশি প্রয়োজন ইট কেনা নাকি বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যের, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা?

মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন
Published : 5 Dec 2011, 05:34 AM
Updated : 5 Dec 2011, 05:34 AM

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ি যুদ্ধ অনেক ত্যাগ, অনেক কষ্ট,অনেক রক্ত এবং অনেক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত যে স্বাধীনতা তার স্মৃতিরক্ষা পুরো জাতির পবিত্র দ্বায়িত্ব । এ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা প্রাণ হারিয়েছেন -তাদের স্মৃতি কিছুতেই বিলিন হতে দেওয়া যায় না । মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে । তাদের স্মৃতি স্বযত্নে জাদুঘরে রেখে দিতে হবে যেন পরবতি প্রজন্ম মহান মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কথা জানতে পারে ।

তাই কোটি কোটি টাকা খরচ করে মুক্তিযোদ্ধ,মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবাঁচিয়ে রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে – মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর । নি:সন্দেহে এটি একটি মহান কর্মকান্ড । আমি এর সঙ্গে দ্বীমত পোষন করছি না , অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষন করা প্রয়োজন রয়েছে এবং তা করতেও হবে কিন্তু কথা হলো – ১৯৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছিলেন , যারা আজ চিকিৎসার অভাবে ধুকতে ধুকতে, অধাহারে,অনাহারে কোন রকম বেঁচে আছেন তাদের জন্য কোন কি কি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে ? আমরা কি করছি সেই সব হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ?

সত্যিকথা বলতে কি, মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের নামে বাহাবা নেওয়া সহজ কেননা মৃতরা প্রশ্ন করতে আসে না । একবার ভাবুন, কোনটা বেশি প্রয়োজন ৫০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা, ১ লাখ টাকা,১০ হাজার টাকা,২ হাজার টাকা দিয়ে ইট কেনা নাকি সেই টাকা দিয়ে বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যের ,চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ।

এক ব্লগার বন্ধু পোষ্ট দিলেন "একটি ইট কিনুন:: আপনার প্রিয়জন অথবা প্রিয় প্রতিষ্ঠানের নামে" । কেননা ইট কেনার টাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে জাদুঘর তৈরি করা হবে । যার কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো অনেক আগেই কিন্তু পূর্বের একটি সরকারের অবহেলা, অবজ্ঞার, রাজাকারদের চক্রান্তের কারণে সেই কাজ শেষ করা হয়নি। তাই নতুন করে আবার কাজ শুরু করা হলেও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সে কাজটিও এখনও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের মতো কোন মতে ধুকে ধুকে চলছে ।

শুধু রমজান মাসে যে পরিমান টাকা এদেশের ক্ষমতা ভোগকারী দু'টি দল পাঁচতারা হোটেলে ইফতারের নামে খরচ করে সে টাকা দিয়ে কয়টি মক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে পূর্ণবাসন করা যায় তা একবার ভেবে দেখা দরকার ।

মুক্তিযোদ্ধা এবং যোদ্ধাদের স্মৃতিকে যাদুঘরে নয় রাখতে হবে পুরো বাঙালি জাতীর হৃদয়ে । তা না হলে আর ৪০ বছর পরে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মুক্তিযুদ্ধও যাদুঘরে থেকে হাহাকার করবে ।