ওহে বঙ্গ মাতার বীর সন্তানেরা তোমরাও মর, মরলে মনে হয় মানুষের মূল্য বৃদ্ধি পায়

মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন
Published : 26 Dec 2011, 03:05 PM
Updated : 26 Dec 2011, 03:05 PM

কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, জীবনে যারে তুমি দেওনি মালা ,
মরনে কেন তারে দিতে এলো ফুল …………….

আবদুর রাজ্জাক চলে গেছেন । ফুলে,ফুলে ছেয়ে গেছে তার মরদেহ । আহা: কতো শোক, কতো কান্না ,কতো হাহাকার । প্রেসিডেন্ট , প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করেছে । আতি পাতি নেতাদের শোক প্রকাশের জ্বালায় সাধারণ মানুষের আবদুর রাজ্জাকের মরদেহের কাছে পৌছানই দু:স্কর হয়ে উঠেছিল ।

প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীদের কতো সুবিধা তাদের লাইনে দাঁড়াতে হয় না । নিজে না এসে কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেই -মালা পৌছে যায় । মহান নেতা আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে কেন যেন খুব কস্ট পেয়েছি । হয়তো তিনি স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক ছিলেন বলে, হয়তো তিনি সৎ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে । সর্বপরি তিনি আপন মহীমায় একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন বলে । কিন্তু আমরা তো আম-জনতা আমাদের হাত, পা,মুখ সব শক্ত করে লাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা আমরা চাইলেই সব করতে পারিনা । যদি শক্তি সামর্থ থাকতো তবে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের এই মহান সংগঠকে এভাবে মৃত্যুর দেশে চলে যেতে দিতাম না । শুধু আবদুর রাজ্জাক কেন কোন মুক্তিযোদ্ধাকেই বিনা চিকিৎসায়,অবহেলায়,অবজ্ঞা নিয়ে মরতে দিতাম না ।

পরিচিত জনদের মধ্যে যতোবার এই নেতার কথা উঠছে -ততোবারই মনে পরে যাচ্ছে – তিনি তার যোগ্য সন্মান পাননি । মনে আছে এক সময় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হত্যাকারীদের বিচারের জন্য – রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করেছি- ফারুক-রশিদ ভাই ভাই এক দড়িতে ফাঁসি চাই । সময়ের ব্যবধানে ফারুক-রশিদের বিচার হয়েছে । তারা ফাঁসিতে ঝুলেছে ।

ফারুক-রশিদের বিচার চাইতে পারলেও এখন কেন বলতে পারছি না, যারা আবদুর রাজ্জাকের মতো মহান নেতাকে যোগ্য সন্মান থেকে বঞ্চিত করে রেখে ছিল তাদের বিচার চাই । আমরা সবাই জানি – ওয়ান এলেভেনের সময় তোফায়েল আহমেদ,আমির হোসেন আমু,আবদুল জলিল সহ যারা সত্য কথা বলে ছিলেন -তারা সবাই পরবতিতে নেত্রীর বিরাগ ভাজন হয়েছেন । কিন্তু এই সব জাতীরা সেই সময় কি শেখ হাসিনার মুক্তি চাননি ? চেয়েছেন । অনেক ভাল ভাবেই তা চেয়েছেন । যাদের সন্দেহ হয় তারা , ঐ সময়ের প্রকাশিত দৈনিকগুলো ঘাটলেই সত্য পেয়ে যাবেন । সে সময়ের পত্রিকাগুলো ঘাটলে দেখা যাবে – প্রতিটি মিটিং মিছিলে ওনারা শেখ হাসিনার মুক্তি চেয়েছেন । কিন্তু সত্য কিছু কথা বলায় আর জ্বি হুজুর,জি হুজুর না করায় মন্ত্রী পরিশোধে ওনাদের ঠাই হয়নি। বেচারা মহাসচিব আবদুল জলিল সঙ্গে নব্য সুবিধাবাদি, চাটুকার আওয়ামীলীগাররা যে আচড়ন করেছে – তা মনে হয় একজন পথের মানুষের সঙ্গেও করার আগে মানুষ অনেক বার ভাববে ।

রাস্ট্রের প্রতিটি মানুষের অন্ন,বস্ত্র,বাসস্হান,চিকিৎসার দায়িত্ব রাস্ট্রের । তবে কেন আবদুর রাজ্জাকের মতো একজন নেতার প্রতি রাস্ট্র তার সঠিক দ্বায়িত্ব পালন করলো না ?? কারা এর জন্য দায়ী ? খালেদা জিয়া নন ? তাহলে ?

কিছু দিন পূর্বে একজনের লেখায় পড়লাম, আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী ফরিদা রাজ্জাক যতো মানুষের জন্য ভাত রান্না করে খাইয়েছেন – যদি তার দাম দেওয়া হতো তেবেও নাকি তার চিকিৎসার খরচ উঠে যেত ।

এখন আবদুর রাজ্জাক আর আমাদের মধ্যে নেই আছেন – আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল জলিল,ড. কামাল হোসেন এরাই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের সত্যিকারের অবস্থান মজবুদ করেছেন । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই সব নেতারাই আওয়ামীলীগকে এদেশে প্রতিস্টা করেছে । এমন কি শেখ হাসিনাকেও এই নেতারাই এদেশে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজ তাদের কোন মূল্য নেই । কেউ সেই সব দিনগুলোর কথা মনে করে না । তাই আমি বলবো – ওহে বঙ্গ মাতার বীর সন্তানেরা তোমরাও মর, মরলে মনে হয় মানুষের মূল্য বৃদ্ধি পায় । আর তা না হলে আরেকটা যুদ্ধ ঘোষুনা কর । আমরা সাধারন মানুষেরাও সে যুদ্ধে শামিল হবো ।