অপরাধ বনাম তাপমাত্রাঃ গরমকালে অপরাধ বাড়ে

মোঃ আব্দুর রাজ্জাক
Published : 19 May 2015, 06:01 PM
Updated : 19 May 2015, 06:01 PM

অপরাধ পরিসংখ্যানকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করার একটি নেশা আমার রয়েছে৷ অপরাধ হ্রাস-বৃদ্ধির কারণগুলো বহুমাত্রিক। অপরাধ হ্রাস-বৃদ্ধির পিছনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আদর্শগত, ভৌগোলিক , পরিবেশ-প্রতিবেশিক ইত্যাকার হাজারও কারণ বিদ্যমান। কিন্তু তামপাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে অপরাধের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি হয়তো অনেকেরই মাথায় ঢুকবে না। অথচ তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে অপরাধের হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি এখন গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় আমি লক্ষ করলাম, বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) অপরাধের সাথে  বছরের শেষ তিন মাসের( অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরাধ সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি ৷ কিন্তু বছরের মাঝের ছয় মাসের মধ্যে আবার এপ্রিল-জুন কোয়ার্টারে অপরাধের সংখ্যা বেশি। একইভাবে  তুলনা করে দেখলাম, ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসের মোট অপরাধের সাথে পূর্ববর্তী বছর তথা ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসের অপরাধের সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি পাওয়া গেল৷

কিছু দিন পর একটি দৈনিক পত্রিকায় খবর বের হল যে, দেশে এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে অপরাধ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুলিশ নাকি কোন ভাবেই অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না৷ আমার নিজের কাছেও মনে হল, দেশে সহিংস অপরাধ যেন একটু অস্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ আমি অবশ্য জানি, বাংলাদেশে জুন-জুলাইতে অপরাধ বেড়ে যায়৷ আমার হাতে ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সালের মাস-ভিত্তিক অপরাধ পরিসংখ্যান ছিল৷ এবার আমি ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত  ১২ বছরের মোট অপরাধ তুলনা করলাম৷

গ্রাফ রেখায় দেখতে পেলাম, ইংরেজি সনের প্রথম দিকে অপরাধের সংখ্যা কম থাকে৷ তা পরবর্তী মাসগুলোতে ক্রমাগত বেড়ে যেতে থাকে৷ বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ক্রমাগত বাড়তেই থাকে৷ এরপর অপরাধের সংখ্যা কমতে থাকে এবং বছরের শেষের দুই মাসের অপরাধের সংখ্যা, বছরের প্রথম দুই মাসের অপরাধ সংখ্যার প্রায় সমান৷

এবার আমি এপ্রিল মাসের সাথে মে মাসের মোট অপরাধের তুলনা করলাম৷ বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম ২০০০-২০১৩ পর্যন্ত চৌদ্দ বছরের মধ্যে মাত্র দুই বছর ২০১০ ও ২০১১ সালে এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে কম অপরাধ সংঘটিত হয়েছে৷ বাকি ১২ বছরেই এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে মোট অপরাধের সংখ্যা বেশি ছিল৷

এ সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও অপরাধ বিশ্লেষণের একটা তাগিদ পাওয়া গেল। কেউ কেউ আমার বিশ্লেষণে একমত হলেও অধিকাংশই একমত হলেন না। ১৪ বছরের অপরাধ বিশ্লেষণে ১২ বছরেই এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে মোট অপরাধের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঊর্ধ্বতন মহল আমার বিশ্লেষণকে উড়িয়ে দিতে পারলেন না। তাই তারা এর সঠিক ব্যাখ্যা দাবি করে বসলেন। তারা জানতে চাইলেন, কেন বছরের মাঝামাঝি সময় অপরাধ বেশি হয়, আর কেনই বা এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে অপরাধ বেশি হয়৷

আমি যুক্তি দেখালাম, বছরের মাসগুলোতে সময়ের সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়৷ বছরের প্রথম ও শেষ দিকে বাংলাদেশের তাপমাত্রা কম থাকে কিন্তু মাঝামাঝিতে তা সবচেয়ে বেশি থাকে৷ তাপমাত্রা মানুষের মন মেজাজে বিরূপ প্রভাব ফেলে বলে অপরাধ পরিসংখ্যানে এমন অবস্থা দৃষ্ট হয়৷ তবে তাপমাত্রার সাথে অপরাধ বৃদ্ধির সহজ সূত্রটি সাধারণ্যের কাছে সারল্যদোষ দুষ্ট বলে মনে হবে ৷ তারা পাল্টা যুক্তি দেখাবেন, মানুষ রাগের মাথায় অন্য মানুষকে খুন করতে পারে, ঝগড়াঝাটি করতে পারে৷ কিন্তু তাই বলে রাগের মাথায় চুরি, ডাকাতি বা ছিনতাই করতে যাবে এমনটি তো হতে পারে না৷  হ্যাঁ, তাদের যুক্তিতেও সারবস্তু রয়েছে। গরমকালে অপরাধ বৃদ্ধিতে শুধু তাপমাত্রাই একমাত্র ক্রিয়াশীল উপাদান নয়, আরো কিছু এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।
তাপমাত্রার সাথে অপরাধের, বিশেষ করে সহিংস অপরাধের হ্রাস-বৃদ্ধির যে সুপ্রতিষ্ঠিত সম্পর্ক রয়েছে তা কেবল অনুমান নির্ভর নয়; গবেষণা-নির্ভর৷ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখা যাবে, শীত প্রধান দেশগুলোর চেয়ে গ্রীম্ম প্রধান দেশগুলোতে সহিংস অপরাধের হার বেশি৷ ১৮০০ শতাব্দীর শেষ ও ১৯০০ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বেশ কিছু ইউরোপিও ও উত্তর আমেরিকান পণ্ডিত তাদের লেখনিতে উল্লেখ করেছেন, বছরের গরমের দিনগুলোতে সহিংস অপরাধের হার বেড়ে যায় এবং বিশ্বের উষ্ণতম অঞ্চলে এর হার সবচেয়ে বেশি( Anderson , 1989). যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অন্যান্য ঋতুর তুলনায় গ্রীষ্মে খুনের হার ২.৬% বেশি (Anderson et al, 2000). যুক্তরাষ্ট্রের সিকাগো শহরের ২০১০ সালের খুনের অপরাধের লেখচিত্রে দেখা যাবে ফেরুয়ারি মাসের খুনের অপরাধ ক্রমান্বয়ে কমে জুলাই মাসে তা সর্বোচ্চ হয়েছে৷ কিন্তু এর পর তা কমতে কমতে ডিসেম্বর মাসে আবার ফেরুয়ারির সম পর্যায়ে নেমে এসেছে৷ এর কারণ হল, সিকাগোতে বছরের মাঝামাঝি সময়ে গ্রীষ্মকাল থাকে৷ এ শহরের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালেই থাকে সর্বোচ্চ৷
গ্রীষ্মের তীব্রতাও সহিংস অপরাধের হারে প্রভাব বিস্তার করে৷ সাধারণ তাপমাত্রা সম্পন্ন গ্রীষ্ম অপেক্ষা তীব্রতর গ্রীষ্মে অপরাধের হার বেশি এবং যে বছর বেশি গরম পড়ে, সে বছর অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় সহিংস অপরাধ বেশি সংঘটিত হয়৷ (Anderson, et al. 2000). একই রকম ভাবে উষ্ণতার সাথে সাথে মারামারি, ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতার মতো অপরাধগুলো বৃদ্ধি পায়৷

এক গবেষণায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় গাড়ি চালকগণ শীতের চেয়ে গ্রীষ্মে ও বসন্তকালে বেশি মাত্রায় অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন ৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গাড়ির চালকগণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকেন এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির চেয়ে সাধারণ গাড়ির ড্রাইভারগণ আরো বেশি করে হর্ণ বাজাতে থাকেন ( Kenrick and MacFarlane, 1984)৷ ডাচ পুলিশ অফিসারদের উপর এক মাঠ গবেষণায় দেখা গেছে, শীতল পরিবেশের তুলনায় গরম পরিবেশে সন্দিগ্ধ সিঁধেল চোরগণ গ্রেফতারকালে বেশিমাত্রায় প্রতিরোধ তৈরি করে বলে অফিসারদের কাছে প্রতীয়মান হয়৷ আর এজন্য পুলিশ অফিসারগণ গরমকালে আসামীদের প্রতি বেশি কঠোর আচরণ করেন ( Vrij, ven de Steen and Koppelaar, 1994)

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে অপরাধ বৃদ্ধির যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে তা এতক্ষণ আমরা গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি। এখন আমরা বিশ্লেষণ করব, তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে অপরাধের কেন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় সম্মকভাবে মনে রাখতে হবে, গরমের সাথে অপরাধ বৃদ্ধির ইতিবাচক সম্পর্ক থাকলেও তাপমাত্রা অপরাধ বৃদ্ধির কারণ; অপরাধ সৃষ্টির কারণ নয়৷ অপরাধের কারণের সাধারণ তত্ত্বগুলোর মতো এটা কোন আলাদা তত্ত্ব নয়।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে অপরাধের হার বৃদ্ধিকে অন্তত দুইটি তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়৷ এদের একটি হল, General Affective Aggression Model এবং অন্যটি হল, আটপৌরে আচরণ তত্ত্ব (Routine Activities Theory) । প্রথম প্রকল্প অনুসারে অপরাধের হ্রাস-বৃদ্ধি মানুষের আবেগ, উত্তেজনা, ধীশক্তিসহ বেশ কিছু উদ্দীপকের সাথে ধনাত্মক রৈখিক সম্পর্কে যুক্ত থাকে৷ তাপমাত্রা সেগুলোর অন্যতম৷ তাই তাপমাত্রা মানুষের ব্যক্তিত্বে অবশ্যই প্রভাব ফেলে৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মানুষ অস্বস্তিবোধ করে৷ অনেক সময় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ মানসিক অস্বস্তি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য মানুষ নিজেদের অজান্তেই সহিংস আচরণ করতে থাকে৷

অপরাধের আটপৌরে আচরণ তত্ত্বানুসারে, সমাজ কর্তৃক অনুমোদিত না হলেও অপরাধ মানুষের একটি স্বাভাবিক আচরণ৷ মানুষ তার প্রাত্যহিক কর্মের মাধ্যমেই অপরাধ কর্মে জড়িত হয়৷ একজন উত্‍সুক অপরাধী যদি কোন অভিভাবকহীন বা নিয়ন্ত্রণহীন কোন স্থানে কোন সম্ভাব্য ভিকটিমকে পেয়ে বসে, তাহলে অপরাধ সংঘটন অনিবার্য হয়ে ওঠে৷ অর্থাৎ কোন অপরাধীর কাছে যখন সুযোগ এসে যায়, তখন অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়৷

গরমকালে (পাশ্চাত্যের বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে) মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায় ৷ এ সময় যেমন দিনের আলো বেশি সময় ধরে থাকে, তেমনি সূর্যাস্তের পরেও অনেক রাত পর্যন্ত মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলে৷ শীতকালে বাংলাদেশে দিন ছোট থাকে৷ অন্যদিকে, সন্ধ্যা রাতেই মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মের ইতি টানে এবং পরদিন অনেকটা বেলা না হলে দৈনন্দিন কাজকর্ম শুরু করে না৷ এমতাবস্থায়, গ্রীষ্মে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বেড়ে যায়৷ গ্রীষ্মকালে বর্তমান বাংলাদেশে ইরিধানের কাটা-মাড়া চলে৷ এসময় মানুষের হাতে কাঁচা পয়সা আসে৷ আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে মানুষের সম্মৃদ্ধির সময় সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ তো বটেই কিছু সামাজিক  অপরাধও বেড়ে যায়৷

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পাওয়া তাপমাত্রার হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের তাপমাত্রা প্রায় সমান থাকে ( সর্বোচ্চ ৩০ /৩১ডিগ্রি সে. ও সর্বনিম্ন ৮ডিগ্রি সে.)৷ অন্যদিকে নভেম্বর ও ফেরুয়ারি মাসের তাপমাত্রাও প্রায় কাছাকাছি (যথাক্রমে সর্বোচ্চ ৩১ডিগ্রি সে. ও ৩৩ ডিগ্রি সে)৷ বছরের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে মে মাসে (৪১ডিগ্রি সে)৷ এর পরেই রয়েছে মার্চ (৪০ডিগ্রি সে)৷ আমাদের এতক্ষণের আলোচনানুসারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মাসে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হবে এটাই কাম্য৷

আমি সারা দেশে রুজুকৃত ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের হত্যা মামলাগুলোর একটি লেখচিত্র নেয়ার চেষ্টা করলাম৷ আমার পর্যবেক্ষণে প্রতিবছরই জানুয়ারিতে খুনের মামলা সর্বনিম্ন দেখা গেল৷ এর পর ফেব্রুয়ারিতে এ ঊর্ধ্বমুখী হল৷ মার্চ ও এপ্রিল পার হয়ে যেতে এটা সর্বোচ্চ সংখ্যা উঠল৷ এরপর জুনে তা নিম্নগামী হল৷ তাপমাত্রা তুলনা করে দেখলাম, এ সময় তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়৷ মে মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪১ডিগ্রি সে)৷ কিন্তু তার পরের মাস জুনের তাপমাত্রা ৩৭ডিগ্রি সে এ নেমে এল, যা মার্চ মাসের তাপমাত্রার (৩৮ডিগ্রি সে) এর চেয়েও এক ডিগ্রি কম৷

আমার গ্রাফ জুনের পর ঊর্ধ্বমুখী হল এবং আগস্টে তা আবার শীর্ষে উঠে এল৷ তাপমাত্রার চার্টে দেখতে পেলাম, জুলাই মাসের তাপমাত্রার (৩৫ডিগ্রি সে) চেয়ে আগস্ট মাসের তাপমাত্রা বেশি (৩৬ ডিগ্রি সে)৷ আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে খুনের অপরাধও বেড়ে গেল৷
একই সাথে ২০০৫ সালে রুজুকৃত সকল মামলার লেখচিত্র নিয়েও একই প্রকারের অবস্থা পরিলক্ষিত হয়৷ সবচেয়ে বড় বিষয় হল, বাংলাদেশের সারা বছরের অপরাধ পরিসংখ্যানের লেখচিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সিকাগো শহরের অপরাধ চিত্রের লেখচিত্রের প্রায় অনুরূপ৷

এখানে বলে রাখা ভাল, তাপমাত্রা হল, অপরাধ বৃদ্ধির অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম৷ অন্যান্য কারণগুলো স্থির রেখে তাপমাত্রাকে হ্রাস-বৃদ্ধি করা গেলে হয়তো একটি শুদ্ধ ফলাফল পাওয়া যেত৷ কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়৷ যেমন, সহিংস অপরাধ বৃদ্ধির পিছনে সমাজ/রাজনীতিতে অস্থিরতা অন্যতম কারণ৷ তাই ২০১৩ সালের অপরাধ পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যাবে, এ বছর শেষ দিকে খুনের ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে৷ এর কারণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা৷ আবার একই সময় সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ( চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা) বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ২০১৩ সালের শেষ দিকে এসব অপরাধের হার ছিল নিম্নগামী৷

বাংলাদেশে অপরাধ বিজ্ঞান এখনো প্রাথমিক সত্মরে রয়েছে৷ দেশের পত্র-পত্রিকাগুলো তাদের স্থূল বিশ্লেষণে অপরাধের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে মাঝে মাঝে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৷ কতিপয় স্বঘোষিত নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনগড়া বিশ্লেষণ দিয়ে অপরাধ নিবারণ নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীকে ব্যর্থ বলে প্রচার করে৷ কিন্তু অপরাধের কারণ, তার বিস্তৃতির উপর পরিবেশ, জনসংখ্যা কিংবা সংস্কৃতির প্রভাব নিয়ে গবেষণা বা বিশ্লেষণ করার মতো এখানে কেউ নেই৷ তাই একদিকে গবেষণালব্ধ জ্ঞানের অভাবে পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না, অন্য দিকে সাধারণ মানুষও স্থূল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পুলিশের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়; অপরাধ কমলেও মানুষের মন থেকে অপরাধ-ভীতি দূর হয় না৷ নানামূখী বিভ্রান্তিকর তথ্যে মানুষ আরো বেশি বিভ্রান্ত হয়৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব শুধু অপরাধই বৃদ্ধি করেনা, এটা মানুষের মনে পুলিশ সম্পর্কে বিতৃষ্ণাও বৃদ্ধি করে৷

এমতাবস্থায়, গরমকালের জন্য অপরাধ প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থা বিশেষ করে পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা থাকা দরকার। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ অফিসারগণ স্বভাবতই চন্দ্রকলার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের অপরাধ প্রতিরোধ পরিকল্পনা সাজিয়ে থাকেন। শুক্লপক্ষের চেয়ে কৃঞ্চপক্ষের দিনগুলোতে তাদের রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধি করে থাকেন। অপরাধ হ্রাস-বৃদ্ধির চিরায়ত ধরন তাদের অজানা নয়। তাই গরমকালে বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে তারা অপরাধ প্রতিরোধের জন্য বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এ ব্যবস্থা যেমন সনাতনি হতে পারে তেমনি হতে পারে আধুনিক কমিউনিটি পুলিশিং কৌশলকেন্দ্রীকও। অধিকন্তু আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোরও উচিৎ হবে, এ অপরাধ প্রবণতাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়ে পুলিশকে ঢালাওভাবে অদক্ষ বলে চিহ্নিত না করা।

সূত্রঃ

১.http://cdp.sagepub.com/content/10/1/33.full.pdf+html, as on 18 May, 2015 at 14:00 hours,

৪. পরিসংখ্যান সেল, বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা-১০০০