বিপ্লবী জিতেন ঘোষ

শেখ রফিক
Published : 4 Feb 2012, 03:04 PM
Updated : 4 Feb 2012, 03:04 PM

"পদ্মা পাড়ের মানুষ জিতেন ঘোষ। কিশোর বয়সেই পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের মত ছিল তাঁর স্বাধীনতার আকাঙ্খা। 'জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য' চিত্ত ভাবনাহীন' এই পণ করিয়া সন্ত্রাসবাদী দলে যোগ দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের গণআন্দোলনের প্রথম যুগে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ কংগ্রেসকর্মী। কিন্তু তারপরও রাজনৈতিক দিক-নির্ণয়ের পরিপূর্ণতা পাননি। সবশেষে জনগণের একমাত্র শোষণমুক্তির পথ মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের তত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক পরিপূর্ণতা আসে।

নিরন্ন বুভুক্ষু কৃষকদের সঙ্গে তিনি নিজেকে একাত্ম করিয়া তুলিলেন। একটি অবহেলিত গরীব মুসলিম গৃহে হইল তাঁর বাসস্থান। কত হিন্দু-মুসলমান মেহনতি কৃষককে তিনি প্ররণা দিয়াছেন, উদ্বুদ্ধ করিয়াছেন কে তার হিসাব রাখে! আজিকার সামাজিক পরিবর্তনে কুষক আন্দোলনের ও সংগঠনের অসীম গুরুত্ব উপলব্দি করিয়া তিনি সর্বশেষ জীবন পর্যন্ত কৃষক সংঘঠন গড়িয়া তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক আর কৃষক সংগঠনের প্রাণশক্তি।

চরম আত্মত্যাগ, শত লাঞ্ছনা, দুঃখ, ক্লেশ, জুলুম-অত্যাচারের মধ্যেও তিনি ছিলেন হিমালয়ের মত অটল। আদর্শের উপরে ছিল তাঁর ইস্পাতের ন্যায় দৃঢ়তা। তাই অনেক উত্থান পতনের মধ্যেও তাঁর সংকল্প ছিল অটুট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাদের কাছে অতি প্রিয় নাম জিতেনদা, অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক বিপ্লবী চরিত্র। তাকে আগামী দিনের বংশধরদের নিকট চির ভাস্কর করিয়া রাখিবার দায়িত্ব তাঁর সাথী ও সহকর্মীদের"—কমরেড মণিসিংহ।

প্রখ্যাত কৃষক নেতা জিতেন ঘোষ জন্মেছিলেন ১৯০১ সালে। মুন্সিগঞ্জ জেলার কুমারভোগ গ্রামে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে বিক্রমপুরের স্থান ছিল অনন্য। ব্রিটিশসাম্রাজ্যের পূর্বে মোগল সম্রাটদের বিরুদ্ধ বার ভূঞাদের সংগ্রামের একটা প্রধান কেন্দ্র ছিল এই বিক্রমপুর। প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যগত কারণে বিক্রমপুরের যুবকদের একটা অংশ সংগ্রামী হয়ে উঠতেন। এখানে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য দেশপ্রেমিক বিপ্লবী, যারা দেশে-বিদেশে তাদের ত্যাগ ও বীরত্বে অপূর্ব নিদর্শন রেখেছেন।

মা, বাবা, ভাই-বোনের সাধারণ পরিবারে জিতেন ঘোষ ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। বাল্যকাল সম্পর্কে তিনি লিখেছেন-"রাজনীতিতে তখনও নাম লিখাইনি। কিন্তু মনে মনে এদেশে ইংরেজ রাজত্ব পছন্দ করতাম না। একটু অপমান ও লজ্জা বোধ করতাম ইংরেজদের অধীনে আছি বলে" (জেল থেকে জেলে-পৃষ্ঠা:-১)। কৈশোরের প্রথম থেকেই তিনি গীতা, চন্ডী পাঠ করে আত্মিকশক্তি ও সংগ্রামী মনোভাবকে উদ্দীপ্ত করে সাধারণ মানুষকে সেবা করার জন্য সেবাশ্রম ও লাইব্রেরী গড়ে তোলেন। এখান থেকে তিনি দেশপ্রেমের ভাবধারাকে সহপাঠী তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাকে বিপ্লবীদের একজন মনে করে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কয়েক দিন আটক রেখে মারধর ও জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। আগুনে ঘৃতাহুতির মতো, একারণে জিতেন ঘোষের মনে স্বাধীনতার আগুন জ্বলে উঠে।

প্রকাশিত হয়েছে: বিপ্লবীদের কথা