জিতেনদা সম্পর্কে কয়েকটি কথা–মণি সিংহ

শেখ রফিক
Published : 14 Feb 2012, 07:20 PM
Updated : 14 Feb 2012, 07:20 PM

পদ্মা পড়ারে মানুষ জিতেন ঘোষ। কিশোর বয়সেই পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের মত ছিল তাঁর স্বাধীনতার আকাঙ্খা। 'জীবনমৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনাহীন' এই পণ করিয়া সস্ত্রাসবাদী দলে যোগ দিয়াছিলেন। পরে কংগ্রেসের গণ-আন্দোলনের প্রথম যুগে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মী। কিন্তু তখনও রাজনৈতিক দিক নির্ণয় পরিপূর্ণরূপ পায় নাই। সবশেষে জনগণের একমাত্র মুক্তির পথ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তত্ত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়া হয় তার পরিণতি।

নিরন্ন বুভুক্ষু কৃষকদের সঙ্গে তিনি নিজেকে একাত্ম করিয়া তুলিলেন। একটি অবহেলি গরীব মুসলিম গ্রহে হইল তাঁর বাসস্থান। কত হিন্দু, মুসলমান মেহনতী কৃষককে তিনি প্রেরণা দিয়াছেন, উদ্বুদ্ধ করিয়াছেন কে তার হিসাব রাখে! আজিকার সামাজিক পরিবর্তনে কৃষক আন্দোলনের ও সংগঠনের অসীম গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়া তিনি সর্বশেষ জীবন পর্যন্ত কৃষক সংগঠন গড়িয়া তুলিবার কাজে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক আর কৃষক সংগঠনের প্রাণশক্তি।

চরম আত্মত্যাগ, শত লাঞ্ছনা, দুঃখ, ক্লেশ, জুলুম-অত্যাচারের মধ্যেও তিনি ছিলেন মিহালয়ের মত অটল। আদর্শের উপরে ছিল তাঁর ইস্পাতের ন্যায় দৃঢ়তা। তাই অনেক উত্থান পতনের মধ্যেও তাঁর সংকল্প ছিল অটুট।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাঁদের কাছে অতি প্রিয় নাম জিতেনদা, অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক বিপ্লবী চরিত্র। তিনি আজ আমাদের মধ্যে নাই। তবুও আমাদের মধ্যে আছেন এবং থাকবেন। তাঁকে আগামী দিনের বংশধরদের নিকট চির ভাস্বর করিয়া রাখিবার দায়িত্ব তাঁর সাথী ও সহকর্মীদের। এই দায়িত্ব পালনের ভার নিয়াছেন প্রবীণ কমরেড জ্ঞন চক্রবর্তী, তাঁর চলার পথের সাথী।

এক শোচনীয় দুর্ঘটনায় বিদেশে তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনাটি মেযন মর্মান্তিক তেমনি বেদনাদায়ক। জিতেনদার বয়স হইয়াছিল, কিন্তু কি বিস্ময়কর প্রাণচাঞ্চল্য! তরুণের মত তিনি ছিলেন সক্রিয়। আদর্শের দৃঢ়তাই ছিল তাঁর সঞ্জবনী সুধা। তিজেনদা গ্রামের মেহনতী মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করিয়াছিলেন নূনত জীবন দৃষ্টি, নূনত চেতনা, শোষণহীন সমাজ, সমাজতান্ত্রিক মানবতাবাদ।
জিতেনদার কর্মময় জীবনের যে আলেখ্য কমরেড জ্ঞান চক্রবর্তী তুলিয়া ধরিয়াছেন ইহাতে তরুণ তরুণারী প্রেরণা পাইবে, শিক্ষালাভ করিবে এ প্রত্যয় আমার কাছে।
যতদিন বাংলাদেশ থাকিবে, যতদিন বাংলাদেশের মেহনতী মানুষ থাকিবে, ততদিন জিতেনদাও থাকিবেন। কেউ তাঁকে ভুলিবেন না, ভুলিতে পারে না।

ঢাকা, ২০শে মে, ১৯৭৭