অতিথি পাখির অপেক্ষায়

নূরে আলম সিদ্দিকী
Published : 25 Nov 2011, 09:34 AM
Updated : 25 Nov 2011, 09:34 AM

ফজরের পরে হালকা নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়ি ঢাকা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে, সফর সঙ্গী হয় আমার দুই বন্ধু। সাভার থেকে বাসযোগে গাবতলী, গাবতলী থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় পৌঁছে যাই খুব অল্প সময়েই। এর পূর্বেও আমি দু'বার চিড়িয়াখানায় এসেছি। সব প্রাণীর অবস্থানের জায়গা আমার জানা ছিলো। ইতোপূর্বে সব প্রাণী ভালোভাবে দেখেছি। কিন্তু অথিথি পাখি কখনো দেখিনি। তাই টিকিট সংগ্রহ করে প্রথমেই রওয়ানা হলাম অতিথি পাখি দেখার জন্য। অতিথি পাখির অবস্থান বিলের দিকে। কিন্তু সেখানে একটি পাখিও নজরে পড়লো না। দীর্ঘ সময় ঘুরে ঘুরে দেখলাম বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীদের। দেখে মন ভরলো না। আবার চললাম অতিথি বনের দিকে। কিছু সময় বিলের পাশে দাঁড়িয়ে অতিথি পাখি খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে না পেয়ে আমরা তিন বন্ধু চিড়িয়াখানা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তবুও ভাগ্যের টানে যেতে হলো।

প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরা ফেরার পর যোহরের আযান শোনা যাচ্ছিল। গার্ডেন থেকে বের হয়ে ওজু করে পাশের এক মসজিদে নামাজ আদায় করি।ক্ষুধাও বেশ লেগেছিলো। তাই মসজিদ থেকে রেব হয়ে এক খাবার হোটেলে গিয়ে মাছ ও ভাত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আসরের আযান দিতে বেশ সময় বাকি। আবার চললাম অতিথি পাখির টানে চিড়িয়াখানায়। প্রবেশ করতে একটু দেরি হলো, কারণ, আসরের আযান হচ্ছিল। তাই নামাজ আদায় করে প্রবেশ করলাম। কিন্তু অতিথি পাখির কোন সাড়া-শব্দ নেই। বিলের পাশে বসে বাদাম চিবাতে লাগলাম আমরা তিন বন্ধু। পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলে পড়ছে, আকাশের বুকে আঁধার নেমে আসছে, আর সম্ভব হলো না অতিথি পাখির সাথে মুলাকাতের।

বড় ব্যর্থতা নিয়ে এবার চললাম বাড়ির দিকে। বাড়িতে পৌঁছতে রাত ৯টা বেজে গেল। খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি, সকালে উঠে হাত-মুখ ধেয়ে রাস্তায় বের হলাম হাঁটার জন্য, আকাশে যে পাখিই দেখি মনে হয় অতিথি পাখি। পরীক্ষার বন্ধের ৭দিন কাটিয়ে সাভার চলে এলাম। সপ্তাখানিক পরে সন্ধান পেলাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিলে নাকি অতিথি পাখি আসে। শুক্রবার ক্লাস বন্ধ থাকে তাই ভোর সকালেই এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে চললাম জাহাঙ্গীর নগরের অতিথি বিলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের দারোয়ান বললো , সকাল ৮টার পূর্বে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। দাঁড়িয়ে রইলাম দীর্ঘক্ষণ, ৮টা বাজার সাথে সাথে ভিতরে ঢুকলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা অনেক বড়, বিল খুঁজতে অনেক সময় লাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল অনেক বড়। তাকিয়ে রইলাম বিলের দিকে আর খুজঁতে লাগলাম অতিথি পাখি। হঠাৎ দেখি অনেক দূরে দেখা যাচ্ছে অতিথি পাখির ঝাঁক, স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল না। অনেক সময় দাঁড়িয়ে রইলাম কাছে আসে কি না। কিস্তু না কাছে আসাতো দূরের কথা আরো দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যেতে লাগলো। জুমার দিন তাই আর অপেক্ষা না করে চলে এলাম। দূর থেকে অতিথি পাখি দেখে যন্ত্রনা মিটাতে পারলাম না। কাছ থেকে দেখার আশা রয়েই গেল, এখনো সময় পেলে বিভিন্ন জায়গায় অতিথি পাখির সন্ধানে বের হই। হয়ত বা একদিন এই আশা পূরণ হবে।