আমাদের এদেশ আজ ধন্য

নূরে আলম সিদ্দিকী
Published : 12 Jan 2012, 09:32 AM
Updated : 12 Jan 2012, 09:32 AM

তাবলীগের সূচনা : বিগত শতাব্দির শেষ ভাগে ইসলামী দুনিয়ায় হেদায়েতের আকাশে 'দাওয়াত ও তাবলীগে'র নামে একটি আলোর মশাল প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল। বর্তমান ভারতের দিল্লি শহরের এক প্রান্তে নিজামুদ্দীন বস্তি নামে একটি এলাকায় ১৩০৩ হিজরী মোতাবেক ১৮৮৪ সালের কোন এক বরকতময় সময় এই পৃথিবীতে আগমন করেন বর্তমান তাবলীগ জামাতের প্রাণপুরুষ হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.। পিতা মাওলানা ইসমাঈল রহ.-এর নিকট তাঁর পড়াশুনার হাতে খড়ি হয়। দ্বীনী পরিবেশের সন্তান হিসেবে দ্বীনী পরিবেশে তার শিার সূচনা হয় নিজ বাড়িতেই। অতঃপর নিজ গ্রাম কাঙ্গালাতে প্রাথমিক শিা সম্পন্ন করে তৎকালীন গাঙ্গুহে গমন করে হযরতজীর দ্বীনী শিার নতুন গতিপথ শুরু হয়। ১৩২৬ হিজরীতে হাদীস শাস্ত্রের সর্বোচ্চ শ্রেণী দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। ১৩২৮ হিজরীতে সাহারানপুরে মাজাহিরুল উলূম মাদরাসায় শিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সুদীর্ঘ আট বছর দরস-তাদরীসের পর তিনি মেওরাত এলাকায় দ্বীনী খেদমতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দ্বীনের খেতমতে উৎসর্গিত এই মহান পুরুষ এলহামীভাবে আদিষ্ট হয়ে উম্মতের হেদায়েতের ল্েয একটি নবীওয়ালা মেহনতের তারতীবে দাওয়াত ও তাবলীগের নামে তাঁর নতুন কর্মসূচি শুরু করেন। তাঁর এই নতুন দাওয়াতী কর্মসূচিতে তৎকালীন উলামায়ে কিরাম সমর্থন ও সাড়া দিলে এর গতি আরো বেড়ে যায়। তারপরের ইতিহাস অত্যন্ত মেহনত মুজাহাদার, কিন্তু গতিময়। উম্মতের হেদায়েতের ও আল্লাহভুলা মানুষদেরকে আল্লাহর সাথে জুড়ে দেওয়ার তাঁর দরদমাখা অকৃত্রিম মেহনত আজ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে বি¯তৃত। সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত আজ হেদায়েতের মহান রাজপথ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

আজকের বিশ্ব ইজতিমা : দাওয়াত ও তাবলীগের এই কর্মসূচি দিল্লির ছোট জনúদ মেওয়াত থেকে শুরু হলেও হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর ইখলাস ও তদ্বীয় পুত্র হযরত মাওলানা ইউসুফ রহ., হযরত মাওলানা এনামুল হাসান কান্দলভী রহ.-সহ অসংখ্য উলামায়ে কেরামের অকান্ত মেহনতে আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিরামহীনভাবে কাজ করে চলছে। বিশ্বজুড়ে দাওয়াতের এই কাফেলা অসংখ্য অগণিত আল্লাহর বান্দাকে হেদায়েতের সোনালি রাজপথের পথিক বানিয়েছে। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে এর কার্যক্রম বি¯তৃত। এর কার্যক্রম দিন দিন বেড়েই চলছে। দাওয়াতী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় আমাদের বাংলাদেশও আজ সক্রিয়ভাবে এ কাফেলায় যুক্ত। মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. ও হযরত মাওলানা আব্দুল আজীজ রহ.-এর হাত ধরে ১৯৪০ সালের দিকে বাংলাদেশে তাবলীগের মেহনত শুরু হয়।

আজ থেকে ৬০/৬২ বৎসর পূর্বে ইজতিমার মাধ্যমে এর কার্যক্রম সর্বমহলে প্রসারিত হতে থাকে। ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদ সংলগ্ন রমনা পার্কে বার্ষিক সম্মেলনের আদলে ইজতিমা যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে কাকরাইল মসজিদে, ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন হাজীক্যাম্পে, ১৯৪৮ সালে নারায়ণঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বাৎসরিক ইজতিমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর ইজতিমায় অংশগ্রহণকারী লোকের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এর একটা স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারণের প্রয়োজন হেতু ১৯৬৬ সালে ঢাকার উপকণ্ঠে টঙ্গীর 'পাগার' গ্রামের খোলা মাঠে ইজতিমার আয়োজন করা হয়। তখন থেকে বার্ষিক এই ইজতিমা বিশ্বইজতিমা নামে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৬০ একরের অধিক জায়গা জুড়ে এর বিশাল পরিধিও আজ আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। সকল দলমত ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে দাওয়াত ও তাবলীগের এই কার্যক্রম এবং বিশ্ব ইজতিমার আহ্বান বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে; সাড়া জাগিয়েছে প্রতিটি মুমিনহৃদয়ে। তুরাগতীরে এই বিশ্বইজতিমা কুদরতী মদদে অনুষ্ঠিত স্বেচ্ছাশ্রম ও দ্বীনী মেহনতের এক বেনজীর উদাহরণ, বে-মেছাল মাজমা।

হেদায়েতী মিশনের এই মকবুল কর্মপদ্ধতির বাৎসরিক ইজতিমা বিশ্বইজতিমার আদলে প্রতি বছর আমাদের এই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমরা গর্বিত; আমাদের এদেশ আজ ধন্য।
আল্লাহ তায়ালা এর আরো মকবুলিয়্যাত দান করুন। আমীন!

লেখক :নূরে আলম সিদ্দিকী
সহকারী সম্পাদক
মাসিক নতুন ডাক
Nure.alam96@yahoo.com