পরিকল্পিত ড্রেজিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ২১৫ কোটির টাকার ফসল উৎপাদন সম্ভব

সৈয়দ ইফতেখার আলম
Published : 9 Dec 2012, 09:25 AM
Updated : 9 Dec 2012, 09:25 AM

দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ ক্যানেলের ভাটি অংশে ভরে যাওয়া পলিতে পানির স্রোত ব্যাহত হচ্ছে। এতে উত্তরাঞ্চলে সেচকার্য ব্যাহত। তাই কৃষকেরা চলতি মৌসুমে ফসল ফলানো নিয়ে পড়ছেন বিপাকে। তিস্তাপাড়ের মিস্ত্রি কলিমুদ্দিন (৬২)। একসময় নৌকার কারিগর ছিলেন। উপার্জন কম থাকায় এখন কাজ করেন কাঠ দিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরীর। অকাল বন্যার আশংকায় যেসময় তিনি নৌকা তৈরী করতেন সেসময় তিস্তানদীতে পানি ছিল ভরাট। একদিকে স্রোত আর অন্যদিকে ঢেউয়ের দোলনা খেলতো। বেশিরভাগ নদীর উৎপত্তিস্থল গ্রীমহারাজ হিমালয় পর্বত। যে নদী বেনী ছাড়িয়ে দাপাদাপি করে ছুটে বেড়াত সেখানে আজ ধু ধু বালুচর। ধবল বালুর সোনালী কিরণ চিক চিক করে রোদের মিটমিটি আলোতে। যে পানি এ এলাকার মানুষের সেচ ব্যবস্থাপনায় হাসির ঝিলিক দিত কৃষকের সে পানি না থাকায় হতবিহ্বল হয়ে পরেছে নীলফামারীর জলঢাকাসহ উত্তরের ৮টি জেলার ৩৫টি উপজেলার কৃষক। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষক রোপন নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। অশ্বনি সংকেত যেন মানবিক বিপর্যয়ের। তিস্তার ডালিয়া পয়েন্ট থেকে কাউনিয়া উপজেলা পর্যন্ত ৬৬ কিলোমিটার এলাকা বালুর স্তরে নিমজ্জিত। ব্যারেজ থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় জেগে উঠেছে বিশাল চর। তিস্তা ব্যারেজের দৈর্ঘ্য ৬১৫.২৪ ফুট এবং ৪৪টি ভোল্ট বা গেট। বর্তমান মৌসুমে ১৩ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তা ব্যারেজের সিলট্রাপে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন পলি (বালু) জমা হয়েছে। এ নিয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মঈন-উদ্দিন মন্ডল বলেন, "বিগত বছরগুলোতে আমাদের তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি দিয়ে অত্রাঞ্চলের কৃষকেরা প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদনে সামর্থ হয়েছিল।" অপরদিকে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ বলছেন, এ পলি ৩৬ কিলোমিটার এলাকার প্রধান সেচ খালে পড়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিস্কাশন সেচ প্রদানের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলেও তিস্তার বুকে পানি না থাকায় বছরে প্রায় ২১৫ কোটি টাকার মৌসুমী ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অত্র এলাকার কৃষকেরা। ১৩.৩৫ লাখ একর জমি এ মৌসুমের সেচ সুবিধা না পেলে বছরে প্রায় ১৪.৫০ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনে ব্যাহত হতে পারে। ফলে সেচ ব্যবস্থাপনায় এ অঞ্চলের কৃষককে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। একসময় নদীগুলো ছিল খরস্রোতা। কালের বিবর্তনে দীর্ঘকাল ধরে নদী সংস্কারের অভাবে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সবমিলিয়ে হতাশায় দিন কাটছে কলিম উদ্দিনসহ উত্তরের হাজারো কৃষক পরিবার। যারা এ নদীগুলোতে মাছ শিকার করে সংসারের ঘানি টানতো, তারাও আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় ২০ হাজার জেলের দুর্দিন চলছে এ মৌসুমে। অনেকেই মনে করছেন পরিকল্পিত ভাবে ড্রেজিং ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পলি অপসারণ করলে পূর্বের ন্যায় পানির নাব্যতা ফিরে পাবে । সরেজমিনে দেখা যায়, দোয়ানী-কলোনী, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়ী, বাঁইশপুকুর ও সাতজান এলাকার দিনমজুর ও জেলে হাফিজুর, মোস্তফা, কুদ্দসবেপারী, মহুবর, কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তিস্তায় এ্যালা পানি নাই, সেইজন্যে হামার কামাই-কাজ বন্ধ হইয়া গেছে। আগোত মাছ মারি সংসার চালাইছিনু। এখন আর তা হয় না। ছৈল-পৈল নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

সাংবাদিক সৈয়দ ইফতেখার আলম