আসুন সবাই মিলে জনস্বার্থে ’বিজিএমই–এর অবৈধ বিল্ডিংটি’ ভেঙ্গে ফেলি

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 28 Nov 2012, 06:35 PM
Updated : 28 Nov 2012, 06:35 PM

ঢাকার কারওয়ান বাজারের উল্টোদিকে হোটেল সোনারগাঁও-এর পাশে অবৈধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিংটি যা বাংলাদেশ পোশাক রফতানি কারক সমিতির হেড অফিস বা "বিজিএমই বিল্ডিং" নামে পরিচিত তা আঁচিরেই ভেঙ্গে ফেলা হোক!

যদি বলেন কেন এত মূল্যবান ও সুন্দর বিল্ডিঙটা ভেঙ্গে ফেলতে হবে? তাহলে পড়ুন নিচের কাহিনী:

১। এই বিল্ডিংটি সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ ভাবে বানানো হয়েছে। এর প্ল্যান রাজউক থেকে পাসকৃত নয়।

২। এটা বেগুণবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্পের মধ্যখানে অবৈধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটানোর পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও ধীর করে দিয়েছে।

৩। এই জায়গাটা সরকার অবৈধভাবে এক্সপোর্ট প্রোমোশন ব্যুরো (ইপিবি) কে বরাদ্দ দিয়েছিল কিন্তু বিজিএমইএ'র কর্তৃপক্ষ সব পক্ষকে ম্যানেজ করে নিজেদের নামে করে নিয়েছে।

৪। মহামান্য হাইকোর্ট এই বিল্ডিংটিকে অবৈধ ঘোষণা করে তা তিন মাসের মধ্য ভেঙ্গে ফেলতে বলেছিল কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয়নি বা নানা অজুহাতে করা হয়নি!

৫। এই বিল্ডিংটিতে বসে এমন একটা প্রেশার গ্রুপ যারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। আপনাদের কি মনে আছে কয়েক বছর আগে বিশ্ব মন্দার অজুহাতে সরকার থেকে "ক্যাশ ইনসেন্টিভ" আদায় করার জন্য ঈদের আগে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন–বোনাস বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এরা সরকারকে ব্ল্যাক-মেইল করতে চেয়েছিল।

৬। ২০০৮ সালের দিকে যখন শ্রমিক আন্দোলন চরম আকার ধারণ করেছিল এবং শ্রমিকরা একটার পর একটা কারখানায় আগুন দিচ্ছিল, ভাংচুর করছিল তখন এই মালিক সংগঠনটি কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারার পাশের রাস্তায় দলবেঁধে শুয়ে পড়ে এর প্রতিবাদ করেছিল। তারা তৎকালীন সরকারকে তার সর্বচ্চো বাহিনী নামিয়ে আন্দোলন দমন করার জন্য প্রেশার দিচ্ছিল। তারা সেদিন এও রব তুলেছিল, " আমাদের কারখানা না বাঁচলে সরকার ও তার বাহিনীগুলো আছে কিসের জন্য!"

এখন এরাই কিন্তু একটার পর একটা গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লেগে শত শত শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা গেলেও নিশ্চুপ থাকছে বা ঘটনাকে অন্যদিকে ঘুড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাবটাজের বোল তুলছে!

এই মৃত্যুর দায় ফ্যাক্টরি মালিক তথা বিজিএমইএ/বিকেএমইএ কিছুতেই এড়াতে পারেন না, কারণ এই দুর্ঘটনার জন্য তাদেরই পরিচালন দুর্বলতা, একটু খরচ বাঁচাতে যেয়ে সঠিক নিয়মে ফ্যাক্টরি না বানিয়ে বা মিথ্যা লে-আউট পাস করিয়ে নিয়ে কারখানা তৈরী করা আর অতিরিক্ত লোভ দায়ী।

৭। তাজরীন গার্মেন্টস যেহেতু নিয়মিত রফতানি করত, তাই তাকে তার তৈরি পোশাকের জন্য Certificate of Origin (CO) সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক ছিল আর এটা ইস্যু করে বিজিএমইএ/বিকেএমইএ। তাই আমি ধরে নিচ্ছি তারা বিজিএমইএ'র সদস্য। আর এর সদস্য হতে হলে তাকে অবশ্যই এই সংগঠনে তার ফ্যাক্টরি লে-আউট জমা দিতে হয়েছে এবং লে-অউটটি উক্ত সংগঠনের মনোনীত ইন্সপেক্টর দ্বারা সরেজমিনে তদন্ত-পূর্বকই পাশ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হল বিকল্প সিঁড়ি ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ব্যতীত ফ্যাক্টরিটি বিজিএমইএ'র অনুমোদন পেল কিভাবে? কারণ এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিকল্প সিঁড়ি থাকা বাধ্যতামূলক!

আমার জানা মতে বিজিএমইএ, এখানে বিদেশিদের দেওয়া কমপ্লায়েন্স যে শর্ত ছিল, তাও ভঙ্গ করেছে, কারণ তার দেওয়া "CO" এর উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের এক্সপোর্ট প্রোমোশন ব্যুরো (EPB); GSP, SAFTA ও অন্যান্য বিশেষ সুবিধার Certificate ইস্যু করেছে তাজরীনের রফতানির বিপরীতে। এই CO ছাড়া EPB এই Certificate গুলো ইস্যু করতে পারত না ফলে এই ফ্যাক্টরি বিদেশ থেকে অর্ডারও পেত না।

৮। "হলমার্ক" ঘটনা কে ঘটিয়েছে? খোঁজ নিলেই জানা যাবে জনাব তানভীর বিজিএমইএ'র সদস্য। আর ৪,০০০ কোটি টাকা লুটের ঘটনা একদিনে ঘটেনি, খোঁজ নিলেই দেখা যাবে এর আগেও ৫০, ১০০, ৫০০, ১,০০০ কোটি টাকার অসংখ্য ঘটনা চাপা পড়ে আছে এবং সেইসব তানভীররা আছে বহাল তবীয়তে। আর যখনই হলমার্কের ঘটনাটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হল এবং সরকার আই-ওয়াশ হলেও কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করলো, তখনি আমাদের "প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠনের" "প্রধান" যিনি আবার বিজিএমই-এরও একজন সদস্য, তিনি বানী দিলেন "হলমার্ক কারণে আমাদের ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে" অর্থাৎ এর সাথে জড়িতদের হয়রানী(!) করতে সরকারকে পরোক্ষভাবে বারণ করলেন!

এ থেকে আমরা কি বুঝছি? বুঝছি এই যে, ওদের আচরণ দিনে দিনে "দেশের" সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে! আমি স্বীকার করছি তারা দেশের কর্মসংস্থানে বড় ভূমিকা পালন করেছে, প্রতিবছর দেশকে সবচেয়ে বেশি ফরেন কারেন্সি আয় করে দিচ্ছে। এজন্য দেশও তাদের নিয়ে গর্ব করছে এবং পুরস্কারও দিচ্ছে। কিন্তু সেই গর্বের প্রতিদান যদি হয় "শত শত পোড়া লাশ" তাহলে আর কি অবশিষ্ট থাকে!

এই সব অপরাধীদের/খুনি মালিকদের প্রধান কেন্দ্রই হচ্ছে এই অবৈধ বিল্ডিংটা। আসুন দেখা যাক, এটা যদি ভেঙ্গে ফেলা যায় তাহলে দেশের কি কি লাভ হবে:

ক। বিজিএমইএ'র নেতা ও সদস্যদের "মুই কি হনু রে" ভাবটা কমবে!
খ। যে সকল মালিকরা বিজিএমইএ'র গরমে ফ্যাক্টরিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না রেখেই ফ্যাক্টরি চালাচ্ছেন, তারা ভয় পাবেন বা একটা মেসেজ পাবেন, "এই ভাবে আর চলবে না" বা "আমাদের আর কেউ বাঁচাবে না!"
গ। বিজিএমইএ আর শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিহীন কোন ফ্যাক্টরিকে সদস্য বানাবে না।
ঘ। বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল প্রকল্পটা সুন্দর হবে।
ঙ। দেশে দখলবাজরা কিছুটা ভয় পাবে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে।

তাই আসুন আমরা সবাই মিলে জনস্বার্থে "বিজিএমইএ'র এই অবৈধ বিল্ডিংটি" ভেঙ্গে ফেলি।