মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৪

সুকান্ত কুমার সাহা
Published : 15 Feb 2015, 10:57 AM
Updated : 15 Feb 2015, 10:57 AM

অনেকদিন ধরে জাতিসংঘ ও আমেরিকার আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাতে থাকায় ইরান এমনিতেই অনেক বিপদে আছে। এতে করে ব্যাপকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে এদেশের শিল্পায়ন। প্রায় ৮ বছর ইরাকের এক নায়ক সাদ্দামকে দিয়ে যুদ্ধ করিয়েও ইরানের সামরিক আর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা ঠেকানো যায়নি। এদেশ তার নিজ যোগ্যতায় ইতিমধ্যেই এই অঞ্চলের একটা বড় শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। স্যাটেলাইট, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন উড়িয়ে ইতিমধ্যেই সে তার নিজ অবস্থানটা স্পষ্ট করে প্রতিবেশীসহ বৃহৎ শক্তিদের তা জানিয়েও দিয়েছে। পাশাপাশি লেবানন থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত গড়ে তুলেছে একটা শিয়াবলয়। যা ইসরাইল ও আরব রাজ পরিবারগুলোর মাথায় ব্যথা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। বাস্তবে ঘটেছেও তাই।

এমনও শোনা যায়, ভবিষ্যতের কোন এক অতি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ইরানের উপর 'আণবিক অস্ত্র' ব্যবহার করার জন্য বা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের বিপক্ষে নিজের জন্য 'একটা বোমা' ক্রয় বাবদ সৌদি আরব পাকিস্তানকে ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ অগ্রিম আণবিক বোমা কিনে সৌদিরাজ তা পাকিস্তানের কাছেই রেখে দিয়েছে; চাহিবামাত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে।

এখন তেলের দাম কমিয়ে দিয়ে সৌদিরাজ চাচ্ছে ইরানের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে কারণ ইরানের বাৎসরিক আয়ের প্রায় ৬০ ভাগ আসে এই তেল ও গ্যাস রফতানি থেকে। তাই তেলের দাম যত কমবে ইরানের আয়ও ততই কমবে; হিসাব সোজা। এমনিতেই জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান ইউএস ডলার, ইউরো দিয়ে তাদের আমদানি রফতানি ব্যয় নির্বাহ করতে পারে না। তাদের বিদেশের সাথে লেনদেন করতে ঘুরপথে ভারতীয় রুপি আর নইলে চিনা উইয়ান দিয়ে; নইলে সেই পুড়নো বিনিময় পদ্ধতিতে; তেলের বিনিময় খাদ্য।

যদিও তেলের দাম কমে যাওয়াতে সৌদি আরবের আয়ও অনেক কমে গেছে কিন্তু তাদের তেলের উৎপাদন খরচ অনেক কম হওয়ায় এই কম দামে তেল বিক্রি করেও তারা ভাল লাভ করছে। অন্যদিনে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে আর সবাই দিচ্ছে ব্যাপক লোকসান। এখানে আরও একটা ক্যাল্কুলেশন আছে- আর সেটা হলো বিশ্বব্যাপী তেল উৎপাদনকারীদের লস করিয়ে দিয়ে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া; যাতে করে ভবিষ্যতে আবারো দাম বাড়িয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করা যায়। সৌদি আরবের কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ তাকে এই প্রক্সি গেম খেলতে উদ্বুদ্ধ করেছে- যা সে আরও তিন-চার বছর নিশ্চিন্তে খেলতে পারবে। আর ততদিনে ইরান ও তাদের সহযোগী রাষ্ট্র রাশিয়া-ভেনিজুয়েলা শেষ। আমেরিকার পোয়াবারো! যদি না রাশিয়া এতে বড় ধরনের বাগড়া দেয় !

এই হিসাবও সোজা!

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ-৩

০৩/১২/২০১৪, আপডেট: ১৫/০২/২০১৪ বিকাল: ৪.১১