একটি সংবাদ বিশ্লেষনঃ মতিঝিল আইডিয়াল হাই স্কুল – পরীক্ষার ফলে সেরা, দুর্নীতিতেও শীর্ষে

সুমন এসএমএ ইসলাম
Published : 18 Oct 2012, 07:27 AM
Updated : 18 Oct 2012, 07:27 AM

খবরটি প্রকাশিত হয়েছে প্রথম আলো পত্রিকার ১৪ই অক্টোবর ২০১২ তারিখে, প্রথম পাতায়, শিরোনাম — "পরীক্ষার ফলে সেরা, দুর্নীতিতেও শীর্ষে" । সকালে খবরটি দেখে কয়েকবার পড়লাম, বুঝার চেষ্টা করলাম আমার প্রিয় শিক্ষাপিঠের স্খলনের কারণ কিংবা মাত্রা । খবরটি পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম কিছু লিখার, দু'দিন দেরি হলেও লিখার দায়টা এড়াতে পারছিলাম না, বারবার মনে হচ্ছিল, আইডিয়াল হাই স্কুল আমার জীবনে, তথা বাংলাদেশে বহু মেধাবীর জীবন বিকাশে যে অবদান রেখেছে; সেই বিদ্যাপিঠ সর্ম্পকিত এমন একটা মিথ্যা প্রপাগান্ডার স্বরুপ বিশ্লেষন না করলে বিবেকের কাছে বিবাদি হয়ে থাকব ।

আমি আইডিয়াল হাই স্কুলের একজন ছাত্র, আমি সচেতন ভাবে "প্রাক্তন" শব্দটি ব্যবহার করলাম না । কারন আইডিয়াল হাই স্কুলে যা শিখেছি; দেলওয়ার স্যার, খালেক স্যার, লতিফ স্যার আরও অনেক স্যার, সর্বপোরি হেড স্যার ফয়জুর রহমান সাহেবের সযত্ন শিক্ষা আজও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করে চলেছি; তাদের দেয়া ভিত্তিতে আজও শিখে চলেছি, শিক্ষিত হচ্ছি প্রতিটি পলে । তাই, আমি বা আমরা যারা আইডিয়াল হাই স্কুলে পড়েছি তারা সারা জীবন স্যারদের ছাত্র হয়ে থাকতে চাই, আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র হয়ে থাকতে চাই । আমাদের এমন প্রিয় স্কুলটি উঠে গেল দুর্নীতিতেও শীর্ষে ??!?!?!! কি করে? আসুন একটু খবরটা আবার পড়ি………

পাঠক খবরের শিরোনামটি লক্ষ্য করুন, দুইটি অংশ, প্রথমে বলা হচ্ছে "পরীক্ষার ফলে সেরা" (সেরা স্কুল কিন্তু বলা হচ্ছে না); অর্থাৎ শুরুতেই একটি সত্যকে "টুইস্ট" করা হল। যা হোক তারপরও এটি একটি প্রমানিত সত্য তথ্য । কিন্তু এর পরই বলা হল "দুর্নীতিতেও শীর্ষে" এই স্টেটমেন্টটি কিন্তু সত্যও নয় তথ্যও নয়, বরং "সাংবাদিক"(??) সাহেবের "মন্তব্য" । আর ঢালাও এই মন্তব্যটি তিনি করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)-র একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে । পাঠক, সংবাদটির শেষের দিকে খেয়াল করুন, ডিআইএর পরিচালক রামদুলাল রায় কিন্তু কিছু বলতে রাজি হননি, অথচ "প্রথম আলো" বহু কষ্টে, বহু শ্রমে অর্জিত স্বনাম ধন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে নেতিবাচক একটি মন্তব্য প্রথম পাতায় ছাপতে দ্বিধা করে নাই । স্পষ্টতঃ এই সংবাদটি উদ্দেশ্য প্রনোদিত হলুদ সাংবাদিকতার একটি প্রকট উদাহরন এবং "প্রথম আলো" পত্রিকাটি সম্মন্ধে সাধারন্যে প্রচলিত নেতিবাচক ধারনাটির আরও একটি প্রমান।

এবার আসুন সংবাদটির আরো একটু বিশ্লেষন করা যাক । বিষয়টি সোজাসুজি বুঝলে এরকম, আইডিয়াল হাই স্কুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) কর্তৃক একটি অডিট বা নিরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাতে বেশ কিছু পর্যবেক্ষন উঠে এসেছে । যে কোন সাধারন জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিই অবগত আছেন অডিট/নিরীক্ষা পর্যবেক্ষন মানেই কোন প্রমানিত সত্য নয়, অডিট/নিরীক্ষা পর্যবেক্ষনের পরেও থাকে ব্যবস্থাপনা ব্যাখ্যা আর সব শেষে থাকে ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত । প্রকাশিত খবরে কিছু কিছু ব্যবস্থাপনা ব্যাখ্যার উল্লেখ থাকলেও সেগুলো আমলে না নিয়ে খবরের শুরুতেই "লুটপাটের প্রমাণ" ও শিক্ষক-কর্মচারীর "ভাগবাঁটোয়ারা"-র ঢালাও মন্তব্য দেয়া হলো । আর পাঠক মাত্রই অবগত আছেন বাংলাদেশের "পরিদর্শন ও নিরীক্ষা" কাজে নিয়যিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মান ও দুর্নাম সর্ম্পকে; সেই সব কর্মকর্তা/কর্মচারীদের একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশের সেরা বিদ্যাপিঠের সম্মানিত শিক্ষকদের লুটপাটকারি/দুর্নীতিবাজ বলা সাংবাদিকতার কোন নৈতিকতার মধ্য পড়ে তা আর একবার ভেবে দেখা দরকার ।

সবশেষে উল্লেখ্য, আইডিয়াল হাই স্কুল একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, এর বাৎসরিক ব্যয়ের একটি সামান্য অংশ আশে সরকারি তহবিল থেকে । প্রাইভেট বিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধিনস্ত কোন প্রতিষ্ঠান নয়, প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমুহ পরিচালিত হয় নিজ নিজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী । উদাহরন হিসাবে বলা যায় নটর ডেম কলেজ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশ মানে না, তারা ভর্তি পরিক্ষা নিয়েই একাদশ শ্রেণীতে ছাত্র ভর্তি করে থাকে । প্রকাশিত খবরটি পড়লে পরিষ্কার বোঝা যায় অডিট/নিরীক্ষা পর্যবেক্ষনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তার সব কিছুই পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে ।