কোচিং বচন

আহসান হাবীব কাজল
Published : 14 August 2012, 08:45 PM
Updated : 14 August 2012, 08:45 PM

চারিদিকে সবাই কোচিং কোচিং বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতেছে, আমাদের স্বভাব আমরা হুজুগে বাঙ্গালী। কোচিং নিয়ে আমার এই লেখা হয়তো আমাকে সকলের জনরোষের মুখে ফেলবে কিন্তু কিছু ব্যপার না বলে থাকতে পারলাম না।

মানি কোচিং প্রথা শিক্ষকতা নামক মহান পেশাটাকে কলঙ্কিত করেছে কারন এটা এখন আর পাঠদানের মাঝে সীমাবদ্ধ নাই এটা এখন ব্যবসার নামান্তর হয়ে গেছে। কিন্তু ঘটনাচক্র পুরোটা তেমন নয় যেমনটা ভাবা হয়। কোচিং মানেই ব্যবসা কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। আসুন বিবেচনা করা যাক, একেবারে শহুরে স্কুল নয় ঢাকার ভেতরেই উপশহরগুলোতে স্কুল কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এখানে বাণিজ্য এবং কলা বিভাগে মোটামুটি পড়াশোনা হলেও বিজ্ঞান বিভাগে যা হয় তা পড়াশোনাকে খুন করার নামান্তর। কোন ব্যবহারিক পরীক্ষাগার নাই, যন্ত্রপাতি নাই এমনকি শিক্ষকদের ক্লাসগুলোও ঠিক মত হয় না প্রাইভেট পড়ানোর চক্করে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে এ শিক্ষার্থী গুলো পড়বে কোথা থেকে আর জানবেই বা কি করে? যেখানে ঢাকাতেই এই অবস্থা সেখানে ঢাকার বাইরের কথাটা বলা বাহুল্য। নীতিনির্ধারকেরা যাই বলুক না তারা এসি রুমে বসে বাস্তবতা কতখানি দেখেন তা নিয়ে বিভ্রান্ত না ছড়ানোই ভালো।

ঢালাওভাবে কোচিং সেন্টারগুলো কে দোষারোপ করে লাভ নেই, আপনি বললে হয়ত বিশ্বাস করবেন কি না বাংলাদেশে বেসরকারী স্কুলগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের যে প্রক্রিয়া তা কতখানি ভালো শিক্ষক সরবরাহ করে তা সকলের জানা। এটা চরম বাস্তবতা যে, অনেক কোচিং সেন্টারে স্কুল কলেজের থেকেও ভালো শিক্ষক রা পড়িয়ে থাকেন। এমনকি আমার জানামতে স্কুল কলেজের থেকেও বেশী সুযোগ সুবিধা সরবরাহ করে থাকে যা শিক্ষার্থীকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, আবার অনেকে আছেন যারা সরাসরি জনসচেতনতার সাথে জড়িত। তবে এটাও সত্য এমন কোচিং এর সংখ্যা কম।

আমার প্রশ্নটা এখানে, নীতিনির্ধারকেরা বলেন, বইটা ভালো করে পড়, আমি সরাসরি বলতে চাই মাধ্যমিক শাখার বই গুলো শেষ কবে সংস্কার করা হয়েছে? বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে বহুদূরে কিন্তু আমাদের মাধ্যমিক শাখার বইতে শব্দের বেগ তাই দেয়া আছে যা ২০ বছর আগে দেয়া ছিলো, আরো মজার ব্যপার হচ্ছে বিজ্ঞান শাখার বইতে একরকম মান দেয়া আছে, বাণিজ্য শাখার বইতে আরেক মান এবং উচ্চমাধ্যমিক শাখার বইয়ে আরেক মান। এখন আমি যদি কাউকে বলি ভালো করে বই পড়ো তবে সে সন্ধ্যা বেলা আমার বংশ উদ্ধার করবে এই বলে যে আসলে কোনটি ঠিক। এই অব্স্থায় কোচিং সেন্টার গুলো যতটা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ততটা উপশহরের স্কুল কলেজগুলোও রাখতে পারে নাই। আমাদের কাঠামো তো নিজে পড়ে শেখার মত নয় আর ক্লাসগুলোর মান তো আরো জঘন্য।

সর্বোপরি কোচিং গুলো কিন্তু কর্মসংস্থান করছে বটে। এটা মনে রাখতে হবে তরুণ সমাজ যদি তার মেধা ব্যবহার করে নিজেকে চালাতে পারে তবে তাতে ক্ষতিটা কিসে? তবে হ্যাঁ এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন এটা মেধা আদানপ্রদান করাটা যেন ব্যবসা না হয়ে যায়। এটা যেন সত্যি মেধার আদান-প্রদান হয়। আর এর জন্য দরকার নীতিমালা। সরকার সেই নীতিমালা করুক। এত কারো কোন আপত্তি নেই কিন্তু হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান হয় না।দুই আঙ্গুলে ব্যথা বলে পুরো হাত তো কেটে ফেরা যাবে না।

আমি জানি চাঁদপুরে একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে একটি কোচিং সেন্টার আছে যেখানে বৃদ্ধদের নৈশ শিক্ষার ব্যবস্থা আছে এবং অবৈতনিক। সেই গ্রামের আশেপাশে কয়েক গ্রামের মাঝে ভালো কোন স্কুল নেই সেখানকার কয়েকজন যুবক এটা চালায়। এটাকে কি আপনি ব্যবসা বলবেন? হয়ত বলবেন এটা যদি মানব সো হয় তাহলে টাকা কেন নেয়া হয়? আমি বলবো, মানব সেবা করতে হলেও টাকা লাগে। আপনি একটি ভালো কাজ করতে চাইবেন অপনার ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা সরকার দিবে না আবার আপনার মহান কাজে দুই পয়সা সাহায্য করবেনা। এমন অবস্থায় আপনি মহানুভবতা আশা করতে পারেন না । ক্ষুধার রাজ্যে মহানুভবতা হয় না।

আমার এই লেখা পড়ে যদি কারো মনে হয় আমি কোচিং সেন্টার গুলোর পক্ষে সাফাই গাইলাম তাহলে আমায় ভুল বুঝেছেন। আমি আসলে আমার কথার আড়ালে বলতে চেয়েছি আমার স্বপ্নের দেশের কথা যেখানে শিক্ষক ব্যবস্থা থাকবে অবারিত সম্ভাবনার দুয়ার নিয়ে। যেখানে তরুণদের সম্পৃক্ততা থাকবে, থাকবে অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা। একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আমরা যেন ভালো জিনিস গুলোর শিকড় ও উপরে না ফেলি সে ব্যপারে খেয়ার রাখতে হবে। আসুন আমরা পুরস্কার এবং তিরস্কারে বিশ্বাস করি। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করি।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…