না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন হুমায়ূন আহমেদ

তামিম
Published : 20 July 2012, 03:58 AM
Updated : 20 July 2012, 03:58 AM

জনপ্রিয় নন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদ আর নেই। বাংলাদেশ সময় বৃহঃস্পতিবার রাত ১১:১৫ মিনিটে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার। অন্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর দুই পর্বে মোট ১২টি কেমোথেরাপি নেওয়ার পর গত মাসে বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদের দেহে অস্ত্রোপচার হয়।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস "নন্দিত নরকে" আত্মপ্রকাশ করে। তারপর একে একে লীলাবতী, কবি, শঙ্খ নীল কারাগার, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথায়, সৌরভ, নী, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাব যাব, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি উপন্যাস সৃষ্টি করেন।

তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র 'আগুনের পরশমণি'। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে আটটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরেকটি চলচ্চিত্র 'শ্যামল ছায়া' বিদেশি ভাষার ছবি ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এছাড়া তাঁর অন্য কীর্তি 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'দুই দুয়ারি', 'চন্দ্রকথা' 'নয় নম্বর বিপদ সংকেত' প্রভৃতি চলচ্চিত্র।

টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তাঁর প্রথম টিভি নাটক 'এইসব দিনরাত্রি' তুমুল জনপ্রিয় হয়। তাঁর হাসির নাটক 'বহুব্রীহি' এবং ঐতিহাসিক নাটক 'অয়োময়' বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অন্যতম সংযোজন। ধারাবাহিক নাটক 'কোথাও কেউ নেই' এর বাকের ভাই চরিত্র যেন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল দর্শকদের কাছে। বাংলা নাটকে তৈরি করেন এক নতুন ইতিহাস। এছাড়াও অসংখ্য প্যাকেজ নাটক নির্মান করেন। হুমায়ূন আহমেদ নাট্যকার ও নির্দেশক দুই ভূমিকায়ই সফল ছিলেন। তিনি একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) পেয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখকের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।