চৌর্যবৃত্তি ও আল ভণ্ডামি

সবুজ তাপস
Published : 15 August 2015, 12:47 PM
Updated : 15 August 2015, 12:47 PM

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতীয় একটি দেবতার নাম। দেবতাকে যারা অস্বীকার করবে তারা নরকে জ্বলবে। নরকবাসী হই আর দোযখবাসী হই, তবু বলবো, এ-দেবতা এ-অঞ্চলের কুম্ভিলকদের গডফাদার।

পাঠকের কাছে আজ রবীন্দ্রনাথ প্রশ্নবিদ্ধ। অনেকেই জানেন, তিনি ঋণস্বীকার না করে গগন হরকরার 'আমি কোথায় পাবো তারে আমার মনের মানুষ যে রে', কাঙাল হরিনাথের 'হরিনাম দিয়ে মাতালে আমার একলা নিতাই রে' ও স্কটল্যান্ডের কবি রবার্ত বার্নসের 'Ye Banks and Braes o' Bonnie Doon' (১৭৯১) গানের সুর ব্যবহার করেছেন। উক্ত তিনটি সুরেই আমরা যথাক্রমে 'আমার সোনার বাংলা', 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে' ও 'ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে' গাচ্ছি। 'আমার সোনার বাংলা' গীতিকবিতাটি আহামরি কিছু নয়। গগনের হদয়স্পর্শী সুরের কারণেই এটি যেকোনো শ্রোতার কাছে সুন্দর লাগছে। একই কথা 'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে' গানটির বেলায়ও। শুধু সুর নয়, এ-তিনটি গীতিকবিতার স্ট্রাকচারও তিনি হরণ করেছেন। সুরের দিক থেকে হোক আর ভাবের দিক থেকে হোক, মনে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের বেশিরভাগ ভালোলাগা গান ও কবিতা ভেজালযুক্ত। বাংলার সাধককবি লালন ও পারস্য কবি রুমির অধ্যাত্ম্যবাদী চিন্তাই খুঁজে পাওয়া যায় তার বেশিরভাগ গীতকবিতায়। 'খাঁচার অচিন পাখি' কিংবা 'বাড়ির পাশের পড়শিরা'ই তার 'হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছে'।

রবীন্দ্রনাথের গদ্য সাহিত্যও ভেজালযুক্ত। প্রমথনাথ সেনগুপ্তকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়া 'বিশ্বরচনা'কে আত্মপ্রতারক রবীন্দ্রনাথ যে-কৌশলে 'বিশ্বপরিচয়' বানিয়ে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন, আজ সে চাতুর্যপূর্ণ কাহিনিও কোনো কোনো লেখকের আলোচনায় উঠে আসছে।

২.

 যোগেশ চন্দ্র পাল নামটা আমার কাছে ভাবসম্প্রসারণ পড়ানো কোনো লোক মনে হয়। এটাও তো বলা যায়, পৃথিবীর সবদেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে যে-শিক্ষক ভাবসম্প্রসারণ পড়াচ্ছেন, তাকে যোগেশ স্যার বলে।
বলতে হবে। বড় সহজ-সরল মানুষ। ছোটকালে তিনি শিখিয়েছেন, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। পরিশ্রমী না হলে উন্নতি নাই। অথচ এশহরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন অফিসে ঢুঁ মেরে হরেক মানুষের সংস্পর্শে গিয়ে জানছি
অন্যকিছু: দুর্নীতি ছাড়া কেউ পয়সাওলা (উন্নত) হতে পারে না। এবার বাড়ি গিয়ে যোগেশ স্যারকে বিষয়টি জানাবো। সত্য, তুই কোথায় থাকিস রে বাবা?


ll
১. ট্রাইটান একটি গ্রহের নাম ( ১৯৮৮) / সিনেমা Alien (1979)।
২. অবনীল (২০০৪)  / সিনেমা Pitch Black (2000)।
৩. নিতু আর তার বন্ধুরা (১৯৯৯) / সিনেমা Matilda (1996)।
৪. মেকু কাহিনী (২০০০)  / সিনেমা Baby's Day out (1994)।
৫. ইতিহাসের ইতিহাস (২০১৪) / সিনেমা Gunday (2014)।
৬. আমি তপু (২০০৫)  / A Child Called lt (Dave Pelzer : 1995)

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের কয়েকটি বইয়ের সাথে ক'টা সিনেমা ও বইয়ের হুবহু/ছদ্ম সাযুজ্য খুঁজে পাচ্ছেন এ- সময়ের অগ্রসর ও বোদ্ধা পাঠকরা। জনপ্রিয়তা পেতে চাইলে কিছু বিষয় গোপন রাখা চাই- এটা এক ধরণের
চৌর্যশিক্ষা। দুঃখ হয়, একথাটা কোনো শ্রদ্বেয় শিক্ষকের লেকচার-সীটে নাই! তিনি বইগুলোর ভূমিকায় ঋণের কথা স্বীকার করে দুই-একটা লাইন রাখলে কি মেঘনার স্রোত বন্ধ হয়ে যেতো?


না, বাড়ি গিয়ে যোগেশ স্যারকে বিষয়টি জানাবোই। 

৩.

আগে কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের পায়ের কাছে রাজনীতিবিদরা ঘুরঘুর করতেন, তারা সম্মানিত ছিলেন। আর এখন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীরা রাজনীতিবিদদের পায়ের কাছে চলে গেছেন। এটা আল মাহমুদের মতো কিছু মেরুদণ্ডহীনের (নীতি-আদর্শের জায়গা থেকে এ-অভিধা) কারণেই হয়েছে। শেখ মুজিব থেকে শুরু করে এ-পর্যন্ত প্রায় সব শাসকের পায়ের কাছে এ-আ(বা)ল গিয়েছেন, পুরো বুদ্ধিজীবী সমাজকে রাজনীতিবিদদের কাছে পদানত করে ছেড়েছেন।

আল মাহমুদ রাজনৈতিকভাবে 'বড় কবি' সন্দেহ নাই, কিন্তু রাজনীতি-নিরপেক্ষ ভাবে আমার চেয়ে শুদ্ধতর নন (অামাকে অহঙ্কারী বলতে পারেন, বলুন, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না)। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলতে পারি, আমার এক 'সবুজ তাপস'-এর কাছে তার 'সোনালি কাবিন' নয় শুধু সকল কবিতাগ্রন্থই নস্যি। আমাকে আর না-লিখলেও চলবে। কবি-স্বীকৃতির জন্যে শতশত কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করতে হয় না। তিনি সাহিত্যের গুণে নন, রাজনৈতিকভাবে বেনেফিসিয়ারি। তার সাহিত্যকর্ম ৫টা বছর পাঠ্যবইয়ের বাইরে রেখে দেখুন, তারও আমার মতন অবস্থা হবে। রাজনৈতিকভাবে যা-কিছু পেয়েছেন, কেড়ে নেয়া হলে দেখবেন, তার অবস্থাও আমার মতন।

খুব সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে আল মাহমুদ বলেছেন, তিনি কোনকালেই জামায়াত পন্থী ছিলেন না, জোর করে তাকে জামায়াত বানানো হয়েছে। এটা যে তার সিজোনাল কথাবার্তা, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এটা শেষ কথা নয়। আগামীতে স্বজনরা ক্ষমতায় এলে আরো কত কথা কইবেন। এই বলে তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বর্তমান সময়ে সুবিধা পেতে চাচ্ছেন। এই তো কয়েকদিন আগে বাতিঘরে (এর সত্ত্বাধিকারী: দীপঙ্কর দাশ) এসে তিনি 'অসীম'-এর পূজো করে গেছেন। প্রোগ্রামটা যদি সংগ্রাম/কর্ণফুলি পত্রিকা অফিসে হতো, ঐ 'অসীম'-এর স্থলে 'আল্লাহ' বসতো।

আল মাহমুদ মেরুদণ্ডহীন প্রাণী ও সিজোনাল ম্যাডের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।