পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং

আশরাফ তিতাস
Published : 15 Sept 2012, 01:47 PM
Updated : 15 Sept 2012, 01:47 PM

সাধারনত আমরা যারা গ্রামে বসবাস করি কিংবা যারা ইউনিয়ন সম্পর্কে ধারনা রাখি তারা জানি, প্রায় ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয় একটি ইউনিয়ন আর কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় একটি উপজেলা। কিন্তু হবিগন্‌জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় এসে বানিয়াচং গ্রামটির সঙ্গে এই হিসেবটি মিলানোর চেষ্টা করলে একটু গোলমেলে মনে হতে পারে। ১৫ থেকে ২০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত হওয়ার কথা একটি ইউনিয়ন কিন্তু এই গ্রামে আসলে আপনি দেখবেন ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি গ্রাম, অর্থাৎ বানিয়াচং গ্রাম। আপনি আমার লেখাটি পড়ে হয়তোবা বিশ্বাস করতে পারছেন না, কিন্তু এটাই সত্যি। বানিয়াচং বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম, এই গ্রামের দৈর্ঘ ৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৮ কিলোমিটার। বানিয়াচং এক সময় এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম ছিল আর তখন পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, বর্তমানে শিকাগো নগর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। ১২০ টি পাড়া ও ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস।

২০০৪ সালের ৭জুন বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিচিব মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বানিয়াচং উপজেলা সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন বানিয়াচং পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম। এছাড়া ড. শেখ ফজলে এলাহী বাচ্চুর "বানিয়াচং এর ইতিবৃত্ত" বইটিতেও উল্লেখ আছে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং।

বাই-সাইকেলে করে বিশ্ব ভ্রমণকারী প্রথম বাঙ্গালী ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি এই গ্রামে। ১৯৭১ সালে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুল হাসান এই গ্রামের সন্তান। এছাড়াও এই গ্রামে জন্ম নিয়েছেন আরও অনেক গুণীজন, তাদের মধ্যে একজন হলেন বর্তমান বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাক এর প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

সিলেটের ইতিহাসে লাউর, গৌড় ও জৈন্তা নামের তিনটি পৃথক রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং। ওই সময় রাজ্যের রাজারা বানিয়াচং এ কমলা রাণীর দীঘিসহ মোট ৫টি দীঘি খনন করেন। ৬৬ একর আয়তন বিশিষ্ট কমলা রাণীর দীঘিটি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি হিসেবে স্বীকৃত। দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৬শ' বছরের প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। মোগল আমলে নির্মিত অনেক মসজিদ ও মন্দির আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে এই গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে।

পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালন ভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি যেন এই বানিয়াচং। বানিয়াচং গ্রামটি কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপে হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের এক অপরুপ পর্যটন স্থানে এবং কোলাহলে মুখরিত হতে পারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে। শুধু যে বানিয়াচং গ্রামের নামটি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে যাবে তাই নয়, এখান থেকে সরকারও আয় করতে পারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

তথ্যসূত্রঃ
ড. ফজলে এলাহী বাচ্চু রচিত "বানিয়াচং এর ইতিবৃত্ত"।
http://www.dailykhowai.com/news/2012/09/08/26637/