মাস্টার্সে ভর্তির তিন অধ্যায়

আশরাফ তিতাস
Published : 27 Dec 2012, 05:50 PM
Updated : 27 Dec 2012, 05:50 PM

সরকারি কলেজে যে কী পরিমাণ দূর্নীতি হয় তা আজ নিজে উপলব্ধি করলাম। আমার এক বন্ধু ভর্তি হবে কবি নজরুল সরকারি কলেজে মাস্টার্স প্রোগ্রামে। তাই আজ সকাল ১০টায় গেলাম কলেজে। কলেজে যাওয়ার পর গেলাম ভর্তি ফি দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে কাউন্টারে দেখলাম আনুমানিক ২৪-২৫ বছর বয়সের এক সুদর্শন যুবক ভেতরে কাউন্টারের চেয়ারে বসা। আমি চিন্তা করলাম হয়ত  তিনি নতুন অ্যাকাউন্ট অফিসার হিসাবে জয়েন করেছেন।

জিজ্ঞেস করলাম, ভাইয়া, টাকা কোথায় দেব? তিনি আমাকে বললেন, তিনশ  টাকা দিন। তিনশ টাকার বিনিময়ে তিনি আমাকে যে কাগজটি ধরিয়ে দিলেন তাতে আমি হতবাক। তিনি আমাকে ঐ ব্যাংকের একটি ডিপোজিট স্লিপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, পাশে গিয়ে পূরণ করে ডানপাশের কাউন্টারে টাকা জমা দিন। অথচ ঐ ডিপোজিট স্লিপটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়ার কথা। পরে জানতে পারলাম উনারা সরকারি দলের তথাকথিত ছাত্রনেতা। উনারা উক্ত ব্যাংকের সকল ডিপোজিট স্লিপ নিজেদের কাছে নিয়ে নিয়েছেন এবং ৩০০ টাকার বিনিময়ে সেই ডিপোজিট স্লিপ  ব্যবহার উপযোগী করেছেন। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হল, ছাত্রনেতারা এবং ব্যাংকের অফিসাররা পাশাপাশি বসেই কাজ করছেন, কিন্তু কেউই কিছু বলছেন না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত ২৩৮৭ টাকা জমা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট এ আসলাম ভর্তি ফরম জমা দিতে। আমার বন্ধুটি বলল, আগে যে ব্যাংকে ৩০০ টাকা আমাদের কাছ থেকে বেশি নিয়েছে, চল এখন ডিপার্টমেন্টের স্যারকে বলি। ফরম জমা দিতে গিয়ে যখন স্যারকে বলতে যাব তখন তিনি বললেন ৫০০ টাকা দাও। আমি বললাম, "স্যার, ব্যাংকে  তো দুই হাজার ৩শ ৮৭ টাকা দিয়ে এসেছি। এই যে আমার টাকা জমা দেওয়ার স্লিপ। স্যার বললেন, এটা সেমিনার রুমের চার্জ। যারা এই তথাকথিত সেমিনার রুম বাবদ ৫০০ টাকা দিতে পারেনি তাদের ভর্তি নেওয়া হয়নি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সর্বপ্রকারের চার্জ দেখিয়েই দুই হাজার ৩শ ৮৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। মনে মনে চিন্তা করলাম, স্যারেরা তাদের মান-সম্মান বজায় রেখেই কাজ করেছেন; যদি তারাও ৩০০ টাকাই নিতেন তাহলে তো ছাত্র আর শিক্ষকের মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকতো না, তারা বরং একধাপ এগিয়ে আছেন।

ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন। আমরা দুই বন্ধু বেজায় খুশি। আমি আমার বন্ধুকে বললাম, তুই যেহেতু সিলেট থেকে আসবি তাহলে ডিপার্টমেন্টের পিয়ন যিনি আছেন তার মোবাইল নম্বরটি নিয়ে নে, তাহলে আসার আগে যে কোনো বিষয়ে উনাকে কল দিয়ে আসতে পারবি।

ডিপার্টমেন্টের পিয়ন মামুন সাহেব। উনাকে বললাম, ভাই, আপনার মোবাইল নম্বরটি দেন, যে কোনো প্রয়োজনে যেন যোগাযোগ করতে পারি। তিনি আমাকে বললেন, "আগে ২০ ট্যাকা দেন তারপর নম্বর দিমু। আমি চিন্তা করে দেখলাম, মামুন সাহেব খুব যে যুক্তি ছাড়া টাকা চেয়েছেন তা কিন্তু নয়, বরং তিনি তার জায়গা থেকে ঠিকই আছেন। যে কলেজের ছাত্র আর শিক্ষকরা দুর্নীতি করছে সেখানে পিয়নরা বাদ যাবে কেন।

যে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এত অব্যবস্থাপনা সেই দেশের ভবিষ্যৎ যে কি হবে তা সহজেই অনুমানযোগ্য। আজ যারা ছাত্র তারাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তখন যদি তারা জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্সের টাকাটি নিয়ে বলেন যে, যান এখন নিজের কাজ নিজে করে নেন, তাহলে সাধারণ জনগণের কী গতি হবে তা একটু কল্পনা করুন।