বিএনপির উক্তি এবং বাংলার এক তথাকথিত মাহাথির!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 5 July 2011, 07:43 AM
Updated : 5 July 2011, 07:43 AM

হ্যামিলনের বাঁশি ওয়ালার কথা কি কারো মনে আছে? ছোট্ট বেলার সেই গল্প! কোন এক শহরে ইঁদুরের খুব উৎপাত। রাজা মশাই খুব চিন্তিত।কি ভাবে ইঁদুর তাড়ানো যায়? কিছুতেই যখন কোন কিছু হচ্ছিলো না ঠিক তখন হঠাৎ এক অদ্ভুত অচেনা বংশীবাদক এর আগমন ঘটলো শহরে! একটি নির্দিষ্ট উপঢৌকন এর বিনিময়ে সকল ইঁদুর তাড়ান, এবং কার্য সম্পাদন এর পর রাজা মশাই এর বিশ্বাস ঘাতকতা! এবং যার নির্মম বলি শহরের হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুগুলোর বিসর্জন।

দেশ আজ গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। সেই সংকট থেকে উতরানোর জন্য বিএনপি এবং জামাত ইসলামি একসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল এর জিহাদ ঘোষণা করেছেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন মুফতি আমিনি, সেই সাথে আরও কিছু নাম ধারি ইসলামি রাজনৈতিক দল। যাই হোক এদের আন্দোলনের জন্যই যদি এই ফ্যাসিবাদ সরকার এর পতন হয় ( তাদের ভাষায় ফ্যাসিবাদ) তবে তো মন্দ নয়! ভালই হয়।

প্রধান বিরোধী দল বি এন পির বর্তমান নেতৃবৃন্দ বেশ ব্যস্ত আছেন তাদের দেওয়া সরকারের বিরুদ্ধে নানান কর্মসূচী বাস্তবায়ন এর জন্য। রাজপথে এখন অনেককেই দেখা যাচ্ছে। কারন অসংখ্য টি ভি চ্যানেল এর কল্যাণে ঘরে বসেই ( গুলশান এর অফিস) ম্যাডাম সকল নেতা কর্মীদের কর্মকাণ্ড দেখতে পান। এবং ম্যাডাম এর মূল্যায়ন ও শুরু হয় ঐ সব নেতা কর্মীদের হরতাল এর কর্ম কাণ্ডকে কে বেশী কভারেজ দিতে পেরেছেন। আর এই মূল্যায়ন পেতেই সবাই নিজের জীবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। কারন একটাই। ম্যাডাম এর নজরে পড়া। একবার যদি মূল্যায়িত করে বসেন ম্যাডাম তবে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে নিশ্চিত একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব পূর্ণ পদ!

একটি কঠিন এবং চরম দুঃসময় এর মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করছেন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান দিন গুলী। নানা বিধ কারনে তিনি বেশ মানসিক চাপের মধ্যে ও রয়েছেন। সেই সাথে শারীরিক অক্ষমতা ও বেশ ভাবিয়ে তোলে তাকে। সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখলে মনে হয় তিনি বেশ অসুস্থ। হাটতে বেশ কষ্ট হয়। এবং বেশির ভাগ সময় দেখা যাচ্ছে তিনি শিরিন সুলতানার হাত ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছেন। সেই সাথে ব্যাক্তি এবং পারিবারিক ভাবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পতিত হয়েছেন তিনি। মইনুল রোডের জিয়াউর রহমান এর অনেক সৃতি বিজড়িত বাস ভবনটি ও নেই। স্বামীর অপ মৃত্যুর পর দুই সন্তানকে নিয়ে নতুন ভাবে বাচার যেই স্বপ্ন সেই স্বপ্ন ও আজ বিলীন হবার পথে। দুই সন্তানের কেউ ই আজ তার পাশে নেই! একজন রাজনীতি বিদ হিসাবে না দেখে একজন মা হিসাবে যদি বিষয়টি দেখি তবে এটি একটি মা এর জন্য অনেক যন্ত্রণাদায়ক।

তারেক কে রাজনীতিতে যোগ করে ভাবী প্রধান মন্ত্রী এবং দলের কাণ্ডারি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার যে স্বপ্ন বেগম জিয়া দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন ও আজ অনেকটা ফিকে হতে শুরু করেছে অন্তত বর্তমান প্রেক্ষাপটে। শারীরিক ভাবে তারেক এখন ও পুরা পুরি সুস্থ নয়। সেই সাথে অসংখ্য মামলা। সম্প্রতি ২১ অগাস্ট আওয়ামীলীগ এর সভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় অন্যতম হোতা হিসাবে চিহ্নিত তারেক রহমান এর এই সরকার এর আমলে দেশে প্রত্যাবর্তন এর সম্ভাবনা ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে পুরাতন মামলা গুলী নুতন ভাবে ও পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে আপাতত তারেক এর রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটা থেমে গেছে। এটি ম্যাডাম এর চিন্তার অন্যতম কারন। আর ছোট পুত্র কোকো তার তো দুর্নীতির দায়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড! শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ কোকো কে দ্বারা রাজনীতি তো আর সম্ভব নয়।

বেগম জিয়ার এই চরম ক্রান্তিকালে অনেক নেতা তাকে মানসিক সাপোর্ট ও দিচ্ছেন। অনেক সুবিধা বাদী নেতা এটিকে ইমোশনালি ব্যবহার ও করছেন। যেটাকে ইমোশনাল ব্লাক মেইল ও বলা চলে। ঐ সব নেতা এটি বুঝে নিয়েছেন জে এই মুহূর্তে ম্যাডাম বেশ পারিবারিক ভাবে আপসেট, কাজেই তার মন জয় করতে পারিবারিক বন্ধন এর দুর্বল দিক গুলী সবল করনে ঐ সব ভুমিকা রাখতে হবে। যেই সব কথা বললে ম্যাডাম খুশি হয়, মানসিক শান্তি পায়। যেমনঃ এই মুহূর্তে তারেক আর কোকোর পক্ষে কথা বলা। জিয়া পরিবারের কথা বলা ইত্যাদি।

মির্জা ফকরুল এর গত কাল এর একটি উক্তি এই রকম

" তারেক রহমানকে কেন এত ভয় পান? তাকে দেশে আসতে না দেওয়ার জন্যই মিথ্যা সাজানো মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।"

তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে।"

মির্জা ফকরুল আরও বলেছেন

আগামী দিন গুলী হবে তারেকের।

জ্বি, নয়া ভার প্রাপ্ত মহাসচিব সুপার টনিক দিচ্ছেন আপনি ম্যাডাম কে। আপনার এই টনিকে বেগম জিয়া সবল হয়ে যাবেন।লড়ে চড়ে বসবেন। আপনি তার ভালবাসার সম্পদে পরিনত হবেন। যেমন টি হয়ে ছিল কোন এক সময় বি চৌধুরী, মান্নান ভুইয়া, অলি আহমেদ, এবং তারেক কে প্রথমেই যেই আহম্মক মাহাতির মুহাম্মাদ এর সাথে তুলনা করেছিলেন সেই ব্যরিস্টার বে হুদা! ( নাজমুল হুদা)। ইতিহাস চরম নির্মম। এরা শেষ পর্যন্ত অতি চামচামির জন্য ইতিহাসের আস্তা কুরে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। বি এন পি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, রেল লাইন বেয়ে দউরানি মেরেছেন। অনেক ইতিহাস। আপনি ও যেই ভাবে শুরু করেছেন সেই ক্লিন ইমেজের মির্জা সাহেব এর লেবাস খুইয়েছেন অনেক আগে। এখন অপেক্ষা! সেই শুভ মহেন্দ্রখন আসতে আর বেশী বাকি নেই। বি এন পির অতীত ইতিহাস তো তাই ই বলে। অতি চাম চামির ফল শুভ হয়না!
দেখুন নব্য মাহাথিরের ভি ডি ও ফুটেজ

এই মুহূর্তে অনেকেই বলছেন আহা! তারেক যদি দেশে আসতেন, কিনা হোতো! এক ব্লগার তো আজ কে তারেক কে নিয়ে মহাকাব্য রচনা করেছেন। মিসর এর মত পরিস্থিতি, মন্দের ভাল, আদর্শ যুবক আরও কত ফিরিস্তি। ঐ সব আহাম্মাকদের আহম্মকিপনা দেখলে গা জ্বলে! শরীরের পশম গুলী খাড়া হয়ে ওঠে। ভাব খানি এমন, তারেক এই মাত্র ভূমিষ্ট হয়েছেন এই পৃথিবীতে। নিষ্পাপ-নিষ্কলঙ্ক, যেন সর্গ হতে অমিয় বানী নিয়ে এসেছেন এই বিএনপি অতি ভক্তদের জন্য। তারেক অন্যায় করতেই পারেনা! তিনি মানব দরদি মাদার তেরেসার চেতনায় বিশ্বাসী। ঐ সব অন্ধ কিন্তু সেয়ান পাগল যারা এখন ও তারেককে

চাঁদের খুদ আছে কিন্তু তারেকের খুদ নেই

এই নীতিতে বিশ্বাস করে তাদের জন্য নিচের এই লিঙ্ক। যদিও পুরানো কাসুন্দি। মাঝে মাঝে পুরানো কাসুন্দি ও খেতে হয়। হজম ভাল হয়।
রাজ পুত্রের অমর গাথা!

বাংলার এই মাহাথির এর অপেক্ষায় আছেন অনেকেই। কবে আসবেন সেই মাহাথির? কবে আসবে সেই শুভ খন? কবে এসে জাতীর উদ্দেশে শোনাবে তার অমিয় বানী! এত দিনের প্রবাস জীবনের যেই কষ্ট, দেশ কে ভাল বাসতে তার যেই আত্মত্যাগ, এটি অনেকেই শুনে হাউ মাউ করে ও কাঁদবেন। যদিও কান্না টি হবে ম্যাকি। আজ প্রধান মন্ত্রী যখন বলেন জিয়া পরিবারের সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ জুগিয়েছে রাষ্ট্র! তখন দেখি এই রাষ্ট্রের অর্থ নিয়ে তারা কত বড় কু-শিক্ষিত হয়েছেন। জিয়াউর রহমানের সন্তান হয়ে তারা হয়েছেন এক একটা অর্ধ শিক্ষিত, কুলাঙ্গার! লোভ আর লালসা কখন ও জিয়াউর রহমান কে গ্রাস করতে পারেনি অন্তত যতদিন ক্ষমতায় তিনি ছিলেন। যদিও সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় তিনি এক ক্যু এর মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করেন। তারেক রহমান আবার ও ফিরে আসবেন। হ্যামিলনের সেই বাঁশী ওয়ালার মত। তার যাদু মন্ত্রে দেশের দুর্নীতি গুলী ইঁদুরের মত পাল বেঁধে চলে যাবে অন্য কোন এক দেশে, এই দেশ থেকে বহুদূরে! তার পর রাজার সাথে বনিবনার আদলে দেশের সেই নিরীহ শিশুর মত কতিপয় ভোঁদাই দের পুনর্বাসিত করার নামে আর এক এক টা মামুন বানাবেন! আর এই দেখে অনেকে বগল বাজাবেন।

যারা বলেন তারেক রহমান কে সরকার ভয় পান! তারা ডাহা মিথ্যা বলেন। তারেক দেশে এলে কোন বৈপ্লবিক সূচনার অবতরণ ঘটবে না। যেই তারেক সেই তারেক ই থাকবেন। হ্যাঁ বিএনপি বাদীদের কাছে সেটি বিপ্লব ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে দেশের বাকি ৬৭ ভাগ মানুষ তারেককে কি ভাবে দেখবেন সেইটি বিবেচ্য। দেশের পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির কল্যাণে এই তারেক ই হয়তো একদিন দেশের প্রধান মন্ত্রী হবেন। আর আমরা দেখবো এক অর্ধ শিক্ষিত যে নানা বিধ দুর্নীতির পাপে পাপিষ্ঠ হয়েছেন। আলোচিত সমালোচিত এই মহা মানব নব্য মাহাথির যে কিনা ক্ষমতার কোন কেন্দ্র বিন্দুতে অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোন পদে না থেকেও প্রধান মন্ত্রীর পুত্র হবার বদৌলতে হাওয়া ভবন নামের অদৃশ্য এক পার্লামেন্ট এর মাধ্যমে পুরা দেশ টাকে নগ্ন ভাবে শাসন করেছেন। সেই অর্ধ শিক্ষিত মাহাথির প্রধান মন্ত্রী যদি কোনদিন হয়ে ও যান তখন তিনি কি করবেন? এটি দেখার বড় স্বাদ জাগে!