অভিনব এক প্রেম, অতঃপর বিয়ে!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 11 July 2011, 06:23 AM
Updated : 11 July 2011, 06:23 AM

কথায় আছে প্রেম বাধা মানে না। প্রেম সমাজ, সংস্কার, ধর্ম, জাত সব ভেদাভেদ ছিন্ন করে। তাই আমরা যুগে যুগে অনেক প্রেমের অমর গাথার গল্প শুনেছি। মুসলমান এর সাথে হিন্দুর বিয়ে, হিন্দুর সাথে বৌদ্ধ ধর্মের বিয়ে কিংবা খৃস্টান এর সাথে মুসলমান এর বিয়ে এই গুলী সেই

প্রেম মানেনা বাধা

নামক সেই বিদ্রোহী পংতির এক কঠিন অনুসরন। যাই হোক আজ এক অন্যরকম প্রেম এবং অভিনব এক বিয়ের গল্প শোনাবো আপনাদের।

বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল খুলনা। এই খুলনা জেলার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে এক অভিনব বিয়ের একটি ঘটনা ঘটেছে গত ১৫ দিন আগে। আর গত কাল আমার বন্ধু প্রিন্স এর মাধ্যমে আমি বিষয় টি যানতে পারি। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি স্থানিয় অনেক দৈনিক পত্রিকায় বেশ ফলাও করে এসেছে। কোন ছবি না থাকার কারনে পোস্ট করতে পারলাম না।

খুলনার পার্শ্ববর্তী ফুলতলা নামক একটি গ্রামের ২ বন্ধু। সজিব আর বাবুল। জন্ম থেকে ই এই দুই বন্ধু আলাল আর দুলাল। অর্থাৎ খুব ঘনিষ্ঠ এবং সেই সাথে তারা ২ জন যা করে এক সাথেই করে। এমন কি তারা সারা দিন একি সাথে রাজ মিস্ত্রির কাজ করে। আর রাতে তারা পাশাপাশি বাড়ি থাকার কারনে একি সাথে ঘুমায়। দরিদ্র পরিবারের এই দুই আলাল দুলাল এলাকায় বেশ কাজের ছেলে এবং সৎ হিসাবে বেশ পরিচিত। তাই এলাকার সকল রাজ মিস্ত্রির কাজ তারা দুই জন ই পায়। এবং মেহনত করে তারা প্রতিদিন যেই মুজুরি পায় তাতে তাদের সংসার মোটা মুটি ভাবে চলে যায়। এই দুই বন্ধুর পিতা রা ও রাজ মিস্ত্রি। এবং তারা ও বেশ বন্ধু ছোট বেলা থেকে। যাই হোক এই দুই বন্ধু সজিব আর বাবুল নাকি এক সময় প্রতিজ্ঞা করে যে তারা কোন দিন যদি বিয়ে করে তবে এক সাথে ই করবে। এবং একি বাড়ির ২ মেয়ে বিয়ে করবে। কিন্তু একি বাড়ির ২ মেয়ে পাওয়াটা একটু মুশকিল। তাই তাদের বাবা মা বিষয়টি যানার পর ঐ রুপ একি বাড়ির ২ মেয়ে খুজতে থাকে। কিন্তু সেই রুপ কোন মেয়ের সন্ধান তারা পায়না। এক সময় তারা বিয়ের জন্য বেশ চাপ দিতে থাকে তাদের দুই সন্তান কে। শেষ মেষ তারা রাযি হয়। তবে শর্ত দুই বন্ধু একি দিনে বিয়ে করবেন। তাই বাধ্য হয়ে তাদের বাবা মা পাশের গ্রামের ২ টি মেয়ে ঠিক করে। এবং যথারীতি বিয়ের দিন ও ঠিক হয়। সজিব এর সাথে হেনা আর বাবুল এর সাথে চম্পা নামের মেয়েদের বিয়ে ঠিক হয়। এবং বিয়ে ও এক সময় সম্পন্ন হয়ে যায়। এবং তারা বেশ সুখে ই সংসার করতে থাকে।

দুই বন্ধু খুব আন্তরিক থাকায় উভয় এর বাড়ি উভয় এর অভাদ যাতায়াত ছিল। এবং বিয়ের প্রায় ৮ মাস পর দুই বন্ধুই আবিষ্কার করে যে তারা তাদের স্ত্রী কে যত টুকু ভাল বাসে তার চাইতে অন্নের স্ত্রী এর প্রতি তারা বেশী দুর্বল হয়ে যায়। অর্থাৎ সজিব এর স্ত্রী হেনার প্রতি বাবুল এবং বাবুলের স্ত্রী চম্পার প্রতি সজিব বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং তারা দুই জন সজিব সে তার ভাবি( চম্পা) কে বিষয় টি এবং বাবুল তার ভাবি (হেনা) কে বিষয় টি যানায়। এবং এই দুই বন্ধু তখন ও কেউ কাউকে বিষয় টি বলছেনা। কারন বাবুল মনে করেছিল সজিব এর স্ত্রী কে সে ভাল বেসে ফেলেছে এই কথা সজিব জানলে মনে কষ্ট পাবে।আর অন্য দিকে সজিব ও তাই ভাবতে থাকে। কিন্তু এক সময় তারা বিষয় টি আর চাপা রাখতে পারেনা। তাই দুই বন্ধু দুই জনকেই কথা গুলী বলে। এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা বৌ বদল করবে!

বিষয় টি তাদের বাবা মা পর্যায়ে এক সময় পৌছায়। এবং তারা কিছুতেই এই বৌ বদল নামক বিষয়টি মানতে পারেনা। কিন্তু ২ বন্ধু তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কারনে তাদের অভিভাবক বাধ্য হয়ে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। এবং ১৫ দিন পূর্বে কাজি অফিসে গিয়ে তারা দুই বন্ধু ২ বৌকে প্রথমে তালাক দেয়। এবং শেষ মেষ তারা বৌ বদল করে। অর্থাৎ বাবুল এর প্রাক্তন বৌ চম্পাকে সজিব এবং সজিব এর প্রাক্তন বৌ হেনা কে বাবুল বিয়ে করে। একেই বলে কি বন্ধুত্ব? এই বিয়ে নিয়ে তাদের এলাকাতে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আমাদের দেশের উচু সমাজ ব্যবস্থায় পশ্চিমা দেশ গুলির যেই অপ সংস্কৃতির প্রভাব সেই প্রভাব গুলী মনে হয় একে বাড়ে রুট লেভেল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কারন এই বৌ বদল নামক শব্দটি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, সহ বহু দেশে খুব পরিচিত।ঐ সব দেশে এক ঘেয়ামি কাটানোর জন্য নাকি বৌ বদল করা হয়। একজনের বৌ কে অন্যজন কে উপহার দেওয়া হয় সাময়িক সময় এর জন্য। লিভ টুগেদার এর নামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও বাধা নেই। তবে বাংলাদেশের অজ পাড়া এক গায়ে অশিক্ষিত দুই বন্ধুর এই বৌ বদল নামক ঘটনাটি দেখে বেশ হাসি পায়।

***
কৃতজ্ঞতাঃ
প্রিন্স
দৈনিক প্রবাহ ( খুলনা থেকে স্থানীয় ভাবে প্রকাশিত দৈনিক)