আলোর পথের যাত্রীর আলো নিয়ে ফিরে আসা আর হলো না!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 17 July 2011, 06:48 AM
Updated : 17 July 2011, 06:48 AM

চোখের জলের হয়না কোন রং
তবু কত রঙের ছবি আছে আঁকা
দেখতে গিয়ে হারিয়ে গেলাম গহীন আধার পথে
আকা বাঁকা!

কিশোর কুমার এর বিখ্যাত এই গানটির সুরে সুর মিলিয়ে রুমানা মঞ্জুর লিখে গেলেন, তার গহীন আঁধার পথের এক গল্প!

আলোর পথের এই যাত্রীর আলো নিয়ে ফিরে আসা আর হলনা! এক বুক আশা আর লক্ষ কোটি মানুষের আশীর্বাদ সেই সাথে সুন্দর এই পৃথিবী দেখবার যেই স্বপ্ন সেই স্বপ্ন বুঝি আজ ফিকে হয়ে গেলো! সব স্বপ্ন আজ মাটিতে লুটিয়ে হাহাকার করছে। সব শব্দ গুলী আজ পরাজিত সৈনিক এর মতন মাথা নিচু করে ব্যর্থতাকে কুর্নিশ করছে। সব ভাষা গুলি আজ বধির হয়ে গেছে! কি বলবো আর কি লিখবো কিছুই যে আর লিখতে পারছিনা!

আমাদের বোন রুমানা মঞ্জুর এর চোখ দুটি আর ভাল হচ্ছেনা! এই টি কি সম্ভব? হ্যা এই অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্খিত চরম সত্য ঘটনাটি আমাদের মনের আকাশ এক কালো মেঘের আভায় যেন ঢেকে রেখেছে।সত্য হচ্ছে এই যে, রুমানা মঞ্জুর আর দেখতে পারবেনা! সকল জল্পনা কল্পনার অবসান বুঝি শেষ হয়ে গেলো! ভারতের চিকিৎসকরা আগেই বলে দিয়েছিলেন যে রুমানা মঞ্জুরের দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব ই ক্ষীণ।১৫ ই জুন তাকে ভারতের চেন্নাই এ শঙ্কর নেত্রালয়ে নিয়ে যাবার পর ডাঃ ভেনকি রুমানার চোখ দেখে বলেছিলেন

তাদের করার কিছু নেই।

বাইরে থেকে আলো ফেললেও কোন চোখেরই রেটিনার মাধ্যমে মস্তিষ্ক সেইটি গ্রহন করতে পারছেনা।

শেষ পর্যন্ত সেই খানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে কানাডায় নিয়ে যাওয়া হয়। কানাডার বিখ্যাত চক্ষু হাসপাতাল ভ্যানকুভারে রুমানাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং প্রথম দিকে চিকিৎসকরা আশার বানী ও শুনায়। আমারা আশা বাদী হয়ে উঠি। সেই সাথে বাংলাদেশের কোটি মানুষ সহ কানাডা সরকার, ঐ খানকার বিভিন্ন সংগঠন সেই সাথে রুমানার সহপাঠীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে চিকিৎসা সহায়ক একটি আর্থিক ফান্ড। প্রথম দিকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক বিষয়টি উঠে এলেও শেষ পর্যন্ত অর্থ কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু সব অর্থ ই অনর্থ হয়ে গেলো!

বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার ভোরে রুমানার চোখে অস্ত্রপচার করা হয়। সেই খান কার ৫ সার্জন তার ডান চোখ প্রতিস্থাপন করেন। কিন্তু চোখের অপটিক নার্ভ কাজ না করায় সব আশাই শেষ হয়ে গেছে! সেখানকার সার্জন বলেছেন

অপটিক নার্ভ কাজ না করায় রুমানা আর দেখতে পারছেনা এবং আর কোন দিন দেখতে ও পারবেনা!

রুমানা মঞ্জুর আমাদের সমাজের এই পুরুষ শাসিত শাসকদের হাঁতে নির্মম বলি হলেন। এখন সেই সমাজ কি করবে?

যেই দেশের প্রধান মন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পর রাষ্ট্র মন্ত্রী, সংসদ উপনেতা, কৃষি মন্ত্রী সকল ভাইটাল পদে নারীদের জয় জয়কার, সেই দেশের এক মানুষ গড়ার কারিগর , উচ্চ শিক্ষিতা, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এর শিক্ষক এর এই নির্মম পরিণতি! সভ্য সমাজ আর নারী বাদী সেই সাথে আমাদের নারী নেত্রী বৃন্দ আর আমরা পুরুষ নামের কিছু হায়না দের কাছে আমাদের একটি প্রশ্ন, রুমানা মঞ্জুর এর চোখ আর হয়তো ফেরানো যাবেনা। কিন্তু হাজার হাজার রুমানা মঞ্জুররা আমাদের সমাজের সমাজপতিদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত, নিপীড়িত, হচ্ছেন, কে দেখবে এই সব? কি করছে আমাদের নারী নেত্রীরা? যেই দেশের নারীদের উপর এমন নিষ্ঠুর অবিচার সেই দেশের নারীদের রাষ্ট্রীয় ঐ মসনদে বসার নৈতিক অধিকারই বা কতটুকু রয়েছে?

স্বপ্ন দিয়ে মনকে আমি ভুলিয়ে গেলাম রেখে
তবু কেমন করে কান্না এত এলো কোথা থেকে
ভুলে ভরা সবুজ মনের আকাশ
ধোয়ায় ঢাকা!

রুমানা মঞ্জুর এর আকাশ আজ সত্যি ই ধোয়ায় ঢাকা! কিছুদিন আগে স্বপ্ন দিয়ে রুমানা তার মনটিকে যেই ভাবে ভুলিয়ে রেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন আজ কান্না হয়ে ঝরছে রুমানার কণ্ঠে। এই এক নির্মম সত্য!

তার পর এক যুগ কেটে গেলো এমনি করে
জীবন চলছিল অন্যের হাত টি ধরে!
হঠাৎ করে সেই তুমি সামনে দাঁড়ালে ( তার ছোট্ট সন্তানটি)
এক যুগ ছিলে যে আমার চোখের আড়ালে।

( এক যুগ পরে যদি রুমানা এই চার টি লাইন গেয়ে ওঠে, তার সন্তানকে সামনে নিয়ে!-কি সব হাবল তাবল ভাবছি!)