বিডিনিউজ ২৪.কম পরিবারে আমরা ক’জন

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 18 July 2011, 01:04 PM
Updated : 18 July 2011, 01:04 PM

আসলে আজকের এই লেখাটি লিখতে আমি চাইনি। বা কোন দিন লিখবো এটাও ভাবিনি। তবে কেন যেন লিখছি। হতে পারে এটি একধরনের দায়বদ্ধতা। হতে পারে এটি একধরনের অভিমান নিয়ে ফিরে যাওয়া আমার কতিপয় ব্লগার ভাই দের ফিরিয়ে আনার এক হাস্যকর প্রচেষ্টা! সেই যাই হোক আজকের এই লেখাটি আমার এই ব্লগের সকল বন্ধু- শত্রু সকল ব্লগার ভাই বোন দের উদ্দেশ্যে।

২৩শে মে,২০১১ কোন এক সোমবার অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই এই ব্লগে নিবন্ধিত হলাম। মূলত বহুদিন যাবত আমি এই বিডি নিউজ এর নিউজ গুলী পড়ছিলাম। সেই সাথে গ্রামীন ফোন এর নেট ব্যবহারকারিদের ছেল ফোনে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাস্টমাইজ হওয়া বিডি নিউজ এর লোগো সহ লিংক টির বদৌলতে প্রতিনিয়তই খবর জানতাম মোবাইল এর ইন্টারনেট এর মাধ্যমে। এই ভাবে একসময় ব্লগ পড়া সেই সাথে লেখা লেখির প্রতি যেই দুর্বলতা সেই ছোট্ট বেলা থেকে সেইটি আবার নুতন ভাবে মাথা চড়া দিয়ে উঠলো। ব্যাস নিবন্ধিত হয়েই এক অখ্যাত ব্লগার বনে গেলাম!

কিন্তু ব্লগে ঢুকেই দেখলাম সব সুপারম্যান দের জয়জয়কার অবস্থা। এত সব ভাল মানের লেখক, লেখিকা, বাবা আমি এদের মধ্যে এক অর্বাচীন লেখক টিকবো তো? যাই হোক ভয় এর কোন কারন ছিলনা। কেননা একটি বিষয় আমার মধ্যেই ছিল বরাবরই। আর সেইটি হচ্ছে আমি লিখতে না পারলেও কি প্যাড ধরতে জানি। কাব্যিক ছন্দ, গীতি কবিতা, ছোট্ট গল্প এই গুলী তো লিখেছি অসংখ্য। স্বীকৃতি ও পেয়েছি। বয়স যখন মাত্র ১৬ ঠিক ঐ সময়টিতে বাংলাদেশের অডিও জগতের ৯০ এর দশকের বিস্ময় এবং ঐ সময় এর সবচাইতে ব্যস্ত এবং ব্যায়বহুল সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আমার সঙ্গীত জীবনের সঙ্গীত পিতা, যার হাত ধরে এক সময় সুরের মূর্ছনার ঐ ইন্দ্রজালের জগতে আমার প্রবেশ সেই প্রয়াত সঙ্গীত পরিচালক প্রনব ঘোষ এর মাধ্যমে আমার লেখা ১২ টি গান নিয়ে একটি অডিও এ্যালবাম প্রকাশিত হয় সাউন্ড টেক এর ব্যানারে। উল্লেখ্য এই প্রনব কাকু শুভ্র দেভ, ডলি সায়ন্তনি, আখি আলমগির, এস ডি রুবেল, মৌটুসি, আলম আরা মিনুদের জন্মদাতা। সেই সাথে তপন চৌধুরীর দুঃসময় এর কাণ্ডারি ছিলেন। এর পর আর পেছনে তাকাইনি। পড়া লেখা সেই সাথে গীতি কাব্য চর্চা চলছিল বেশ। তার পর শ্রদ্ধেয় মিল্টন খন্দকার এক বার ডেকে বললেন তুমি আমাকে কিছু গান দিয়। আমি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করবো।

চলচ্চিত্র শুনেই মাথাটি একটু ঘুরপাক খাচ্ছে! কারন ঐ ৯০ এর দশকে (৯৬ সালের জুন এর দিকে) বিনোদন এর একমাত্র মাধ্যম ছিল চলচ্চিত্র।তখন কার সময়টিতে তো আর আজকের ব্লু-রে, ডি ভি ডি, ছি ডি প্রযুক্তি ছিলনা। ঘরোয়া বিনোদন বলতে এক মাত্র ফুনাই ভিছিপি বা ভিছিআর ই ছিল। আর ম্যানুয়াল ভিডিও ক্যাসেট। আজকের স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলী ও ছিলনা। তাই ঐ বিনোদন এর বৃহৎ ক্যানভাস চলচ্চিত্রর জন্য গান লিখতে হবে এটি ঐ ১৬ বৎসর বয়সে আমার কাছে কে হতে চায় কোটি পতির এক কোটি টাকা প্রাপ্তির আনন্দ এর চাইতে ও যে বড় এক আনন্দ!আহা সিনেমার ঐ প্রজেক্টরের লাল নীল আর সবুজ আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে অন্ধকার অডিটোরিয়ামের ১০০০ মিলি মিটার এর সাদা পর্দায় ভেসে আসবে আমার নাম! সে যে কি এক অনুভূতি! অন্তত ঐ সময়ে যেইটি আমার পক্ষে বুঝানো সম্ভব নয়। যাই হোক লিখলাম,

আধারের পথ ভেঙ্গে সূর্যোদয়ে ফিরে এসো

এই লিরিক টি। লিপসিং করেছিলেন ঐ সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রের ওয়ান এন্ড ওয়ানলি গ্লামারস হিরোইন আমাদের খুলনার মেয়ে মৌসুমি।কণ্ঠে ছিলেন নিতাই গঞ্জে যাই খ্যাত ডলি সায়ন্তনি। যাই হোক আর ব্যক্তি আলোচনায় যাচ্ছিনা।

আসলে আমি মোটামুটি লিখতে জানতাম বলেই ব্লগে লিখবার সাহস পেয়েছিলাম। আর এই খানে আর একটি কথা বলে রাখি এই ব্লগে লিখবার আগে আমি কিন্তু আমার মাতৃ ভাষা বাংলা লিখতে পারতাম না। কি অবাক হচ্ছেন? না, অবাক হবার কিছু নেই সত্যি আমি বাংলা লিখতে পারতাম না। তবে সেইটি কলমে নয়, কম্পিউটারে। ১৯৯৮ সালে প্রথম এই আজগুবি যন্ত্র কম্পিউটার এর হাঁতে আমার হাত খড়ি হলেও সত্য হচ্ছে এই যে আমি এই এম এস বাংলা শব্দর কাজটি শিখেছি প্রায় ১৩ বৎসর পরে। এর আগে বিজয় কি বোর্ড একটু একটু ধরতে পারলেও ক খ গ বা ঘ ছাড়া খুব বেশী লিখতে কিন্তু পারতাম না। আমার এই বাংলা বর্ণমালা এই যান্ত্রিক দানব কম্পিউটারে লিখতে যিনি আমাকে বাধ্য করেছেন তিনি হচ্ছেন এই মহা পণ্ডিত বি ডি ব্লগ! ধন্যবাদ বিডি তোমাকে। তবে এখন ও যে পুরা বাংলা লেখনি পণ্ডিত হয়ে গেছি তাই নয় কিন্তু। অনেক অক্ষর খুঁজে পেতে সময় লাগেও বেশ! আর বাধ্য হয়ে মাঝে মাঝে যখন অভ্র ব্যবহার করি তখন অনেক শব্দ সঠিক লেখবার পরেও উদ্ভট হয়ে যায়। পরে আবার সেই মস্তফা জব্বার সাহেব এর বিজয় দিয়ে শুদ্ধ করতে হয়। যাই হোক যে কথা বলছিলাম,

ব্লগে এসেই দেখলাম বাঘা বাঘা সব ব্লগার। যাদেরকে আমি সন্মান করে সুপার ব্লগার বলে ডাকি। এর মধ্যে একজন নারী ব্লগার আইরিন সুলতানা ও মাই গড! ইনি তো ব্লগ জগতের বিস্ময়! আরও আছে নাহুয়াল মিথ, সত্যভাষী, আমিন মোহাম্মাদ, আকাশের তারা গুলী, সরকার, শনিবারের চিঠি, শুভ্র রহমান, আব্দুল মোনেম, ভালবাসার দেয়াল, লুতফর ফরাজি, বাসন্ত বিষুব, হাসেম, কৌশিক, রাজাকার দের জম আজাদি, বিদ্রোহী হেলজিনোম, যুক্তিবাদী মুশফিক ইমতিয়াজ ভাই, সহ এই মুহূর্তে নাম না মনে আসা অসংখ্য সুপার ম্যান খ্যাত এই সব রাঘব ব্লগার! আমাদের সুপারম্যান ব্লগার বোন আইরিন সুলতানা তার নাগরিক সাংবাদিকতা নামক একটি পোস্টে এই রকম কিছু কথা বলেছিলেন

আপনি (মোনেম), নাহুয়াল মিথ, আমিন আহম্মদ, মোসাদ্দিক উজ্জল, মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী, বাসন্ত বিষুব, সত্যাভাষী সহ আরো বেশ কয়েকজন ব্লগার আছেন, যাদের লেখনী অনেক বেশি সমৃদ্ধ। আবার রণদীপম বসু, ইলিয়াস চৌধূরী, শুভ সালাতিন সহ আরো কিছু ব্লগারদের দৃষ্টিভঙ্গি চমৎকার। আপনাদের একেকজনকে আমার 'এ্যাসেট' মনে হয় এ ব্লগের। নতুন একটি ব্লগের শুরু থেকেই এতো জন মানসম্মত ব্লগারের সমাবেশ সত্যিই অভাবনীয়।

উল্লেখ্য আমার মতন নুতন এক আনাড়ি ব্লগারকে আইরিন আপু এ্যাসেট (সম্পদ) বানিয়েছেন এটি তার আকাশের মতন বিশাল, সাগরের মতন অসীম হৃদয়ের এক প্রতিফলন! এই ভালবাসা রাখবো কোথায়? আজ একটি কথা মনে পড়ে। প্রথম চলচ্চিত্রটির জন্য যখন গানটি লিখেছিলাম, তখন একটি অনুষ্ঠানে মিল্টন স্যার আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। রামপুরার অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে এক ঝাক তারকাদের মিলন মেলা বসেছিল। চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির বার্ষিক সাধারন ঐ সভায় এসেছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা গীতিকার রফিক উজ্জামান। তার সাথে মিল্টন খন্দকার স্যার আমাকে পরিচয় করে দিলেন। নিজেকে অতি তুচ্ছ আর নগণ্য মনে হচ্ছিল। এত বড় এক গীতি কবির সামনে ১৬ বছরের এক পুচকে ছেলে কি বলবো? ঐ দিন রফিক স্যার আমাকে সাহস যুগিয়েছিলেন। উল্লেখ্য তিনি আমার লেখা গানটি যেটি আমি লিখেছিলাম চলচ্চিত্রের জন্য সেই গানটি তিনি শুনেছিলেন। আর বলেছিলেন লিখতে থাক বাবা, এই প্রজন্ম তো গাইতে চায়, কেউ লিখতে চায় না। তুমি কেন লিখতে চাও? আমি বলেছিলাম আমি যে গাইতে জানিনা!

যাই হোক আমার লেখার প্রথম দিকে এই আইরিন সুলতানা আর আজাদি আমাকে সাহস যুগিয়েছিলেন। ব্লগে যাদের ঋণে আমি ঋণী! সেই সাথে আরও আবিষ্কার করতে লাগলাম সত্যভাষী, মিথ, আমিন ভাই, শুভ্র ভাই সহ অসংখ্য ব্লগার দের আকণ্ঠ সমর্থন! যাই হোক এই ভাবে সুন্দর এই ব্লগিং পরিবেশে লিখতে লাগলাম। কিন্তু একটি সময় দেখতে পেলাম আমাদের এই ব্লগে লেখক এর চাইতে পাঠক এর সংখা বেশী। একদিনে ১০ থেকে ১৫ টির বেশী লেখা পোস্ট হচ্ছেনা। তাই ভাবলাম ব্লগারদের সংখা বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যেই এই ব্লগের লিংক অসংখ্য বন্ধুদের মেইলে পোস্ট করেছি। সেই সাথে যারা লেখা লিখি করতে চায় তাদের ও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এই বিষয় এর উপর একটি লেখা ও পোস্ট করতাম। যার শিরোনামটিও ঠিক করে রেখেছিলাম।

এসো আমাদের এই ভুবনে, সত্য আর সুন্দর এর এই পথে!

মূলত ব্লগার এর সংখা বাড়ানোর জন্য এই পোস্টটি করতে চেয়েছিলাম। কারন এই মুহূর্তে আমাদের ব্লগার এর দরকার। ভাল মানের নয়। শুধুই ব্লগার। কারন ফ্রেস ব্লগাররা লিখতে লিখতে এক সময় ভাল মানের নন্দিত আর সুপার ব্লগার হয়ে যাবেন।

যেই মুহূর্তে ঐ বিষয় টি নিয়ে( ব্লগার বাড়ানোর লক্ষ্য) লিখবো ঠিক করেছি সেই মুহূর্তে নানা ঘটনায় ভারী হয়ে উঠেছে আমার মনের আকাশ। ভীষণ আশাহত আমি, বিষণ্ণ আমি। অপ্রত্যাশিত নানা কারনে আমাদের কিছু সুপার ব্লগার রা ব্লগ ছেড়ে চলে গেছেন, কেউ যাচ্ছেন। কিন্তু কেন?

২৭শে জুন বন্ধু নাহুয়াল মিথ তার সর্বশেষ এক লেখায় বলেছেন তিনি আর লিখবেন না! প্রধান মন্ত্রীর ভালবাসার পশরা নামক এক লেখায় তিনি কমেন্ট করে তার আপ গ্রেড পাননি। অর্থাৎ তার লেখাটি আসেনি। প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি লিখছেন না, পাঠক হিসাবে পড়ছেন আর ইমোটিকন দিচ্ছেন। কেন এই চলে যাওয়া মিথ?

এক ব্লগারকে গ্রেফতার এর সংবাদ নিয়ে ডিজিটাল সরকার এর ফেস বুক আতংক নামে একটি লেখা ব্লগ পেজে কভার পেজ করা হয়েছিল। মূলত ঐ পোস্ট দাতা আসল সত্যটি চেপে গিয়ে ব্লগার গ্রেফতার এই বিষয়টি নিয়ে লিখতে গিয়ে ব্লগারদের সেনটিমেন্ট ইস্যু কে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। তার পর যা তাই। আমাদের ঐ সব সুপার ব্লগার রা বিষয়টি ধরে ফেললেন। সুচতুর ঐ লেখক কিছু বুঝে ওঠবার আগেই সবাই তার লেখার জবাব দিতে লাগলেন। তারপর থেকে সত্যভাষী ব্লগে নেই! কিছুদিন আগেও তিনি বলেছেন একটি লেখায়,

উজ্জ্বল আমার আর লিখতে সাধ জাগেনা।

কেন সত্যভাষী?

আজ মুশফিক ইমতিয়াজ ভাইয়ের

নারী স্বাধীনতার অন্তরায় বোরকার স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কুপ্রভাব

এই লেখায় হেলজিনোম ব্লগ থেকে বিদায় নেবার এক অস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। ইতি মধ্যেই এই তরুন আর স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী ব্লগারটি তার আর্কাইভ থেকে লেখা সরিয়ে ফেলেছেন।

কেন?

এই ছাড়াও আরও অনেক নিয়মিত সুপার ব্লগাররা অনিয়মিত হয়ে উঠছেন। তারা আজ কালে ভাদ্রে আসেন ব্লগে!

কেন এই চলে যাওয়া? কি এত অভিমান? কেন এই নিজের সাথে আপোষ? ব্লগে এই সব মানের ব্লগাররা যদি না থাকেন,তবে কি সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আর মানবতা বিরোধী ঐ পাক দালাল দের হাঁতে ব্লগ জিম্মি হয়ে যাবে? মেধা সম্পন্ন ব্লগারদের পরিবর্তে মেধাহীন আউল ফাউল সব উদ্ভট চিন্তা ধারার লোকেরা কি ব্লগ লিখবে? যারা ব্লগ পোস্ট করে নিজেরা হাসে আর সেই সাথে মানুষ ও হাসায় সেই সব ব্লগারদের হাঁতে কি আমাদের ব্লগাররা ব্লগের ঝাণ্ডা তুলে দিবেন?

সকল ব্লগার দের নিকট এটিই প্রশ্ন আমার।

সবাই ভাল থাকুন, খুব ভাল।

ভাল বাসার পদ্ম ফুটুক দুঃখ দীঘির জ্বলে