টালমাটাল দেশের দুই পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের অসহায়ত্ব। দেখার কেউ নেই!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 17 August 2011, 06:16 AM
Updated : 17 August 2011, 06:16 AM

টালমাটাল দেশের দুই পুঁজিবাজার। ভয়াবহ এক দুঃসময় এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের এই আর্থিক খাতটি। প্রতিদিন ক্রমহ্রাসমান হারে ইনডেক্স নামছে তো নামছে। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারির অস্বাভাবিক দরপতনের পরও থেমে নেই দরপতনের ধারা। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রতি দরপতনে শেয়ার লেনদেনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বিশ্ব পুঁজিবাজারের ইতিহাসে একাধারে এই ভাবে বাজারের নিম্নগতি কোন স্টক এক্সচেঞ্জ এ এই যাবত দেখা যায়নি। কিছু দিন আগে ইউরোপ আমেরিকা সহ পৃথিবীর বৃহৎ দেশসমুহে যে ভয়াবহ ধস নেমেছিল মাত্র ৬ ওয়ার্কিং ডে তে সেই দেশের পুজি বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ঐ ভয়াবহ দুঃসময়ে বিশ্ব নেতারা টেলি কনফারেন্সে করেন। এবং কিছু নীতি গত সিদ্ধান্ত নেন। যার মধ্যে ছিল তৎক্ষণাৎ শর্ট সেল বন্ধ করা। ব্যাংক লোণ রেশিও সহ নানামুখী পদক্ষেপে ।মাত্র টেলি কনফারেন্স এর ৬ ঘণ্টা পর ই আবারো ঘুরে দাড়ায় ইউরোপ- আমেরিকার পুজি বাজার। আর বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা চেয়ে চেয়ে দেখল ঐ সব দেশের দূরদর্শিতা। সেই সাথে আর দেখল আমাদের এই অভাগা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রেগুলারিটির নির্বোধ ভূমিকা আর সরকারের ব্যর্থতা!

গত কয়েক মাসের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির দরপতনের অব্যবহিত আগের দুই সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গড় লেনদেন দাঁড়িয়েছিল প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর ইতিহাসে সর্বোচ্চ তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার লেনদেন হয়। এদিন ডিএসইর সাধারণ সূচকের অবস্থান ছিল ৮৯১৮ পয়েন্টে। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর থেকে দরপতন শুরু হলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন নেমে আসে এক হাজার ৫১৩ কোটি টাকায়। ৩০ ডিসেম্বর সূচকের অবস্থান ছিল ৮২৯০ পয়েন্টে। এর এক মাস পর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সাধারণ সূচক আরও প্রায় এক হাজার পয়েন্ট কমলে লেনদেনও প্রায় আট ভাগের এক ভাগ কমে নেমে আসে ৬০৮ কোটি টাকায়।

পরবর্তী দেড় মাসও প্রায় একই অবস্থা ছিল। কিন্তু ৩ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে সূচক আবার ১৩৪৭ পয়েন্ট বাড়লে, এ সময়ে লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ বা এক হাজার ১৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এরপর আবারও থেমে থেমে দরপতন চলতে থাকলে গত মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন নেমে আসে ৩৫১ কোটি টাকায়।

গত ২০ জুনের পর দেশের শেয়ারবাজার আবারও দরবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত এ সময়ের মোট ২৪ কার্যদিবসে ডিএসইর সাধারণ সূচক ১০২৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ফলে জুনের চতুর্থ সপ্তাহে ডিএসইতে গড় লেনদেন ৪৪২ কোটি টাকা থেকে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এসে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৮১০ কোটি টাকায়। সর্বশেষ ২৫ জুলাই থেকে আবারও দরপতন শুরু হলে ডিএসইর গড় লেনদেন গত সপ্তাহে আবারও ৫০০ কোটি টাকায় নেমে আসে। গত রোববার পর্যন্ত সর্বশেষ ১৫ কার্যদিবসের ১৩ দিনই শেয়ার দর কমলে সূচক কমে যায় ৬৩৮ পয়েন্ট।

আজকে যখন লিখছি তখন দেখা যাচ্ছে ডি এস ই জেনারেল ইনডেক্স ৬০০০ এর নিচে নেমে আসছে। আর ছি এস ই ইনডেক্স ১১০০০ এর নিচে নেমে আসছে।

মার্চেন্ট ব্যাংক, আই ছি বি, মিউচুয়াল ফান্ড সবাই নিস্ক্রিয়। এস ই ছি আজ কাগুজে বাঘ! অর্থ মন্ত্রী আজ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আবোল তাবোল শুধুই বকে যাচ্ছেন। এই দেশের পুজি বাজার টি শেষ হয়ে যাচ্ছে আর বাজার সংশ্লিষ্ট কারো কোন মাথা ব্যথা নেই! সব দোষ সালার ঐ বিনিয়োগকারীদের! এই আরকি অবস্থা। আমি আগেও লিখেছি এই শেয়ার বাজার নিয়ে। এখন আর কারো দোষ দিতে ইচ্ছে হয়না। জন্ম যাদের আজন্ম পাপ তাদের আবার কষ্ট কিসের? পদ্মা নদীর মাঝি নামের সেই উপন্যাস টির একটি কথা আজ মনে পড়েঈশ্বর থাকেন ঐ ভদ্র পল্লীতে। কুবেরদের কষ্ট ঈশ্বর দেখেন না। হ্যাঁ ঈশ্বর আজ কেবল ঐ সব মানুষদের। ৪০ লাখ বিনিয়োগ কারীদের পাশে ঈশ্বর নেই। আছে ঈশ্বর প্রেরিত অর্থ মন্ত্রী মুহিত, গভর্নর আতিউর রহমান, এস ই ছির কিছু কর্তা ব্যক্তিদের মত যমদূত!

২ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে এই এক নির্লজ্জ তামাশা! নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির দেখলাম গত পরশু এই শেয়ার বাজার নিয়ে টেলিভিশনে স্পিচ দিচ্ছেন। এক কথায় তিনি বললেন দেশ চালাচ্ছে ভূত! দেশের মানুষের সঙ্গে সরকারের এটি শুধু তামাশা ই নয় এটি চরম এক বেয়াদবি!

আসলে আজ মহাজোট সরকারে কজন মহা পাপি মন্ত্রীর জন্য দেশের একি হাল? অর্থ মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী, যোগাযোগ মন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী, জ্বালানী মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এরাই যথেষ্ট আগামীর নির্বাচনে মহাজোটের নৌকা ডুবানোর জন্য। আর এদের বা খুব একটা দোষ তাও নয়। একজন মন্ত্রী যখন নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না, হ্যাঁ করে প্রধান মন্ত্রীর মুখ পানে চেয়ে থাকতে হয় সেইখানে আর কিই বা করার? সব ই আমাদের নিয়তি।

সেই যাই হোক পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ৪০ লাখ বিনিয়োগকারী আর তাদের সঙ্গে থাকা আর ৫ জন করে সদস্য অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি মানুষের সাথে যেই নির্মম এক তামাশা চলছে এটি সরকারের জন্য বুমেরাং হবে। হবেই কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা দেখে ও দেখছে না। আজ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীরা সর্বশান্ত। ওদের আহাজারি কেউ দেখছে না। দেখার কি আসলে কেউ নেই?