হুমায়ূন আহমেদ: নক্ষত্রের রাতের মত ফিরে এসো আমাদের মাঝে! আমাদের পৃথিবীতে!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 15 Sept 2011, 03:00 PM
Updated : 15 Sept 2011, 03:00 PM

নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ কি লোকান্তরে চলে যাচ্ছেন? নাকি রাতের তারার দেশে সেই নক্ষত্রের রাত হয়ে আজীবন চলে যেতে চাইছেন সেই চির চেনা নিশ্চিত গন্তব্য- না ফেরার দেশে? আমাদের হুমায়ূন সার কেমন আছেন? ভাল আছেন তো? না সার ভাল নেই। কি করে ভাল থাকবেন? জীবন ঘাতী ক্যান্সার এর সাথে প্রতিনিয়ত সহবাস করছেন আমাদের প্রিয় হিমু সার। হ্যাঁ হুমায়ূন আহমেদ আজ ভাল নেই সত্যি ভাল নেই। বিশ্বাস করুন সত্যি বলছি। ভাল নেই আমাদের হুমায়ূন সার।

আমাদের হিমুর শরীরে গুরুতর পর্যায়ে ক্লোন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। প্রাণঘাতী ক্লোন ক্যান্সার এখন চতুর্থ পর্যায়ে।সত্য কথা বলতে গেলে এখান থেকে মানুষের ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব!ভক্তদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বেড়ে যেতে পারে এই ভেবে নাকি আমাদের হুমায়ূন সার বিষয় টি গোপন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেই গোপন বিষয়টি চেপে রাখা সম্ভব হয়নি। আর হুমায়ূন সার তাই এখন নিউ ইয়র্কের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত সোলান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এই ব্যাপারে ইমপ্রেস টেলি ফিল্ম এর হেলাল ভাই এর মারফত জানা যায় – তার শরীরে গুরুতর পর্যায়ে ক্লোন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। যা লিভারসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চিকিৎসকরা খুব ভালো কিছু শোনাতে পারেননি। হুমায়ূন সার আগে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি করান। তার পর থেকে তিনি নির্দিষ্ট সময়ে চেক-আপের জন্য সিঙ্গাপুর যেতেন। কিছুদিন পূর্বে তিনি সেখানে গেলে চিকিৎসকরা তাঁর ক্লোন ক্যান্সার হয়েছে বলে জানান।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্ম নেওয়া আমাদের হুমায়ূন সারের যে কত রূপ সেটি ব্যাখ্যা করে শেষ করা সম্ভব নয়। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, চিত্র পরিচালক ও গীতিকার। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম সায়েন্স ফিকশন তিনিই লিখেছিলেন।প্রায় ২৫০ টির মতন গ্রন্থ তিনি এই যাবত রচনা করেছেন। বেশ কিছু গ্রন্থ অন্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। প্রথম জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। কিন্তু সৃষ্টি শীল এই লোকটি কেবল নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই নিজেকে বন্দি করে রাখতে চাননি। তাই সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সকল ধারা কে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। যদি বলা হয় রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর আর নজরুলের পর আমাদের সাহিত্য আর সংস্কৃতিতে কেকে বেশি অবদান রাখতে পেরেছেন তবে তার মধ্যে আমাদের হুমায়ূন সার এর নাম থাকবে প্রথম সারিতেই।

জীবন ঘাতী ক্যান্সার আমাদের মাঝ থেকে কিছু দিন আগে কেড়ে নিয়েছে পপ গুরু আজম খান কে। সেই ক্ষত আজও শুকাইনি। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ এর এই সংবাদ শুনে হৃদয়ে বেদনার নীল বাষ্প আরও গাড় হয়ে বোধ হয় ঘনীভূত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন পজিটিভ নিউজ পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায় তাকে মোট ৮ টি কেম দিতে হবে। বিজ্ঞান আমাদের আশীর্বাদ স্বরূপ অনেক কিছুই দিয়েছে সত্যি। তবে ক্যান্সার আর এইডস এই দুটি জিনিসের কাছে বিজ্ঞানের অসহায়ত্ব আজও আমরা দেখতে পাই।

বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে হুমায়ূন সার এর অবস্থা সত্যি আশঙ্কা জনক। তবে মানুষের ভালোবাসা আর উন্নত চিকিৎসায় আমাদের হুমায়ূন সার আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। আবারো সার লিখবে। নাটক বানাবে। চলচ্চিত্র বানাবে। গীতিকবিতা রচনা করবে। চিকিৎসকরা নাকি বলেছেন এই পর্যায় থেকে একটি রোগীকে ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব! কিন্তু এতো মানুষের ভালোবাসা কি বিমুখ করবেন সৃষ্টিকর্তা? আমার মনে হয় না। হুমায়ূন সার ঠিক ফিরে আসবেন। আমাদের মাঝে। তার সেই নক্ষত্রের রাত হয়ে।