ধর্ম, ইসলাম বিদ্বেষ এবং ন্যাকেড ব্লগিং!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 1 Oct 2011, 09:37 AM
Updated : 1 Oct 2011, 09:37 AM

মানব জীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই ছিল। আর ছিল বলেই আজও পৃথিবীর মানুষ গুলি কোন না কোন ধর্মের অনুসারী। এই পৃথিবীর কত ভাগ মানুষ ধার্মিক এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মুশকিল। তবে ধর্ম বিশ্বাস করেন না এমন লোকের সংখ্যা খুব সামান্য।শত শত বছর ধরে মানুষ তাদের ধর্ম কর্ম পালন করে আসছে। বস্তুত সকল ধর্মের মূল নীতি এক না হলেও অন্তত একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা যায় যে,কোন ধর্মেই বলানেই মানবের অকল্যাণ সাধন করা কিংবা এই পৃথিবীর বুকে কোন মানবকুলের ক্ষতি সাধন করা। কাজেই সকল ধর্মের একটি কমন সার হল মানবের জন্য কল্যাণ বয়ে আনা। হিংসা, হানাহানি কিংবা ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ এই কথা গুলো কোন ধর্মে বলা আছে বলে কারো জানা নেই। তাই নির্দ্বিধায় এক বাক্যে বলা চলে ধর্মর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানো। তাদের পরিশুদ্ধ করা। সেই সাথে তাদের কে নির্মল আর পবিত্র এক মানবে পরিণত করার চেষ্টা করা।

আমাদের এই বাংলাদেশে সব ধর্মের সব গোত্রের নাগরিকদের জন্য সমান সুযোগ এর ব্যবস্থা রাষ্ট্র করে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অপূর্ব মিল বন্ধন কিন্তু এই দেশে চোখে পড়ে। এত সম্প্রীতির অনুপম দৃশ্য পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই। কাজেই সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই সম্প্রীতির দেশে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সিংহ ভাগ মুসলিম জন গোষ্ঠীর এর দেশে নানা বিধ কারণে ইসলাম ধর্ম বিতর্কিত হচ্ছে। ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যের বাইরে গিয়ে কতিপয় মানুষের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি এটি চোখে পড়ার মত। একজন মুছলমান ধার্মিক হবেন, তবে তিনি কখনো ধর্মান্ধ হবেন না। মজার ব্যাপার হল এই দেশের ইসলাম ধর্মকে নানা ভাবে যারা বিতর্কিত করছেন তারা কিন্তু অন্য ধর্মের কেউ নন। শুধু বাংলাদেশ নয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে আজ ইসলাম ধর্মকে অনেকেই জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেছে। ইসলামের মূল স্রোত থেকে বেরিয়ে আসা ভিন্ন কিছু মতাদর্শের মানুষ এবং কতিপয় মুখোশ ধারী লাদেন পন্থিরা আজ নন মুসলিম জাতির নিকট এক মূর্তিমান আতংকের নাম। সেই সাথে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়ার অপ প্রচার তো আছেই। বাইরের সেই সব বিশ্ব বিশেষ করে আফগান কিংবা পাকিস্তানের সেই সব ইসলামের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হওয়া কিছু মানুষ নানা ভাবে এই দেশেও ইসলাম ধর্ম কে অপবিত্র বানিয়েছে।

বাংলা ভাই,আব্দুর রহমান কিংবা মুফতি হান্নান রা ইসলামের সেই সু শীতল আকাশের অপার তারকারাজির মধ্যে কয়েকটি নষ্ট নীহারিকা। আর নষ্টের কাজ ই নষ্ট হওয়া এবং সেই সাথে নষ্ট করা। দেশের ৬৩ টি জেলায় এক সাথে বোমা হামলা, ময়মনসিংহ সিনেমা হলে বোমা হামলা কিংবা বিচারকের আদালতে বোমা মেরে ইসলাম কায়েম করার জন্য যে ব্যর্থ অপ চেষ্টা তারা চালিয়েছে তার জন্য ইসলাম কোন ভাবেই দায়ী ছিলনা। অথচ তামাম বিশ্ব মিডিয়া না বুঝেই এহেন কর্ম কাণ্ডের জন্য মানব জাতির পরম মমতা মাখা ধর্ম ইসলাম কে দোষ দিয়ে যায়। আজ যখন বিশ্ব নেতারা বলে উঠেন ইসলাম মানে জঙ্গি তখন নিজের কাছে নিজেকে বড়ই ছোট মনে হয়। আর এই ছুতো ধরে একের পর এক মুসলিম রাষ্ট্র গুলো আজ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নামে মাত্র ইসলামি রাষ্ট্র হলেও এক একজন হামিদ কারজাই বানিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব গুলো সেই সব রাষ্ট্রের রশি টানছে। আর পুতুল হয়ে হামিদ কারজাই রা নেচে যাচ্ছে। জঙ্গি আস্তানা ধ্বংসের নামে নিষ্ঠুর ধ্বংস লীলা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তার নির্মম শিকার হচ্ছে লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষ।

বাংলাদেশে একটি সময় যেই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল সেটি জাতির জন্য কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলনা। কেননা ওই সময়টিতে বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল বি এন পি ও জামাত জোট। এর মধ্যে জামাত নিজেকে ইসলামি দল বলে দাবি করে। এবং তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তারা সর্বদা একটি স্বাধীন সার্বভৌম ইসলামি রাষ্ট্র ও ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য চেষ্টা, আন্দোলন এবং সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। কাজেই সেই জামাতের ক্ষমতা থাকাকালীন অবস্থায় এই দেশে ইসলাম কায়েম এর নামে জঙ্গি হামলা এটি আসলে কি প্রমাণ করে? জামাত কি তবে সেই সময়ে জঙ্গিদের মদদ দাতা ছিল? যদিয় এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই পেয়ে গেছেন কয়েক বছর আগেই। তবে এখন আবারো বলতে হচ্ছে এই কারণে যে এই জামাত- বি এন পি জোট এখনও বলছে আওয়ামীলীগ ধর্মে বিশ্বাস করেনা। তারা বিসমিল্লাহতে বিশ্বাসী নয়। তারা ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাদের সেই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামীলীগ থেকে বার বার বলা হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্ম হীনতা নয়। কিন্তু এই কথা বি এন পি জামাত জোট কোন ভাবেই মানতে পারেনা যে আওয়ামীলীগ ধর্মে বিশ্বাসী। ভাবটা হয়তো এমন এই দেশে সকল ধর্ম কর্ম কেবল বি এন পি জামাত করে। আর কেউ নয়। কাজেই এইখানে ও দেখা যাচ্ছে সেই ইসলাম ধর্মকে আবারো বিতর্কিত করছে মুছলমান নাম ধারী কিছু মানুষ। সেই বিতর্ক হয় বি এন পি করছে, না হয় আওয়ামীলীগ করছে নয়তো জামাত করছে। এইখানে কিন্তু বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়,সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, দিলিপ বড়ুয়া কিংবা দিপংকর দেবনাথ রা করছেনা।

ধর্ম নিয়ে এই দেশে বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দল বেশ বাড়াবাড়ি করে। কথায় কথায় তারা কাফের কিংবা মুরতাদ বলে হুমকি দেয়। আবার এই সব দল গুলোর মধ্যে একটি বিশেষ দল রয়েছে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে এই দেশের বিরোধিতা করার জন্য আজও বাংলাদেশের মানুষের চোখে ঘৃণার দৃষ্টিতে। কোটি মানুষের ঘৃণা নিয়ে তারা বেচে আছে। আবার রাজনীতি ও করছে। একটি স্বাধীন বাংলাদেশ এর স্বপ্ন যারা কোনদিন মানতে পারেনি কিংবা আজও যারা এই দেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয় তারাই আজ ইসলামের মহা দরদী। মনে হয় তারাই কেবল এই দেশের ইসলাম ধর্মের ধারক, বাহক ও রক্ষক। কাজেই সেই ইসলাম ধর্মকে আবারো বিতর্কিত করছে কিন্তু আমরা নামধারী কিছু ইসলামি চেতনা বাস্তবায়নে বিশ্বাসী মানুষ। একটি বা কোন বিশেষ দল ছাড়া বাকিরা ইসলাম মানেন না বা তারা আল্লার দুশমন এমনটি ভেবে যারা সভা সমাবেশে বক্তিতা দেয় তারা আসলে সুস্থ মস্তিষ্কের কিনা এটিও ভাবা প্রয়োজন। ইসলাম ধর্মের অনুসারী কিংবা মহান সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা পাবার জন্য কোন বিশেষ রাজনৈতিক দল করার কোন প্রয়োজন নেই। এমনকি অমুক দলে ভোট দিলে জান্নাতের ভিসা পাওয়া যাবে এমনটি ভাবা শিরক ছাড়া অন্য কিছুই নয়।

বাংলা ভাষা ভাষীদের নিকট সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগ বেশ জনপ্রিয় একটি কমিউনিটি সাইট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অসংখ্য ব্লগ সাইটে ব্লগিং করছেন কয়েক হাজার ব্লগার। সঙ্গত কারণে ওই ব্লগ পরিবেশে যারা ব্লগিং করেন তারা কেউ কোন না কোন দলের বা মতাদর্শের। তবে একটি বিশেষ দল যারা স্বাধীনতা বিষয়ক কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত তাদের অনুসারীরা মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই ধর্মকে ব্যবহার করছে ঢাল হিসাবে। বিশেষ করে আমার ব্লগ, সোনার বাংলা, সামহোয়্যার ইন কিংবা মাঝে মাঝে প্রথম আলো ব্লগে বেশ ক্যাচাল দেখা যায় এই সব ধর্ম নিয়ে লেখা পোস্ট গুলোতে। আস্তিক নাস্তিক যুদ্ধও শুরু হয়ে যায়। এবং শেষ পর্যন্ত দেখা যায় পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। তার পর শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। এবং শেষ পর্যন্ত ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে মা কিংবা বোন তুলে গালা গালি দিয়ে ধর্ম রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়! হায় ইসলাম ধর্ম! মানবতা আর শান্তির এই ধর্মকে ব্লগে নাপাক করে ফেলছে কারা? যারা ধর্ম নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করে তাদের কাছে প্রশ্ন হল এই ভাবে কি করে ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব? পরম সহিষ্ণু এবং সবরের ধর্ম হল ইসলাম। কাজেই এটি কায়েম করা যদি এত সহজ হত তবে মহানবী জীবনে এত সংগ্রাম করতেন না। আল্লার কাছে প্রার্থনা করেই বলে দিত যে আল্লাহ তুমি বিধর্মী কে ধ্বংস করে দাও। অথচ সেই আদর্শ থেকে আজ অনেকেই সরে এসেছে। এবং তার প্রভাব ব্লগেও দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি বিডি ব্লগেও বেশ কিছু ধর্ম ও ইসলাম বিদ্বেষী পোস্ট ও কমেন্ট এসেছে। কিছু দিন আগে ব্লগার বাসন্ত বিষুব এর একটি বিতর্কিত পোস্ট এসেছিল। যেটি ছিল উদ্দেশ্য মূলক। তিনি ৯/১১ যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার জন্য ইসলাম ধর্মকে কৌশলে ব্যবহার করেছিলেন। যেটি ছিল এই ব্লগের একটি ন্যাকেড ব্লগিং। আমি সেইদিন বাসন্তের লেখায় কমেন্ট করেছিলাম। যেটি অনেকেই দেখেছিলেন। আবার ২৯ সেপ্টেম্বর সুমনের একটি লেখায় একটি আপত্তিকর কমেন্ট এসেছে। জাহেদ উর রহমান নামের একজন ব্লগার এর কমেন্ট ছিল নিম্নরূপ-

জাহেদ-উর-রহমান বলেছেন:1
সন্ধ্যা ৭:১০, বৃহস্পতিবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১১
মানুষকে মূল্যবান করে ধর্ম? অসম্ভব। আপনি যে ধর্মের পক্ষে লেখেন সেই ধর্মের গভীর পড়াশোনা আমার আছে। আপনার ধর্মগ্রন্থ আর প্রচারকের বানীর পুস্তকের পাতায় পাতায় আছে মানুষকে আর মানবতাকে অবমূল্যায়নের প্রমান।
আর যারা মনে করে ধর্ম ছাড়া নৈতিক উন্নতি সম্ভব না, তারা আর যাই হউক মানুষ হয়ে ওঠার আশপাশেও নেই। ভাল কাজ করার জন্য আর খারাপ কাজ হতে বিরত থাকার জন্য যাদের আগুনের ভয়, আর সুন্দরি হুরের শরীরের লোভ লাগে তাদের মুখে আর যাই হউক মানুষের মূল্যের কথা, নৈতিকতার কথা মানায় না।

আমি হতবাক হয়ে গেছি সেদিন। তবে সুমন এর লেখার কারণে অনেকেই সেই লেখাটিতে কমেন্ট করেছেন ভিন্ন ভাবে। কিন্তু কিছু কমেন্ট যাদের কাছ থেকে এসেছে তাদের ব্যাপারে ব্যক্তিগত ভাবে বেশ জানা শোনা থাকায় আবিষ্কার করতে থাকি কেন তারা এমন কমেন্ট করেছে? প্রাইভেসির জন্য আমার সাথে কারো কারো কথা হয় ফেস বুকে। এবং আমি যেটি মনে করেছিলাম বিষয়টা তেমন ই ছিল। আপাত দৃষ্টিতে কমেন্ট গুলো দেখলে মনে হয় অনেকে ইসলাম বিদ্বেষী। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। তবুও পাবলিক প্লেসে এমন কমেন্ট সত্যি দুঃখজনক। কারণ অনেকেই বিষয়টির অন্তঃসার বুঝতে পারবেন না। কাজেই তারাই ভুল বুঝবেন মন্তব্য কারীদের।

আমি সবাই কে বিনীত অনুরোধ করতে চাই ধর্ম বিষয়ক যে কোন লেখায় আমরা যেন চরম সতর্কতা অবলম্বন করি। কোন প্রকার নগ্ন আক্রমণ যেন ধর্ম বিষয়ক পোস্টে না চালাই। যেই ধর্ম নিয়েই পোস্ট আসুক না কেন ধর্ম বিষয়ক পোস্ট কে আমরা যেন সবাই সন্মান করি। কেউ যদি ধর্ম কে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চায় তার জন্য তাকে ধরা যেতে পারে। কিন্তু সেই আক্রমণ যেন ধর্মের উপর না আসে। কারণ আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা যে সুমনের সেই পোস্টটিতে ধর্ম ব্যবসায়ী কোন বিশেষ দলের অনুসারী সুমন কে ধরতে গিয়ে ধর্মের উপর ই ষ্টীম রোলার চালিয়ে গেছি নিজের মনের অজান্তে। অন্তত আমার ফেসবুক তো তাই বলে। কাজেই এতে করে সুবিধা নিয়ে যাবে সেই সব ধর্ম ব্যবসায়ী ও তাদের শরিকরা।

শেষের দিকে আবারো বলছি আমরা আমাদের এই বি ডি ব্লগ কে সামু, আমার ব্লগ কিংবা সোনার বাংলা যেন না বানাই। ধর্ম, আস্তিক কিংবা নাস্তিক যে কোন বিষয়ের পোস্ট আসতে পারে। তবে সেই ধর্ম যুদ্ধ করতে গিয়ে যেন অধর্মের কাজ না করে বসি। এই চাওয়া সবার কাছে।

ভালো থাকুন সবাই।
ভালোবাসার পদ্ম ফুটুক দুঃখ দীঘির জ্বলে।