সৌদির বর্তমান হিংস্র আইন! আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানায়!

মোসাদ্দিক উজ্জ্বল
Published : 9 Oct 2011, 06:52 AM
Updated : 9 Oct 2011, 06:52 AM

বিশ্ব বিবেক কি জেগে উঠবেনা? অসভ্য জাতি হিসাবে সৌদি আরব কোন একসময় বিখ্যাত ছিল। সেই জাহেলিয়াতের যুগ পার করে এসেছে কয়েক হাজার বছর আগে। কিন্তু ২০১১ সালের এই পৃথিবীর বুকে আজও বর্বর জাতি হিসাবে সৌদিআরব যেই কলঙ্কের তিলক তার কপালে লেপন করে রেখেছে সেটি দেখে বিশ্ব বিবেক আজ নড়ে চড়ে বসেছে। এই কেমন আইন? এটি কি আইন না অসভ্য জংলি সভ্যতা? একজন কে খুন করার অপরাধে ৮ জনের শিরশ্ছেদ! কিসের ইসলামি আইন? ইসলাম কাদের জন্য? ওই সৌদিয়ান যারা নিজেরা শরাব পান করলে গুনাহ পানাহ হয়ে যায়। আর আমাদের দেশের খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা ৫০০০ টাকার জন্য ওই দেশে কুকুরের মত দিন রাত খেটে মরে ইসলামি আইন কি তাদের জন্য? এই দেশের মহিলা গৃহ পরিচালিকাদের ঘরের মধ্যে রেখে সৌদি পাঠাগুলো যখন তাদের ভোগ করে তখন ইসলাম কোথায় যায়? সেটি কি তখন জেনা হয় না বৈধ যৌন সঙ্গম হয়? মাথায় গোল টুপি আর কালো রঙের বেল্ট সম্বলিত গোলাকার বৃত্তে আবদ্ধ সৌদিয়ান গুলো যখন মাতাল হয় ঘরের ভেতর জেনা করে ঘরের ভেতর তখন ইসলামি আইন কি বলে? নেশা কিংবা জেনা বাইরে করুক আর ঘরে করুক ইসলামি আইন সব খানে সমান। কাজেই সৌদির বর্তমান আইন তাদের জন্য শিথিল করা। আর সেই আইন কেবল ফলায় তাদের দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ ভিনদেশী নাগরিকদের উপর।

অপরাধ কখনো সমর্থন যোগ্য নয়। আমাদের ৮ বাংলাদেশী ভাইয়েরা যেই অন্যায় করেছে সেটি ভয়ানক অপরাধ। এক মিশরীয় কে হত্যা করেছে। কিন্তু এই কোন বিচার? একজনের জন্য আট জনের মৃত্যু দণ্ড! একটি সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় কখনো এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। সৌদিদের এমন জংলি আইন গোটা বিশ্বে ইসলাম ধর্মকে মানুষ ভয়ংকর ভাবে দেখতে শুরু করে দিয়েছে। ইসলাম কখনো এমন সমর্থন করেনা। হত্যার বদলে হত্যা। তাই বলে প্রকাশ্য দিবালোকে কোরবানির গরুর মত মনে হয় আটটি গরুকে শুইয়ে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর বলে জবাই করছে! ছিঃ ছিঃ লাথি মারি সেই সভ্যতার কপালে। তামাম বিশ্ব জুড়ে যখন ফাঁসি নামক কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে সেই খানে উন্মাদ মাতালের মতন আমার ৮ জন বাঙালি ভাইকে হত্যা করা হল! ফাঁসি রহিত করা হোক এমন আইন আমরা চাইনা। কেননা এই মৃত্যু দণ্ড ব্যবস্থা না থাকলে সমাজে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাই বলে ১ জন কে হত্যার জন্য ৮ জন কেন জীবন দিল? এই কেমন আইন?
http://www.youtube.com/watch?v=12diPjOPdZo
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,

এ ক্ষেত্রে হয়তো বলা হবে আইন মেনেই সবকিছু করা হচ্ছে; কিন্তু একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমি বলতে চাই, আইন একজন মানুষকে ভুল শোধরানোর সর্বোচ্চ সুযোগ দেয়। যদি এ ধরনের শাস্তি দেওয়াটাই আইনের মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে ধরনের আইনের নৈতিকতা এবং মানবিকতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা যায়।

আর এ প্রকাশ্য শিরশ্ছেদের সমালোচনা করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন,

'একজন ব্যক্তির শিরশ্ছেদ যেভাবে করা হয়, তাতে তার মানবসত্তা ভূলুণ্ঠিত হয় এবং সে কারণেই এটি অগ্রহণযোগ্য।' তিনি মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি দেওয়া উচিত।

আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে শিরশ্ছেদ বন্ধ করতে সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি বলেছে,

সৌদি আরবের বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অনেক নিচে। সে অবস্থায় একই সঙ্গে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা গভীরভাবে অস্বস্তিকর।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আরও জানায়,

ভাষা গত সমস্যা এবং কূটনীতিক সমস্যার কারণে ৮ বাংলাদেশী আইনি সহায়তা নিতে পারেনি। চরম অপরাধীদের ও আইনি সহযোগিতা পাওয়া তাদের মানবিক অধিকার। সেইখানে কেন আমার ৮ বাঙালি ভাইয়েরা আইনি সুবিধা নিতে পারেনি?

সৌদি তার নিজস্ব শাসন ব্যবস্থায় চলে। আল কোরআনের আইন তারা মেনে চলে বুঝলাম। তবে শিরশ্ছেদ করার পর তার দেহ কেন অপরাধীদের পরিবার পরিজনদের কাছে হস্তান্তর করেনা?

কোরআনের কোথায় বলা আছে এমন আইন এর কথা? একজনের শাস্তি কেন দুই বার হতে যাবে? একবার তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে তার পরিবার পরিজনদের কাছে থেকে তার লাশটি হস্তান্তর না করে আর এক মহা পাপ তারা করছে। ইসলামি আইন ব্যবস্থা কেন নীরব এইখানে?

অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকা বিষয়ক উপ-পরিচালক হাসিবা হাদজ শাহরাবি বলেন,

সৌদি সরকারকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণ বন্ধ করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

কট্টর ইসলামী দেশ সৌদি আরবে মৃত্যু দণ্ড প্রাপ্ত আসামির আইনজীবী থাকেনা কেন?।আসামিরা আরবিতে আদালতের কার্যক্রমও বুঝতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাও তাদের জানানো হয় না। খুব কম সময়ই তারা আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পান। এই কেমন আইন? এটি কি আইন না খোদার গজব?

যেই সৌদি তার নিজের চেতনায় বিশ্বাসী। যেই সৌদি আজও বর্বরতায় বিশ্বাসী, সেই সৌদির কোন নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের বিচারে নাক গলানোর। এটি আমাদের ব্যাপার। মানব সভ্যতার এই উৎকর্ষের স্বর্ণ যুগে সৌদির এহেন কর্মকাণ্ড কোন বিবেকবান, দেশ প্রেমিক সচেতন নাগরিক প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেনা।

আসুন আমরা হিংস্র, বর্বর, জংলি সৌদির এমন কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা জানাই।