সিরিয়ায় ভন্ড মুসলিম শাসকদের সন্ত্রাসী উম্মাদনা

জাফর পাঠান
Published : 14 Jan 2013, 06:49 PM
Updated : 14 Jan 2013, 06:49 PM

যে যাই বলুক আফগানিস্তান, ইরাক ও লিবিয়ার মত করে পাশ্চাত্য এত সহজে সিরিয়ায় সফলতার স্বাদ নিতে পারবেনা।আর যদি জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে গোঁয়ারের মত পাশ্চাত্য হামলা করেই বসে তবে এই সংঘাত ছড়িয়ে পরবে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের বক্ষে।সিরিয়ার পক্ষে রাশিয়া,চীন ও প্রতিবেশী উদীয়মান বিশ্ব শক্তি ইরান এবং লেবানন, ইরাক ও মিশরের পক্ষাবলম্বন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।সিরিয়ার চলমান সহিংসতার মাধ্যমে বিশ্ববাসী আরেকবার প্রত্যক্ষ করলো মুসলিমদের স্বার্থরক্ষাকারী দাবীদার মধ্যপ্রাচ্যের লেবাসধারী তথাকথিত মুসলিম শাসকদের ভুমিকা ।সিরিয়ার বর্তমান মুসলিম জনপ্রীয় সরকারকে হটাতে পাশ্চাত্যের খ্রীষ্টান ও ইসরাইলের ইহুদীদের সাথে হাত মিলিয়েছে তারা।পাশ্চাত্যের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে এই আরবীয় স্বৈর শাসকরা।এখানে সবার মনে সহজাত প্রশ্ন জাগতে পারে –সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারকে হটালে সন্ত্রসীদের সমর্থনকারী এই মুসলিম শাসকদের কি লাভ হবে ? আর কেনইবা তারা এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে ! মুসলিমদের স্বঘোষিত শত্রু ইহুদি-খৃষ্টানদের সাথে হাত মিলিয়ে স্বজাতি মুসলিমদের হত্যায় কেন মেতে উঠেছে এই শাসকরা ? যেখানে সবাই দেখতে পাচ্ছে লাভের পুরোটাই পাশ্চাত্য ও ইসরাইল হাতাবে,এরপরও কেন এই আরবীয় নৃশংস উম্মাদনা ? এর কারন জানতে আমাদের আগে সিরিয়ার ইতিহাস ও রাজনৈতিক অবস্থানের স্বকীয়তার বিষয়ে কিছু আলোচনা না করলেই নয়।সিরিয়া এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র।৭১,৪৭৯ হাজার বর্গমাইলের ভূমিতে দুই কোটি ত্রিশ লক্ষ লোকের বাস। সিরিয়ায় মুসলিমদের মধ্যে ৭০% সুন্নি এবং ১৮% শিয়া আর ১০% কুর্দীর বসবাস।সীমান্ত লাগোয়া রাষ্ট্রগুলি হলো- ইসরাইল,লেবানন,জর্ডান,ইরাক ও তুরস্ক আর একদিকে ভুমধ্যসাগর ।ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার পর থেকে রাজনৈতিক গতিধারায় স্মরণযোগ্য নিকট অতীত হলো সিরিয়ার প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হাফিজ আল-আসাদ পাঁচ বার গনভোটে বিজয়ের মাধ্যমে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রেখে শাসন করে গেছেন।বাবার স্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার ছেলে ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদও ২০০০ সালের এক গনভোটে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে বহাল হন।সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ও কয়েকটি আরব সরকারের ব্যাপক প্রচারণা, চাপ, হস্তক্ষেপ এবং যুদ্ধংদেহী ভূমিকা সত্ত্বেও দেশটিতে আসাদ সরকার এখনও ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে আছে। এখনও সামরিক বাহিনীর প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট বাশারের প্রতি অনুগত থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।বিচ্ছিন্নভাবে দুই/একজন সটকে পড়লেও গণহারে দলত্যাগের উদাহরন নেই। বর্তমান রাষ্ট্রপতি বাশার আল আসাদ তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আসছে।ইসরাইলের এবং পাশ্চাত্যের বিরোধীতায় সব সময় সোচ্চার যেমনটি ছিলো তার পিতা হাফিজ আল-আসাদ তেমনি পুত্র বাশার আল-আসাদ।লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং গাজার হামাসের নেতৃস্থানীয় নেতাদের নিরাপদ বিচরণ ও আবাসস্থল হলো সিরিয়া।সিরিয়ার কৌশলগত ভৌগলিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারনে পাশ্চাত্য ও ইসরাইল বিভিন্ন ভাবে অত্র অঞ্চলে তাদের স্বার্থ হাসিলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।ইরানের সাথে প্রতিরক্ষা ও সামরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকায় এবং দিন দিন সামরিক দিক দিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে নিজের পায়ে দাড়িয়ে যাওয়াকে স্বার্থ ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করছে ইসরাইল ও পাশ্চাত্য।আর রাজতান্ত্রিক দেশগুলির ভয় এই শক্তিদ্বয়ের পরোক্ষ সমর্থন ও সাহসে দিন দিন প্রতিবাদী হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সেচ্ছাচারী শাসনে পিষ্ট হতে থাকা ইসলামভক্ত আমজনতা।আবার এই দ্বিশক্তির সাথে মিশর যোগ হয়ে তাদের মাথা ব্যাথার পরিমান দ্বিগুন করে দিয়েছে। এরই মধ্যে লিবিয়া,তিউনিশিয়া ও মিশরে ইসলামিক দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইরান ও সিরিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে নতুন নতুন কৌশলগত পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে।ইসলামিক দল ক্ষমতায় আসার পর মিশরে মুরসির দুরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপে এরই মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে মার্কিন প্রতিদ্বন্ধী রাশিয়া ও চীনের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলেছে।পাশাপাশি ইরানসহ পাশ্চাত্য বিরোধী মুসলিম দেশগুলির সাথে গাটছড়া বাঁধছে ।সিরিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের পরিকল্পিত অন্তর্ঘাতের বিরুদ্ধে রাশিয়া,চীন ও ইরানের পক্ষাবলম্বন করে এগুচ্ছে মিশর। সিরিয়ার পক্ষে এই শক্ত বলয়টি তৈরী হয়ে যাওয়াতে বিরুদ্ধবাদীরা সুবিধা করতে পারছেনা এবং সরাসরি হামলা করার সাহস দেখাচ্ছেনা। সিরিয়ায় হামলার বিষয়ে এই বলয়টিকে নিস্ক্রীয় রাখার জন্য জাতিসংঘকে ব্যাবহার করে বৈধ উপায়ে হামলার কয়েকটি পায়তারা চালিয়েছিলো পাশ্চাত্য,ইসরাইল এবং ক্ষমতাপাগল গৃহপালিত রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি। কিন্তু তাদের আশার গুড়ে বালি ছিটিয়ে কয়েকটি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাশিয়া ও চীন। রাশিয়া ও চীন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে "বাশার আল -আসাদকে বাদ দিয়ে সিরিয়া বিষয়ক কোন পরিকল্পনা অসম্ভব"।গত আগষ্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ায় সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার পর রাশিয়া পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে- "সিরিয়ায় বাইরের হস্তক্ষেপ মেনে নিবোনা"।মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার একমাত্র নৌঘাটি সিরিয়ার তারতুস বন্দরে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ,উভচর যুদ্ধজাহাজ ও ব্যাপক মেরিন সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়েছে রাশিয়া। ইরানও পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছে –সিরিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি থাকার কারনে সিরিয়া বহিঃশত্রু দ্বাড়া আক্রান্ত হলে ইরান সিরিয়ার পক্ষে দ্বাড়াবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সিরিয়ায় সরাসরি হামলার সাহস পাশ্চাত্য দেখাবেনা। সিরিয়া পতনে পাশ্চাত্যের স্বার্থ মূলত অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত।আর আরব অগণতান্ত্রিক সরকারগুলির স্বার্থ হলো নিজস্ব ক্ষমতাকে আঁকড়িয়ে ধরে থেকে ভোগ বিলাসে মত্ত থাকা।ভন্ড পদলেহীদের মধ্যে প্রথমে তুরস্কের (ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশ) কথা ধরা যাক-দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর হইতে কামাল আতাতুর্ক প্রবর্তিত ধর্মনিরপেক্ষ শাসন চলছিলো মুসলিম প্রধান এই দেশটিতে।ইসলামিক দলগুলি নিষিদ্ধ ছিলো এবং মারাত্বক নির্যাতন কবলিত ছিলো ইসলামিক কৃষ্টি মেনে চলা ,স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।পুরো সেনাবাহিনীকে কামাল আতাতুর্ক ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে গড়ে তুলেছিলেন এবং সেনাবাহিনীকে করে ছিলেন মার্কিন নির্ভরশীল। যার দরুন কোন সরকার ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ থেকে সামান্য সরে গেলেও সামরিক বাহিনী তা সহ্য করতোনা। তাই ১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ এবং ১৯৯৭ সালে মোট চারবার তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা বহাল রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেছে সেনাবাহিনী।

বহু ত্যাগ স্বীকারের পর বর্তমান ইসলামিক দলকে জনতা ক্ষমতায় বসায়। কিন্তু ইসলামিক লেবাসে ক্ষমতায় বসে তারা পাশ্চাত্যের স্বার্থোদ্ধারে বেতিব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।কারন তারা মনে করছে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে পাশ্চাত্যের সহায়তা প্রয়োজন। ধর্মনিরপেক্ষ সেনাবাহিনীর ক্যু থেকে বাঁচতে তারা এটা করছে। কারন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে গিয়ে এরই মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধান সহ অনেক আর্মি অফিসারকে বিচারের আওতায় এনেছে বর্তমান শাসকরা।বিগড়ে আছে সেনাবাহিনী। তাই সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রা যুক্তরাষ্ট্রকে তোয়াজ করে ও হুকুম তালিম করে ক্ষমতাকে নির্ঝঞ্জাট রাখছে বর্তমান শাসকরা। বর্তমানে সিরিয়ার সবচেয়ে ক্ষতির কারন হয়ে দ্বাড়িয়েছে তুরস্কের বর্তমান লেবাসধারী সরকার। সিরিয়া লাগোয়া তুরস্কের পুরোটা সীমান্ত পাশ্চাত্যের হাতে তুলে দিয়েছে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর জন্য।গত সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের "দি ডেইলি ষ্টার"পত্রিকা জানায় তুরস্কের ও জর্দানের সীমান্ত ব্যাবহার করে ব্রিটেনের এলিট ফোর্স এসএএস এবং এসবিএস এর প্রায় দুইশত সদস্য সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে সিরিয়ার গণবিধ্বংসী অস্ত্র করায়ত্ব করার অভিপ্সায়।তুরস্কের এই বিদ্বেষ সিরিয়াকে একটি ভিন্ন পথ ধরতে বাধ্য করেছে। কুর্দীরা তুরস্কের বিশাল অংশ এবং সিরিয়া ও ইরাকের কিছু এলাকা নিয়ে বহু পূর্ব হইতেই স্বধীন দেশের জন্য সশস্ত্র আন্দোলন করছে।তুরস্কের কুর্দী গেরিলা সংগঠন 'পিকেকে'র সাথে সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দীদের সাথে সমন্ময় আছে।এতদিন সিরিয়ান সরকার তুরস্ক লাগোয়া কুর্দী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। কিছুদিন আগে কুর্দী এলাকা থেকে নিজেদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে সিরিয়া।বাশারের লক্ষ্য হলো- সিরিয়ার কুর্দীরা এখন থেকে তুরস্কের পিকেকে গেরিলাদের সাথে সমন্ময় করে দ্বীগুণ শক্তি নিয়ে তুর্কি সরকারের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বেকায়দায় ফেলে দিবে।যা তুর্কির জন্য প্রচন্ড মাথা ব্যাথার কারন হবে।

আর আরবলীগের রাজতান্ত্রিক দেশগুলি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নিজ দেশের কোষাগার উম্মুক্ত করে দিয়েছে পাশ্চাত্যের জন্য। সিরিয়ার বিরুদ্ধে যাবতীয় মারনাস্ত্র ও রসদ কেনা এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ঝুগিয়ে আনা দাগী সন্ত্রাসীদেরকে খোরপোস দেয়ায় এই অর্থ ব্যায় করছে পদলেহী রাজতান্ত্রিক দেশগুলি। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজ হাতে গড়া আলকায়েদা ও তালেবানদেরকে এনে জড়ো করছে সিরিয়ার সীমান্তে ।সেখান থেকে উপযুক্ত প্রশিক্ষন দিয়ে ঠেলে দেয়া হচ্ছে সিরিয়ার অভ্যন্তরে।গত নভেম্বরে ইরাকের আল-নাখিল বার্তা সংস্থা খবর প্রকাশ করে যে-সৌদি আরব,কুয়েত,কাতারের সরকাররা তাদের দেশের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩,৮০০ জন সন্ত্রাসীকে ক্ষমা করে প্রশিক্ষন দিয়ে সিরিয়ায় পাঠিয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য। গত ২৪শে ফেব্রয়ারী তিউনিশিয়ায় অনুষ্ঠিত সিরিয়া বিষয়ক সাজানো এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের সাথে সাক্ষাতকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদ আল ফয়সাল বলেন-"সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠিগুলির কাছে অস্ত্র সরবরাহ করা একটি চমৎকার পরিকল্পনা"।লিবিয়ার মত সিরিয়াকে কাবু করার উদ্দেশ্যে সৌদি নেতৃত্বে আরবলীগ কয়েকটি চাতুরী পূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেছিলো –এক:সিরিয়ার অভ্যন্তরে একটি অঞ্চলকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে।দুই:সিরিয়ার কোন কোন অঞ্চলকে নিরাপদ জোন হিসাবে ঘোষনা করা এবং সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে নো-ফ্লাই জোনের আওতায় আনা। উল্লেখীত উপায়ে লিবিয়ায় ন্যাটো ঝাঁপিয়ে পরেছিলো।রাশিয়া ও চীনের বলিষ্ট প্রতিবাদে তা আলোর মুখ দেখতে পায়নি সিরিয়ায়।সৌদি আরব এতটা সিরিয়ার প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছে যে ২০১২ইং বছরে সিরিয়ার কোন নাগরিককে হজ্ব পালন করতে দেয়নি।সিরিয়ার সাধারন জনতার প্রশ্নঃ "কোন মুসলমানের হজ্বের অধিকার কেড়ে নেয়ার বৈধতা নিশ্চই আল্লাহ সৌদি সরকারকে দেয়নি"। সিরিয়ার বিরুদ্ধবাদী রাষ্ট্রগুলির আরেকটি প্রাণান্ত পরিকল্পনা হলো তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার আলেপ্পো নগরীকে লিবিয়ার বেনগাজীর মত করায়ত্ব করে সেখানে বিদ্রোহীদের দিয়ে অন্তরবর্তী সরকার গঠণ করে এবং স্বীকৃতি দিয়ে বাশার আল-আসাদকে হটানো।কিন্তু এটাও এখন অবধি আকাশকুসুম কল্পনাই হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুগত সরকারগুলির কাছে।কারন লিবিয়ায় গাদ্দাফীর জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছিলো বলে সম্ভব হয়েছে কিন্তু বাশার আল-আসাদের ক্ষেত্রে তেমনটি সম্ভব নয় জনসমর্থন পক্ষে থাকায়।তাই তারা এখন ভিন্নপথে তিনটি আশা নিয়ে এগুচ্ছে। এক: দীর্ঘদিন যাবৎ অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে সিরিয়াকে অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল করে জণগনের ধৈর্যর পতন ঘটিয়ে ক্ষমতার পটপরিবর্তন । দ্বিতীয়: অতি উৎসাহী মুসলিম কোন দেশকে দিয়ে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন। তিন: দীর্ঘদিন এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বহাল রেখে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় সর্বদলীয় একটি সরকার গঠণ।যেই সরকার মধ্যপন্থায় দেশ চালাবে।এতে ৫০% হলেও পাশ্চাত্যের স্বার্থোদ্ধার ও মুখরক্ষা উভয়ই হবে।এই স্বার্থের বাইরেও ভবিষ্যত চিন্তায় রাশিয়া ,চীন ও ইরানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো।ঘাটি করার স্থান দিয়ে এদের মাষ্টার প্লানে সহযোগিতা করছে রাজতান্ত্রিক দেশগুলি।এই শাসকদের অদূরদর্শীতায় মধ্যপ্রাচ্য রূপ নিচ্ছে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে।অতিসম্প্রতি তুরস্কে প্যাট্রিয়ট মিসাইল,জর্দানে মার্কিন ও বৃটেনের সেনাদের তৎপরতা তার নমুনাংশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়,যে শাসকরা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে বা যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশে স্থান দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলো এবং করছে তারা কেউ শেষ অবধি সফল হয়নি-হচ্ছেনা।শাসকদের কেউ অনাহুত মৃত্যুকে বরন করে নিয়েছে কলঙ্কজনক ভাবে আবার কেউ জনরোষের কবলে পড়ে বছরের পর বছর জেলের ভিতর শেষ সময় কাটিয়েছে ও কাটাচ্ছে,আবার কেউ দেশান্তরী হয়েছে। আফগানিস্তানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করে ও নিজ দেশে ঢুকিয়ে পাকিস্তান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি হাল আমলে ইয়েমেন,বাহরাইন,কুয়েত,কাতার,জর্দান এবং তুরস্কের সরকার জনরোষের কবলে পরেছে।সৌদি আরবে ও বাহরাইনে প্রতিবাদীদের নিষ্ঠুর ভাবে দমন করা হচ্ছে । তবে চিরসত্য হলো জণগনের ন্যায্য দাবিকে দাবিয়ে রেখে একটি সময় অবধি ক্ষমতাকে টেনে নেয়া যায় কিন্তু সেই সময় ফুরালে নিজকে আর তখন রক্ষা করার সময় থাকেনা।সিরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাক্তিত্বহীন এই আরব শাসকেরা কতটুকু এগুতে পারবে এবং নিজেদেরকে আর কতটা সময় রক্ষা করতে পারবে তা জানতে সময় মহোদয় মনে হয় আর বেশী সময় নেবেনা।জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের ভাষায় বলতে হয় –"সিরিয়া সংকটের কোন সামরিক সমাধান হতে পারেনা"।।

সাংবাদিক
zabpathan@gmail.com