রাশিয়ার দ্বিমুখীতায় এশিয়া বিপদাক্রান্ত

জাফর পাঠান
Published : 26 March 2012, 02:59 PM
Updated : 26 March 2012, 02:59 PM

সমগ্র বিশ্বের চোখ এখন এশিয়ার দিকে। অর্থনৈতিক ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিধানের দ্বারপ্রান্তে এশিয়া। কিন্তু অন্ধ মোহ, অবিশ্বাস ও চাটুকারিতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব বিস্তারের দ্বন্দ্ব এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা এশিয়াকে বিশ্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিস্ফোরক এলাকায় পরিণত করেছে। মার্কিন কর্ণধার বারাক ওবামার ভাষায় এশিয়া এখন বিশ্বের স্পর্শকাতর এলাকা। কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায় এশিয়া নিকট ভবিষ্যতে সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছে এবং অর্থ-খনিজ সম্পদে ও লোকবলে বিশ্ব খবরদারি ধীরে ধীরে এশিয়ার হাতে চলে আসছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চাৎপদতা, অবগামীতা ও সীমাবদ্ধতা এশিয়াকে পর্যায়ক্রমে নেতৃত্ব স্থানে অধিষ্ঠিত করছে। পাশ্চাত্য এখন এশিয়াকে নিয়ে নতুন ছক আঁকছে। আর পাশ্চাত্যের এই ছকে এশিয়ার কিছু দেশ নিজ স্বার্থান্ধে পাশ্চাত্যকে সহযোগিতা করছে এবং কিছু দেশ এশিয়ার স্বার্থহানি করে আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পাশ্চাত্যকে সহযোগিতা করছে যা প্রকারান্তরে এশিয়ার প্রতিটি দেশকে ভয়াবহ বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এশিয়ার প্রতি পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিকে প্রতিহত করা যেত যদি এশিয়ার বৃহৎ কয়েকটি দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাশিয়া দিকভ্রান্ত ভূমিকায় অবতীর্ণ। সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ন্যায় কোন লক্ষ বর্তমান রাশিয়ার নেই। পাশ্চাত্যের সামরিক জোট ন্যাটোকে প্রতিহত করতে যেমন ওয়ারশ জোট ছিলো তেমন কোন নির্দিষ্ট সংঘ এখনো তৈরী হয়নি। স্বার্থবাদী বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘ তৈরী হয়েছে যেগুলিকে রাশিয়া বিভিন্ন বিবৃতিতে পাশ্চাত্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু বাস্তবে সংঘগুলি লেজে-গোবরে গুলিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ারই কারণে। যেই 'পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদের' রাহুগ্রাস থেকে মুক্তির জন্য জোট গঠন আকাংখা, সেই জোটে যদি পাশ্চাত্য সহযোগী অন্তর্ভূক্ত থাকে তবে তা গঠন প্রারম্ভেই ব্যর্থ হতে বাধ্য। এশিয়া থেকে অনেকটা চীনের উদ্যোগে 'সাংহাই সহযোগিতা পরিষদ' (Shanghi Cooperation organisation) ও ব্রিকস (Brics) নামক দুইটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে। চীনের মস্তিষ্কপ্রসূত 'সাংহাই সহযোগিতা পরিষদ' এশিয়ার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত' একটি সহযোগিতা সংস্থা। ইউরোপ ও এশিয়ার সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ও কৌশলগতভাবে পাশ্চাত্যের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্র কাজাকিস্তান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান এবং চীন ও রাশিয়ার সমন্বয়ে এই সংস্থাটি প্রথম গঠিত হয়েছিলো। মার্কিন ঘাঁটি গেড়ে বসা উজবেকিস্তান এই সংস্থার সদস্য হয়েছে পরবর্তীতে। অবশ্য মার্কিন রাহুগ্রাস থেকে বের হয়েই এই সংস্থার সদস্য হয়েছে উজবেকিস্তান। বর্তমানে এই সংস্থায় পূর্ণ সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ''পর্যবেক্ষক সদস্য''(observer member) হিসাবে আছে- ইরান, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া ও ভারত। সংলাপ অংশীদার (Dialogue Partner) হিসাবে আছে শ্রীলংকা ও বেলারুশ। অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত এই সংস্থাটি বর্তমানে রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত সহযোগিতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য ও আদর্শিক প্রশ্নে এখনই দ্বিমত দৃশ্যমান। রাশিয়া এই সংস্থায় ভারতকে পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বৃহত্তর মূল উদ্দেশ্য ত্যাগ করে আঞ্চলিক সংকীর্ণ স্বার্থ হাসিলে রাশিয়া মাত্রাতিরিক্ত জোর দিচ্ছে। রাশিয়া অখন্ড সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ারশ জোট থাকাকালীন সময় থেকেই চীনকে সন্দেহের চোখে দেখে আসছে। রাশিয়া তার পূর্বের সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী চেতনা এখনও ধারণ করে আছে। যার কারনে গা ঘেঁষা প্রতিবেশী চীনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বয়িক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে মেনে নিতে পারছে না।যার ভিত্তিতে রাশিয়া বিশ্বের চলমান নতুন মেরুকরণের পথে নিজস্ব স্বতন্ত্র বলয় রক্ষার্থে চীন বিরোধী ভারত ও অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষার পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে রাষ্ট্রগুলিকে শক্তিশালী করে তুলছে। যা প্রকারান্তরে দ্বিমুখী পররাষ্ট্রনীতির সমতুল্য ও আত্মঘাতী। যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি, এখনো ন্যাটো জোট বহাল রেখে রাশিয়ার চতুর্পার্শ্বে সামরিক উপস্থিতি বহাল রেখেছে এবং অধুনা রাশিয়ার দোরগোড়ায় ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের জোর পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া বলয়ের বহু দেশকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। অতি সম্প্রতি রাশিয়ায় পুতিনবিরোধী আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে পাশ্চাত্য। এতকিছু স্বত্ত্বেও রাশিয়া মার্কিন কর্তৃত্ব খন্ডনকারী চীনের বিরোধীতাকারীদের সহায়তা যুগিয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সালে চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ব্রিকস নামক আরেকটি সংঘ তৈরী করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায়। কিন্তু এখানেও রাশিয়ার সহযোগিতায় ও ইচ্ছায় ভারতের অন্তর্ভূক্তি ঘটেছে। যার প্রেক্ষিতে "সার্কের" ন্যায় এই ''ব্রিকস'' দিয়ে নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল ব্যতিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বৃহত্তর উদ্দেশ্য হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ভারত কয়েক দশক পূর্ব হইতেই মার্কিন জমজ ভাই ইসরাইলের সাথে সামরিক সম্পর্ক সংগোপনে রক্ষা করে চলছে। তাদের সম্পর্ক মূলতঃ রাজনৈতিক, সামরিকসহ অভিন্ন স্বার্থ উদ্ধারে নিহিত। ভারতের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলে ইসরাইল তার প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা মূলত আমেরিকারও স্বার্থ হাসিল করে। ইসরাইলের সাথে সম্প্রতি ভারত একশত কোটি ডলারেরর অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। যার মাধ্যমে ভারত ইসরাইল থেকে পাইলট বিহীন ড্রোন বিমান, ক্ষেপনাস্ত্র ও গোয়েন্দা সিস্টেম সরঞ্জাম পাবে। ভারত এই সম্পর্কের সূত্র ধরে ইসরাইলী লবীগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘণিষ্ট হচ্ছে ও সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। গত জানুয়ারীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে যৌথভাবে রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছে। মার্কিন-ভারত সম্পর্ক এখন এমন গভীরতর হয়েছে যে, চুক্তি অনুযায়ী সময়ের বহু পূর্বেই ভারতীয় বিমান বাহিনীকে মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমান-সি-১৩০জে- এর চালান ভারতকে পাঠিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।উভয় পক্ষ থেকে ভারতের এই বহুমুখী ফায়দা লুটার স্বার্থবাদী নীতি প্রত্যক্ষ করেও রাশিয়ার ভারতমুখীতা কমছে না।

রাশিয়া-সাংহাই সহযোগিতা পরিষদের মাধ্যমে চীনকে সাথে নিয়ে চীনপন্থী দেশগুলির সাথে চাতুরীপূর্ণ পন্থায় স্ব-স্বার্থ উদ্ধার করে চলেছে। আবার ব্রিকসের মাধ্যমে ভারতকে সাথে নিয়ে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকা দেশগুলির মাধ্যমে নিজস্ব ধান্ধা আদায় করে নিচ্ছে। নিজ-স্বার্থ উদ্ধারে সময়ে পাশ্চাত্যের সাথে সমঝোতা করতেও কুণ্ঠিত হয় না রাশিয়া। যার জ্বলন্ত উদাহরণ লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান। রাশিয়ার চলমান দ্বিমুখী নীতি এশিয়াকে একটি জটিল পরিস্থিতির মুখে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতকে রাশিয়ার প্রযুক্তিগত ও সামরিক অস্ত্রবহর সহায়তার কয়েকটি সাম্প্রতিক নমুনা এখানে উল্লেখ করা হলো- ঘন ঘন রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্র পরিচালকদের সফর বিনিময়ের মধ্যে সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ রাশিয়া সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সফরে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানী ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। গত জানুয়ারীতে রাশিয়া ভারতকে ''নেরপা'' নামক একটি পারমানবিক সাবমেরিন হস্তান্তর করেছে। এটি ১০ বছরের জন্য ৯২ কোটি ডলারের বিনিময়ে লিজ দেওয়া হয়েছে। ৮ হাজার টন ওজনের এই সাবমেরিন থেকে টর্পেডো এবং পরমাণু ওয়ারহেড বাহী ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা যায়। ''বিক্রমাদিত্য'' নামক আধুনিক বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ চলতি বছরই ভারতকে হস্তান্তর করবে রাশিয়া। যেটি বর্তমানে রাশিয়ার কারখানায় আধুনিকায়নের শেষ পর্যায়ে আছে। চলতি বছর রাশিয়া ভারতের কাছে সর্বাধুনিক আরো কয়েকটি ফ্রিগেট হস্তান্তর করবে। রাশিয়ার নাম বদলে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে- তলোয়ার (তেগ), ধনুক (তারকাশ), ত্রিখন্ড (তীর), নামে। সম্প্রতি আমূর-১৬৫০ নামক আধুনিক সাবমেরিন ভারতকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারত-রাশিয়া যৌথভাবে ''ব্রামোস'' নামক আধুনিক ক্ষেপনাস্ত্র তৈরী করছে। রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের ভাষায়- ভারত ২০২০ সাল নাগাদ শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের ইচ্ছা পোষণ করেছে, আর রাশিয়া ভারতের দোরগোড়ায় উপস্হিত পরিপূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার জন্য। যা প্রকারান্তরেরে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাস্তবায়ন। ''চীন-পাকিস্তান ব্যতিত কারো সাথে শত্রুতা নয়''- এই নীতিকে ধারণ করে ভারত নিজ দেশের ৫০ শতাংশ জনগণকে দারিদ্রতার মধ্যে রেখে, ২৩ কোটি লোককে দৈনিক অভূক্ত রেখে নিজেকে সামরিক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কখনও পাশ্চাত্যকে কখনও রাশিয়াকে সমর্থন যুগিয়ে দু'হাত ভরে স্বার্থ বাগিয়ে নিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদেরকে অধিক গন্ধযুক্ত মুলো ঝুলিয়ে। যা এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে মারাত্মকভাবে উস্কে দিচ্ছে। শুধু অস্ত্র গুদামজাত করেই দারিদ্রাক্রান্ত ভারত হাত গুটিয়ে বসে নেই। আমদানী নির্ভর অস্ত্র সম্ভার নিয়ে পাশ্চাত্যের সহযোগী ও চীন বিরোধী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে নৌমহড়াও চালিয়ে যাচ্ছে উস্কানিমূলকভাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত ও ত্যাজ্য হয়ে এখন ভারতের কাঁধে ভর করে এশিয়া ও গোটা বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে চায়। তাল মিলিয়ে দুই মেরুতে পা রেখেই অগ্রসর হচ্ছে ভারত।
রাশিয়া তার দ্বিমুখীতা বহাল রেখে চলতি বছর- ''ইন্দ্র-২০১২'' নামে ভারতের সাথে একটি বড় মাপের যৌথ সামরিক মহড়া চালাবে। সম্প্রতি দিল্লিতে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই দেশ প্রতিবছর সামরিক মহড়া রুটিন মাফিক পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'' ইন্দ্র-২০১২ মহড়াটি অনুষ্ঠিত হবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের আতংক চীনের পূর্বাঞ্চলে। যা চীণকে অবশ্যই উত্তেজিত করে তুলবে এবং বিকল্প চিন্তায় বাধ্য করবে। সম্প্রতি চীনের আপত্তিতে মহড়ার স্থান পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নিজ স্বার্থের গ্যারান্টি প্রত্যাশায় রাশিয়া ''রিমপাক-২০১২'' নামক আরেকটি নৌমহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডা, কলম্বিয়া, পেরু, দক্ষীণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সাথে অংশগ্রহণ করছে ''বিষ্ট্রি'' নামক যুদ্ধজাহাজ নিয়ে। সেই মহড়ায় চীন অনুপস্থিত। মহড়াটি অনুষ্ঠিত হবে ২৯ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত। রাশিয়া যে স্বার্থপরতায় অন্ধ তার আরেকটি সাম্প্রতিক প্রমাণ হলো- রাশিয়া ও এশিয়াকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যেই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাচ্ছে তা রাশিয়া মেনে নিবে যদি রাশিয়াকে আইনগত গ্যারান্টি দেওয়া হয়। রাশিয়ার সাথে যোগান দিয়ে চলার পাশাপাশি এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সাথে ভারতের সম্পর্ক তৈরীর প্রচেষ্টা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছ। তারই অংশ হিসাবে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের জলসীমায় ''মিলান'' নামক আরেকটি নৌমহড়া অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, মালদ্বীপ, ব্রনাই ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রগুলি অংশগ্রহণ করে। ভিয়েতনাম তার নাম প্রত্যাহার করে নেয়। ৯ জানুয়ারী চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে- দক্ষীণ চীন সাগর শুধুই চীনের।এখানে কারো দাবী বরদাস্ত করা হবে না। এসত্তেও ভারত দক্ষীণ চীন সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি করে ভিয়েতনামের সঙ্গে। কিন্তু চীনের হুঁশিয়ারীতে অনুসন্ধানের পথে এখনো কেউ অগ্রসর হয়নি। ১৯ জানুয়ারী যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইন দক্ষীণ চীন সাগরে যৌথ মহড়ার ঘোষণা দেয় দিনক্ষণ উল্লেখ ব্যতীত। তবে চীনের হুঁশিয়ারীতে এখনো তারা নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করতে পারছেনা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে পাশ্চাত্যের বিরোধীতায় রাশিয়া ও চীন একাট্টা সিদ্ধান্ত নিলেও নিজ ঘর এশিয়াতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মত ঐক্যমত্যের সীদ্ধান্ত নিতে পারছে না।এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার মানসে রাশিয়া এশিয়াতে দ্বিমুখী কূটনীতি পরিচালনা করছে। একদিকে রাশিয়ার অদূরদর্শী দ্বিমুখীতায়পূর্ণ ভারতপ্রেম এশিয়াকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্যের পদলেহনকারী পররাষ্ট্রনীতি সম্পন্ন দেশ জাপান, দক্ষীণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, আফগানিস্তান, অষ্ট্রেলিয়া নামক মেরুদন্ডহীন দেশগুলি এশিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পাশ্চাত্যকে যুক্ত করে নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে এবং এশিয়ার বিশ্বনেতৃত্বের সম্ভাবনার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিচ্ছে। প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মনোবাসনা বাস্তবায়নে এশিয়ার উল্লেখিত রাষ্ট্রগুলি ক্রীড়নক হিসাবে কাজ করছে। যা রাশিয়ার পরিধান করা গন্ডারের চামড়াকে ভেদ করতে সক্ষম হচ্ছে না।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট
zabpathan@gmail.com