ক্রয় ক্ষমতা এবং ক্ষুধামন্দা

জাফর
Published : 17 August 2011, 01:28 PM
Updated : 17 August 2011, 01:28 PM

মিথ্যার আশ্রয় না নিলে ওকালতি ব্যবসা চলেনা। তাই অনেকেই এ পেশা পছন্দ করেন না। অবশ্য এ দেশের রাজনীতিতে মিথ্যা ও হিংসার বিদ্যমানতা থাকলেও এ পেশাতে কারো আগ্রহের ঘাটতি নেই। রাজনীতি এখন এ দেশে সবচেয়ে লাভজনক ও লোভনীয় পেশা। এ জন্য কোন মূলধনের প্রয়োজন হয়না, অথচ এখানে মূনাফা প্রচুর। এ পেশা অনেকের জীবনকে শক্তিময়, মূল্যময় ও ধনবান করে তোলে। তাঁরা ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে এতটাই উৎসাহিত হন যে, রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করেন না। বিগত কয়েক দশকে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন না হওয়ার এটাই মূল কারণ। দেশে এখন পাকিস্তান আমলের বাইশ পরিবারের স্থলে হাজার হাজার বাইশ পরিবার জন্ম নিয়েছে। এক শ্রেনীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা খুব আনন্দে আছে। তবে সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই মাংস ও মাছ(ইলিশ) খেতে ভুলে গেছে এবং তাদের মনে শান্তি নেই। হয়ত ঐদিন দূরে নয়, যেদিন তারা ক্ষুধা-মন্দা রোগে আক্রান্ত হবে। প্রবাদ আছে সোনা পুড়ে খাঁটি হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কতজন রাজনৈতিক নেতা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তা এখনো অনিশ্চিত।

বন্ধু চিরদিন বন্ধু থাকে না, শত্রু ও চিরদিন শত্রু থাকে না। শত্রু হোক, বন্ধু হোক, তারা সবাই এ দেশের সম্পদ। জনশ্রুতি আছে, ''শত্রু নয়, বন্ধু হতে সাবধান"। কাউকে পাকিস্তান দরদি ও কাউকে ভারত দরদি আখ্যা দিয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ করাতে কোন মঙ্গল নেই। একদিন এ দেশে রাজাকারদের অস্তিত্ব খাকবে না।তবে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে,ভূয়া মুক্তি যোদ্ধাদের আগমন এবং সরকারি চাকরিতে অনুপ্রবেশ চলতেই থাকবে। সরকার এলেই এদের সংখ্যা গাণিতিক/ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। শোনা যায় এখন এদের সংখ্যা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশী। এ সব নব্য মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাদের সাহায্যকারীরা, কেহই এ দেশের সুনাগরিক বলে বিবেচিত হতে পারেনা। এদের দ্বারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মহিমা ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের সন্তানরা সরকারি চাকরি হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এই নব্য মুক্তিযোদ্ধাদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করত শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ইতিহাসের কথা,এক সিরাজউদ্দৌলা দেশ রক্ষা করতে পারেনি। তেমনি একক কোন ব্যক্তিও বাংলা দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না। জনগন যদি ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে, তবে কোন বিভক্তি নয়, তাদের মাঝে ঐক্য স্থাপনের মাধ্যমেই দেশ গড়া সম্ভব। মহাত্মা গান্ধী জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, তথা জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে কঠোর আন্দোলনে গিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি অনশনে যেতেও দ্বীধা বোধ করেননি। তিনি কখনো্ই ক্ষমতা ও খেতাব প্রত্যাশী ছিলেন না। মুখের বুলিতে নয়, তাঁর দেশাত্মবোধ ছিল হৃদয়ে। খদ্দরের কাপড় পরে তিনি জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীগণ ভারতকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছেন। অবশ্য বাংলা দেশের চিত্র ভিন্ন। এখানে রাজনৈতিক নেতার অভাব না থাকলেও, অভাব শুধু দেশ গড়ার মতো রাজনীতিজ্ঞের। জাতির জন্য যা খুবই দুর্ভাগ্যের।