আজ আমাদের ছুটি

জাফর
Published : 21 Feb 2011, 05:01 PM
Updated : 21 Feb 2011, 05:01 PM

সরকারের কোন কোন সিদ্ধান্ত কখনো কখনো দেশের জন্য অমঙ্গলের কারণ হযে দাঁড়ায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি এর একটি উত্তম উদাহরণ। এই বর্দ্ধিত ছুটির ব্যাপারে দেশের শ্রমিক-কর্মচারি-সংগঠনের কোন দাবি ছিল বলে মনে হয়না। তবে যে কারণেই এই ছুটি বর্দ্ধিত করা হোক না কেন, এর ফলে জাতীয় ঊন্নয়ন কর্মকান্ড তথা, জাতীয় উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।এদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অফিস সমূহে কর্মরত কর্মচারিদের দেরিতে কর্মস্থলে আসা,যথাসময়ের পূর্বে কর্মস্থল ত্যাগ করা ও তাদের কর্মবিমূখতা সম্পর্কে কমবেশী সকলেরই জানা আছে। অবশ্য এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, তবে এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য যা সাধারন হিসাবের মধ্যে পড়েনা।দূঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের শ্রমিক কর্মচারিদের কাজের আউট-পুট (নির্ধারিত সময়ে সম্পাদিত কাজের তুলনা মূলক অনুপাত) উন্নত দেশ, এমনকি প্রতিবেশী দেশের চেয়েও অনেক কম।এই অবস্থায়, বর্দ্ধিত ছুটি দেশকে বছরে আরো ৫২টি কার্যদিবসের শ্রম হতে বঞ্চিত করেছে। উলে­খ্য যে,পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ, এমনকি জাপানেও সপ্তাহে দুই দিন ছুটি নেই। কাজেই আমাদের এই ঊন্নয়নশীল দেশে এছুটি বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়।

সম্প্রতি দেশের চাকুরিজীবি মহিলাদের জন্য ছয় মাস ম্যাটারনিটি ছুটি নির্ধারন করা হয়েছে।উদ্দেশ্য মহৎ হলেও, এর ফলে মহিলারা সার্বিকভাবে লাভবান হবেন এমনটি নিশ্চিত করে বলা যায়না।এক টানা ছয় মাস ছুটির কারণে কিছুটা হলেও তাদের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং পদোন্নোতি ও প্রাইভেট সেক্টরে চাকুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে। দীর্ঘ ছুটি ও অতি বিশ্রাম গর্ভবতী মহিলাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করেনা। এজন্য প্রয়োজন হালকা শ্রম, সুষম খাদ্য ও মূক্ত পরিবেশ।কাজেই বিষয়টি অন্যভাবে যেমন- নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদান, গাড়ীযোগে কর্মস্থলে আসা যাওয়ার ব্যবস্থা, প্রয়োজনে কর্মস্থলে হালকা কাজ বন্টন, কর্মস্থলে চাইল্ড কেয়ারের ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমেও সমাধান করা যেত। আবেগ তাড়িত সিদ্ধান্ত অধিকাংশ সময়েই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হয়না যার প্রমাণ এদেশে বিদ্যমান। তাই সঠিক বিচার বিশে­ষণ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই শ্রেয়। প্রসঙ্গত উলে­খ্য যে, উন্নত কোন দেশের প্রচলিত সুযোগ সুবিধা আমাদের বেলায় কতটা প্রযোজ্য সেটাও বিবেচ্য বিষয়। কোন ব্যক্তি বা দলের মনোতুষ্টি নয়, কেবলমাত্র জাতীয় স্বার্থই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার প্রয়োজন।