পর্নোগ্রাফি -আইনের বিধান ও প্রয়োগ

মোঃ জাহিদ হোসেন
Published : 7 Oct 2012, 08:18 PM
Updated : 7 Oct 2012, 08:18 PM

বর্তমানে বিভিন্ন মোবাইল ও কম্পিউটার সার্ভিসিং এর দোকানগুলোতে সার্ভিসিং এর নামে অশ্লীল নাচ, গান, চলচ্চিত্র কিংবা ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মাধ্যমে অহরহ সরবরাহ ও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণেরা এর গ্রাহকে সহজে পরিণত হচ্ছে। দোকানগুলো ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০/১০০ টাকা পর্যন্ত এসব বিক্রি করছে। অপর দিকে রাস্তায় ফুটপাতে চলার সময় দেখা যায় কিছু দোকানে বিভিন্ন বইয়ের সাথে বা আড়ালে যৌন উদ্দীপক ও রুচিহীন বইও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে উঠতি বয়সের তরুণদের মাঝে যেমন নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ হ্রাস পাচ্ছে তেমন ইভ টিজিং, যৌন হয়রানীসহ আর বিভিন্ন অপরাধের সৃষ্টি হচ্ছে।

গত ৮ মার্চ তারিখে সরকার পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন,২০১২ প্রণয়ন করে। এই আইন অনুযায়ী পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ করা এমন কি বহন,সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়,ধারণ বা প্রদর্শন করাও গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

পর্নোগ্রাফি বলতে যা বুঝায় তা হল যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোন শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই। এছাড়াও যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই,সাময়িকী,ভাস্কর্য,কল্পমূর্তি,মূর্তি, কাটুর্ন বা লিফলেটও পর্নোগ্রাফি বলে ধরা হবে।

যদি কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করে অথবা কোন নারী,পুরুষ বা শিশুকে পর্নোগ্রাফি চুক্তিতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করে অথবা কোন নারী,পুরুষ বা শিশুকে কোন প্রলোভন দেখিয়ে তার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থির চিত্র,ভিডিও চিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করে তাহলে তিনি এ ধরণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ (সাত) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদা হানি করলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোন সুবিধা আদায় বা কোন ব্যক্তির জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ধারণকৃত কোন পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করলে তিনি এ ধরণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি এ ধরণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করলে তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি বিক্রয়,ভাড়া,বিতরণ,সরবরাহ,প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যেকোন ভাবে প্রচার করলে অথবা যে কোন উদ্দেশ্যে প্রস্ত্তত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করলে অথবা কোথায় কোন পর্নোগ্রাফি পাওয়া যাবে এমন স্থান সম্পর্কে কোন প্রকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তিনি সর্বোচ্চ ২ (দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, বিতরণ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অথবা শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, সরবরাহ বা প্রদর্শন অথবা কোন শিশু পর্নোগ্রাফি বিজ্ঞাপন প্রচার করলে তিনি সর্বোচ্চ ১০ (দশ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে কেউ কোন যুক্তিসঙ্গত কারন ছাড়া এই আইনে কারো বিরদ্ধে মিথ্যা বা হয়রানিমূলক মামলা করলে বা অভিযোগ করলে তিনি সর্বোচ্চ ২(দুই) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কারণ কোন আইনই কাউকে হয়রানি করা হোক তা সমর্থন করে না। এই আইনের অধীন কোন অপরাধ করলে তা আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য।

যা হোক আইন প্রণয়ন করলেই যে সরকারের সকল দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে বা কোন অপরাধ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নয় বরং সেই আইনটি কতটুকু প্রয়োগ করা যাবে তাও ভেবে দেখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থাও বিবেচনা করে এই আইনের প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখকঃ ছাত্র ও মানবাধিকার কর্মী
আইন বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়