Don’t Stop The পরকীয়া,খুল্লাম খুল্লা,বেহায়াপনা,অশ্লীলতা,বাংলা ভাষাকে ধর্ষন; সুশীল সমাজ এবং আমরা

সত্য সন্ধানী আমি
Published : 13 April 2011, 04:07 PM
Updated : 13 April 2011, 04:07 PM


Rihanna‌'র ডোন্ট স্টপ দ্যা মিউজিক গানটা প্রথম যেদিন শুনি/দেখি সেদিনই গানটা হালকা মিউজিকে আছে কিনা দেখতে ইউটিউবে Don't Stop The Music লিখে সার্চ দেয়।আর পেয়ে যায় Jamie Cullum এর গাওয়া একই গান Don't Stop The Music..আমার আছে জল,আমি বাংলায় গান গায় এই দুটি গানের পর যে গানটি সবচাইতে বেশী বার শুনেছি সেটি হচ্ছে Jamie Cullum এর গাওয়া একই গান Don't Stop The Music..কয়েকদিন গানটি শোনা হয়না।আজ ফেসবুকের কল্যানে পাওয়া রেডিও ফূর্তির একটি বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে প্রিয় গানটি আবার শোনা হল এবং হারিয়ে গেলাম ২০০৬ এর একটি রাতে।

রাতটি ছিল বৃহস্পতিবারের প্রথম প্রহর।রাত জাগা ডিজুস জেনারেশনদের দিয়ে এফএমরেডিওগুলোর ডিজুস পোলাপাইনদের সমস্যা নিয়ে এফএমরেডিও এর জকিরা প্রতিরাতেই একেকজন মনোবিজ্ঞানী হয়ে উঠে।টাকা খরচ করে এসএমএস পাঠিয়ে প্রতিরাতেই আমার এক মামাত ভাই নিজের প্রেম বিষয়ক যত সমস্য আছে সব বিষয়ে রেডিও জকিদের কাছে পরামর্শ নেয়।এবং তা অক্ষরে অক্ষরে মানার চেষ্টা করে।সেই রাতে মামাত ভাই আমাকে ধরে বসল।বলল,ইউ একদম জোস না।সুযোগ পেলেই ভুক (বুক) অর পত্রিকা নিয়ে বসেন।আসেন আজ রাইত জাগা পোলাপাইনদের নিয়ে অনুষ্টান শুনি।কষে চড় লাগানোর ইচ্ছাটাকে চাপা দিয়ে শুনতে বসলাম অনুষ্টান।২ঘন্টা ব্যাপি অনুষ্টানের ৫ম এসএমএসটি ছিল এমন,হ্যাললো,ব্রো,আমি যাকে লাভ করতাম তার বিয়ে হয়ে গেছে।আমি এখন কি করব ব্রো? ।রেডিও জকি অনেক ভাব নিয়ে চরম হাসি দিয়ে গানের সুরে বলল,প্রেমের মরা জলে ডোবেনা।সো ডোন্ট স্টপ দ্যা ভালবাসা।গুলিস্তান কিংবা সদরঘাটের যৌন বিশেষজ্ঞ কবিরাজদের কাছে যেমন পুরুষের যৌন সমস্যার সমাধানের জন্য লতাপাতার যেমন অভাব নেই তেমনি ডিজুস জেনারেশনের পোলাপাইনের প্রেমবিষয়ক এমন কোন সমস্যা নেই যে সমস্যার সমাধান এফএম রেডিও এর জকি আরজেদের কাছে পাওয়া যাবেনা।

ইন্ডিয়ার একটি টিভি চ্যানেলের দর্শকপ্রিয় একটি অনুষ্টান ছিল লাভগুরু।সে অনুষ্টানের আদলে বাংলাদেশের এফএম রেডিওগুলোতে ভালবাসা বিষয়ক ডজন ডজন অনুষ্টান আছে।কি নেই আর জে জকিদের অনুষ্টানগুলোতে?সেক্সুয়াল উওেজনার স্টাইলে কথা বলা,বাংলার সাথে ইংরেজী মিশিয়ে অদ্ভুদ সব উচ্চারণ,তরুনদের ভালবাসা বিষয়ক অদ্ভুদ সব সমাধান দেওয়া।সব মিলিয়ে এফএম রেডিও বাংলিশ এবং ইংরেজী উচ্চারনে তরুন সমাজকে যা শিখাচ্ছে তা তরুন-তরুনীদের মধ্যে এক ধরনের বিকৃত মানসিকতার সৃষ্টি করছে ।

উপরের ছবিটি রেডিও ফূর্তির একটি বিজ্ঞাপনের ছবি।যে ছবিতে ফূর্তির নামে শারীরিক সম্পর্কে কে ইংগিত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের আকাশ মিডিয়া এখন ভারতীয় চ্যানেলগুলোর দখলে ।রগরগে পরকীয়া,মৃত মানুষ জিন্দা হয়ে ফিরে আসা,বউ-শাশুড়ি,ননদ-ভাবীর কাইজ্জা,দেবর-ভাবী,ভাসুর-ছোট ভাইয়ের বউয়ের প্রেম কাহিনী সহ গান্জার নৌকা হাওয়ায় ভাসার মত যত সব অদ্ভুদ কাহিনী সবই আছে হিন্দী চ্যানেল গুলোতে।সকালে ঘুম থেকে উঠে যে কাপড়-চোপড় পরা থাকে তা রাতে বিছানায়ও স্বামীর সাথে তা পরা থাকে হিন্দী চ্যানেলগুলোতে।হিন্দী চ্যানেলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোও১ পর্বের কাহিনীকে ৫০ পর্ব বানানো শুরু করেছে।বাংলা ভিশনে গুলশান এভিনিউ নামের যে ধারাবাহিকটি প্রচার করা হচ্ছে তা হিন্দী সিরিয়ালগুলোর চাইতেও কোন অংশে কম নয়।চ্যানেল ওয়ানেও এমন একটি সিরিয়াল ছিল ।গুলশান এভিনিউ কিংবা চ্যানেল ওয়ানের ধারাবাহিকটির সাথে বাংলাদেশের পারিবারিক সংস্কৃতির বিন্দুমাত্র মিল খুজেঁ পেতে কষ্ট হয়েছে।পরকীয়া এখন ফ্যাশন।কয়েকটা প্রেম না করলে স্মার্ট হওয়া যায়না।

হিন্দী চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের ড্রয়িংরুম,বেডরুম দখল কেড়ে নিতে বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর হিন্দী সিরিয়ালের যে নকল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তার পরিণতি বাংলাদেশের পারিবারিক ,সামাজিক সংস্কতিকে ধ্বংস করার জন্যই যথেষ্ট।

আমাদের সুশীল সমাজের জাফর ইকবাল যখন হিন্দী গানের তালে তালে ছাত্রীদের সাথে নৃত্য করে তখন আমাদের সংস্কৃতি ভারতের দখলে চলে গেল রব তুলি এবং জাফর ইকবালের পক্ষে যুক্তি দেয়।আনিসুল হক যখন থ্রি ইডিয়ট দেখার জন্য কলাম লিখে তখন আমরা কেউ এর প্রতিবাদ করি কেউ আবার আনিসুলের পক্ষে যুক্তি দেয় কিন্তু বাসার টিভি চ্যানেলের লিস্ট থেকে হিন্দী চ্যানেলগুলো বাদ দিতে পারিনা।২১ই ফেব্রুয়ারি এলে ভাষা সৈনিকদের জন্য শুদ্ধ ভাষায় গান গায়।কিন্তু এফএম রেডিও গুলোর জকিদের দেখলে কষে একটা চড় মারার সাহস রাখিনা।পরকীয়ার কারণে যখন বউ স্বামীকে ৪দিন শিকল দিয়ে বেধেঁ রাখে,মা যখন পরকীয়া প্রেমিকের সহায়তায় ঘুমন্ত শিশুকে খুন করে তখন আমরা হায় হায় করি ।