ঝরে গেল আরেকটি নক্ষত্র

আবু আলী
Published : 13 August 2012, 05:35 AM
Updated : 13 August 2012, 05:35 AM

দেশের ক্রীড়া ধারাভাষ্যের পুরোধা একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ক্রীড়া সাংবাদিক আবদুল হামিদ ভাই আমাদের মাঝে থেকে চলে গেলেন। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে। আমি একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী। কিন্তু আমার সৌভাগ্য হয়েছিল পুরোধা একুশে পদক প্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল হামিদ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার। আমাদের সময়ে আমি ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি যোগদান করি একজন অর্থনৈতিক রিপোর্টার হিসেবে। কিন্তু হামিদ ভাই স্পোর্টস এডিটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি অফিসের সবচেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। তিনি অফিসের সব সহকর্মীদের অত্যন্ত øেহের পরশ দিয়ে রাখতেন। মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করতেন। এবং উৎসাহ দিতেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন।

আমরা অন্য বিভাগে কাজ করলেও তিনি আমাদের বুকের মধ্যে আকরে ধরে রাখতেন। গতকালই দু'একটি টেলিভিশনে হামিদ ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে, হামিদ ভাইয়ের ছেলের বউয়ের মাধ্যমে জানতে পারি তিনি মারা যাননি। তখন পর্যন্ত দোয়া করছিলাম, আল্লাহ ভাইকে সুস্থ্য করে দাও। কিন্তু তিনি বেশি সময় দুনিয়ার থাকলেন না। আজ শনিবার ভোরে তিনি ইহ জগৎ ত্যাগ করে পরপারে পারি জমান। হামিদ ভাই বাংলাদেশ ব্যাংকেদীর্ঘ দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দৈনিক আমাদের সময়ের ক্রিড়া সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

হামিদ ভাই আমাদের অনেক øেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তিনি অফিসের সহকর্মীদের চা খাওয়াতেন। আমরা মজা করে হামিদ ভাইয়ের কাছ থেকে চা খেতাম। আমাদের সময়ের সবকিছুই পড়ে রইল, (তার চেয়ার, ডেক্স, কম্পিউটার) কিন্তু শুধু তিনি নেই। আজ তিনি আমাদের বুক খালি করে চলে গেলেন। দোয়া করি আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন।

উল্লেখ্য, ষাটের দশকের গোড়ার দিকে আবদুল হামিদ, আরেক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ শাহজাহানের সঙ্গে ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে বেতারে বাংলায় ফুটবল খেলার ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন। দেশে বাংলা ভাষায় ক্রিকেট খেলার প্রথম ধারাবিবরণীও প্রচারিত হয়েছিল তাঁর কণ্ঠে। ১৯৬৫ সালে ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে তিনি বাংলায় ক্রিকেটের ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন।

আজীবন মাঠের সঙ্গে সখ্য ছিল আবদুল হামিদের। ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস, ভলিবল, সব খেলাতেই ছিল তাঁর সদর্প পদচারণ। পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি ইস্ট এন্ড ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবল খেলেছেন। খেলা ছাড়ার পর তিনি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। ভলিবলের রেফারি হিসেবেও তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান ভলিবল ফেডারেশনের সঙ্গে তিনি নিজেকে জড়িয়েছিলেন। দুবার নির্বাচিত হয়েছেন এশিয়ান ভলিবল ফেডারেশনের পরিচালক।

ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক জেহাদ পত্রিকায় কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। সে সময় জেহাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এরপর দীর্ঘদিন কাজ করেন দৈনিক আজাদে। আজাদে ক্রীড়া পাতা দেখতেন তিনি। এরপর দৈনিক ইনকিলাব ও আমাদের সময়ে তিনি ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন ক্রীড়াবিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেন তিনি। সর্বশেষ চ্যানেল আইতে তাঁর উপস্থাপনায় প্রচারিত হতো 'আই স্পোর্টস' নামের একটি অনুষ্ঠান। সত্তরের দশকে 'খেলাধুলা' নামের একটি ক্রীড়াবিষয়ক সাময়িকীও সম্পাদনা করেন তিনি।

আবদুল হামিদ ভাই বাংলাদেশ ফুটবল রেফারি সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া পাক্ষিক ক্রীড়াজগত পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সোনালী অতীত কাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।