এমন ‘আফসানা’ সহজে মেলে না

আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ যুবায়ের
Published : 30 March 2018, 02:49 AM
Updated : 30 March 2018, 02:49 AM

নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা বিমানে থাকা বাংলাদেশি এবং নেপালি সহ আরো দুটি দেশের অনেক যাত্রী মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। মিডিয়ার কল্যাণে সারা বিশ্ব এ খবর জেনেছে। তাই নতুন করে এ বিষয়ে লেখার কিছু নেই। আমি লিখব অন্য প্রসঙ্গে।

দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটির পাইলট হিসেবে ছিলেন আবিদ স্যার। আমি যতটুকু জেনেছি তিনি পাইলট হিসেবে অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ ছিলেন। বিপদের হাত-পা নেই। বিপদ যে কারো উপর সওয়ার হতে পারে। এজন্য কারও যোগ্যতাকে ছোট করা আমি পছন্দ করি না।
বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনে আবিদ স্যারের প্রিয়তমা স্ত্রী আফসানা ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছেন। পরবর্তীতে ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যুর খবর শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি তিনি। শুরু হয় মাথায় রক্তক্ষরণ, করেন ব্রেন স্ট্রোক।নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সব অভিজ্ঞ ও মেধাবী চিকিৎসকদের উপেক্ষা করে প্রিয় স্বামীর ভালোবাসার টানে চলে গেলেন স্বামীর পাশের কবরে। আহ, ভালোবাসা! কি পবিত্র ভালোবাসা!

অনেকে বলবেন, আফসানাকে দুর্ঘটনার খবর যেভাবে দিতে হয় সেভাবে হয়তো দেওয়া হয়নি, তাই তার এই পরিস্থিতি হয়েছে। আরও নানান জন নানান কথা বলবেন হয়তো। কিন্তু আমার মাথায় একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা, আবিদ স্যার পাইলট হিসেবে ভালো ছিলেন- এ ধারণা করতে পেরেছি তার কাজের প্রোফাইল দেখে, কিন্তু স্বামী হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন- তা বুঝব কিভাবে? কারণ এ বিষয়টি জানতে হলে তার আপনজনদের কাছে যেতে হবে। অন্যদিকে শ্রদ্ধেয় আফসানা স্ত্রী হিসেবে কেমন ছিলেন- তা জানতে হলেও একই উপায় অনুসরণ করতে হবে। সে সুযোগ তো আমার নেই।

স্বামীর কিছু হলে অনেক স্ত্রীই কষ্ট পান। পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন এরকমটা সচরাচর দেখতে পাই না আমরা। আফসানা নিজের জীবন উৎসর্গ করে আসলে এই সমাজকে ভালোবাসা শিখিয়ে গেছেন। ভালোবাসা যে কি পবিত্র তা সবাইকে জানিয়েছেন। তারা পরস্পর পরস্পরকে যে কি পরিমাণ ভালোবাসতেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবন যে কত সুখের ছিল তা প্রমাণ করেছেন। সালাম আপনাকে প্রিয় আফসানা। আপনারা পরপারেও পাশাপাশি শান্তি ও সুখে থাকুন সে কামনাই করি।

আফসানা প্রমাণ করেছেন আবিদ স্বামী হিসেবে ছিলেন অনন্য এবং তিনিও স্ত্রী হিসেবে ছিলেন অনন্যা। প্রিয় আফসানাকে যেদিন তার স্বামীর পাশে কবর দেওয়া হয়, সেদিন থেকেই তিনটি বিষয় মাথায় ঘুর ঘুর করছে। এক. মানুষ হিসেবে আমাকে ভালো হতেই হবে, দুই. একজন পরিচ্ছন্ন ও উদার মনের পুরুষ আমাকে হতে হবে, তিন. কোনদিন আমার বিয়ে হলে স্ত্রীর কাছে এমন স্বামী হতে হবে যেন আমার স্ত্রীর কাছে আমার বিকল্প কিছুই না থাকে। আমি সংকল্প করেছি, অন্তত এ তিনটি গুণ আমার ভেতরে যেভাবেই হোক আমি বাস্তবায়ন করবই।

বর্তমানে আমাদের সমাজে অহরহ সংসার ভেঙে যাচ্ছে, পরকীয়ার ঘটনা একে অপরকে পর করে দিচ্ছে, নারীদের উপর নির্যাতন বাড়ছে, অনৈতিক সম্পর্ক মহামারী আকার ধারণ করছে- এসব সমস্যার নানান সমাধান রয়েছে। এর অন্যতম হল উপরে উল্লেখিত তিনটি গুণ। অন্তত আবিদ স্যারের মত স্বামী হওয়ার চেষ্টা যদি আমরা শুরু করি, তাহলেও সংসার ভেঙে যাওয়া, পরকীয়া ইত্যাদি সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

সবশেষে, এ সুখী দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির জন্য অনেক দোয়া থাকল। বাবা! শিশু বয়সেই বাবা-মা হারিয়েছো তুমি। হয়তো তুমি বলে এখনো টিকে আছো! তোমার শোক জীবনে তোমার উন্নতির শক্তিতে পরিণত হোক সে দোয়াই করি। শুভ কামনা থাকলো এ মহান দম্পতি পরিবারের সকলের জন্য।