যুক্তরাষ্ট্র কি মিসরে গণতন্ত্র চায়?

মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি
Published : 25 June 2012, 06:12 AM
Updated : 25 June 2012, 06:12 AM

প্রত্যেক দেশকেই নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হয়- এ কথাটা সহজেই অনুধাবনযোগ্য। একটি দেশের স্বার্থের সাথে আরেকটি দেশের স্বার্থের বিরোধ ঘটতে পারে। আজ মিসরে গণতন্ত্রের উত্থানে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হোসনী মোবারকের সাথে মার্কিনিদের সখ্যতা ছিল গভীর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মোবারকের পক্ষে। তিনি গণতন্ত্রপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে গেছেন।

বছরের পর বছর ধরে আমেরিকান রাজনীতিবিদগণ মিসরে গণতান্ত্রিকীকরণের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থনের দাবি করে আসছিলেন। অথচ এ সমর্থন সবসময়ই ছিল দ্বিধাদ্বন্দে আচ্ছন্ন। এ সমর্থনের ক্ষেত্রে মার্কিনীরা সব সময় ইসরাইলের স্বার্থই দেখতো। ইসরাইলের নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হতে পারে এমন কোন প্রচেষ্টার প্রতি তাদের সায় থাকে না। বরং থাকে প্রতিবন্ধকতা। ইসরাইলের স্বার্থে মার্কিনীরা মিসরকে ব্যবহার করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদ জানেন যে, মিসরে প্রকৃত গণতন্ত্র দেখার দুটি লক্ষ্য কখনো অর্জন করতে পারবে না। তারা এ অঞ্চলে বর্তমান অবস্থাই বজায় রাখতে চায়। অথচ তারা মিসরে গণতন্ত্রায়নের প্রতি সমর্থনের কথাই বলছেন। বিশেষ করে মূল ধারার ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে নয়া রক্ষণশীলরাই অবস্থানের পক্ষে। তারা মাঝে মধ্যে সাংঘর্ষিক বিবৃতি প্রদান করে থাকে। যা ভুয়া। এতে তাদের অবস্থানের উঠানামা বুঝা যায়।

মিসরে গণতন্ত্রায়নের অর্থ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। যার নিজস্ব স্বাধীন অবস্থান থাকবে। মিসরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে রাষ্ট্রীয় নীতিতে। এ নীতি মিসরের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে। মার্কিনি ধরনের গণতন্ত্র মিসরের জন্য যথোপযুক্ত হবে না।

মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ততদিনই সহ্য করবে যতদিন ব্রাদারহুড সরকার মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। তাছাড়া নব্য উদারনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মুক্ত বাজার অর্থনীতি, পশ্চিমা আধিপত্যবাদী প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর নীতির প্রতিও অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকতে হবে। এসব নীতিমালা মেনেই মিসর শাসন করেছেন মোবারক। তবে ২০১০ সালে ওয়াল স্ট্রীট জার্নালে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান ডানপন্থী মিসর ওয়াশিংটনের প্রতি অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। মিসরের জনগণ খাদ্য, স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে স্লোগান ধরার কিছু আগে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে এ মন্তব্য করে।

মোবারকের প্রতি মার্কিনীদের ব্যাপক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও মিসরের জনগণের প্রথম গণজাগরণেই মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হয়। জনতা বিপন্ন গণজাগরণকে সাফল্যের মনজিলে নিয়ে যাবেই। এতে করে মিসরে গণতন্ত্র আসবে। মিসর মার্কিন প্রভাবমুক্ত হবে। গণঅভ্যুত্থান-উত্তর মিসর আমেরিকার কথা মত নৃত্য করবে না, যা মোবারক করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, মিসরের আমেরিকাকে প্রয়োজন আবার আমেরিকাকেও মিসরের প্রয়োজন।

মিসরে গণতন্ত্র বিকশিত হবে। তবে এতদিন মিসরকে গণতান্ত্রিকভাবে বেড়ে উঠতে দেয়া হয়নি। মার্কিন সমর্থন অথবা সমর্থন ছাড়াই এ বিকাশ ঘটবে। গণতন্ত্র প্রাপ্তির এ স্বপ্ন পূরণ হলে মিসরের জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হবে না। সেদিন গণতান্ত্রিক মিসরকে সমীহ করবে আমেরিকা-ইসরাইল।