নারী-ভাবনা

মোনেম অপু
Published : 5 July 2012, 06:48 PM
Updated : 5 July 2012, 06:48 PM

নারীকে দেখার একটি চিরায়ত ভঙ্গি আছে। এটি কবির ভঙ্গি। সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি এবং আমরা বেশির ভাগ মানুষ কবিদের সাথে রাখি না। কবির ভঙ্গি তাই ব্যক্তিগত, অনেকখানি অসার্বজনীন। দেখার আরেকটি ভঙ্গি আমরা পাই পুঁজির কাছ থেকে। সকলেই পুঁজি নয়, কেউ কেউ পুঁজি এবং আমরা সবাই পুঁজির ঘেরে থাকি। পুঁজির ভঙ্গিটি তাই কিছুটা সার্বজনীন।

কবির চোখে নারী ফুল, নারী পাখি, নারী নদী। ফুলের রূপ আছে। পাখির গান আছে। নদীর কলতান আছে। ফুল, পাখি বা নদীর সাথে সম্পর্ক দূরের; ওরা কেউ আমার নয়। রূপ, গান ও কলতান উপভোগ করি বাইরে থেকে। শুকিয়ে গেলে ফেলে দেই। গান শেষ হলে ফিরে যাই। পারে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে উঠলে ঘরে ফিরি। বর্তমানই এখানে প্রধান। ক্ষণকালই এখানে অনুষঙ্গ। আমার সাথে ফুলও থাকে না, থাকে না পাখি বা নদী; থেকে যায় শুধু রূপরস, গীতানন্দ ও কলতানাবেশ।

পুঁজি ব্যস্ত বাজার নিয়ে, মুনাফা নিয়ে। তার যত হিসাব-কিতাব তা কনসাম্পশন আর যোগ-বিয়োগের ফল নিয়ে। আধুনিক যুগ পুঁজির যুগ। নারীর মধ্যে পুঁজি খুঁজে পেয়েছে অবলম্বন। এই অবলম্বনের চিত্র আমরা দেখি ঘরে বসে টেলিভিশনে, পত্রিকায়, প্রেক্ষাগৃহে। পথ চলতেও দেখি: পল্লবী থেকে সায়েদাবাদ, উত্তরা থেকে আজিমপুর; বিলবোর্ডের পর বিলবোর্ডের বাহারি সারি। পুঁজি! তোমার চোখে এখনও রয়ে গেছে ফাঁকি! কজন মনে রাখে কোনটি কিসের বিজ্ঞাপন। মনে থেকে যায় কেবল মনকাড়া রূপের শ্রী।

কবির মত, পুঁজির মতো ঈশ্বরেরও কি নারী-ভাবনা আছে? আমি জানি আছে। নারী শস্যক্ষেত্র। এটিই তার উপমা। তিনি কবিদের মনকে অনুসরণ করেননি, পুঁজির পথ ধরেননি। শস্যক্ষেত্র! এর মধ্যে আছে শর্তহীন আপনত্ব; অনুর্বরা হয়ে উঠলেও বলিনে ও আমার নয়। এখানে আছে চিন্তা, উদ্বেগ ও যত্নের ধারণার অনুষঙ্গ। মনে কালের বিস্তার ভবিষ্যতের গর্ভে বিলীন। মিথস্ক্রিয়া বাইরে থেকে আবেশের মত নয়, ভেতর থেকে ঘনিষ্ঠভাবে সক্রিয়। সম্পর্কের সূত্র অস্তিত্বের সাথে, ফসলের সাথে, ধারার সাথে, ভবিষ্যতের সাথে, প্রকৃতির সাথে। তুমি কি শুননি? বাতাসের সাথে ধানের শীষের খেলায় রূপের ঝংকার? শর্ষে ফুলেরা যখন হেসে উঠে তোমার চোখ তখন কোথায় হারায়? নীতি ও নন্দন এখানে একাকার।