রকমারি নির্বাসন

মোনেম অপু
Published : 5 Nov 2014, 07:57 PM
Updated : 5 Nov 2014, 07:57 PM

উঠতি বয়সের ছেলেটা প্রেমে পড়েছে। ভাসে চোখে হাসি, মুখ, চুল, আরও কত কী। মা কেঁদে বলে, সোনার ছেলে আমার, কেমন কেমন করে। বুড়ো সাইকিয়াট্রিস্ট চশমার ফাঁক দিয়ে চেয়ে চেয়ে বলে, হেহ্ হেহ্, ইনফেচুয়েশন। এক নির্বাসন। পড়ালেখা লাটে ওঠে। রোগ চড়া হলে কেউ খায় বড়ি, কেউ দেয় দড়ি। বলি, নিজের জীবনটা কি এক কানা কড়ির?

নিজের শইলডারে ঘেন্না করে এমন সাধুও আছে দুনিয়ায়। এত বড় চেতন! এত বড় ভাবের মন! এত এত জ্ঞানের ভাণ্ড! সে কিনা বাস করে হাগা-মুতা দেহের ভেতর! কী ক্ষতি হতো, যদি মানুষ কেবল তার মাথাটাই হতো। দুঃখে মাথার জট ধরা চুলে মাছিরা ভনভন করে। গাঁজায় টান দিয়ে চোখ বুজে সে নির্বাসনে যায় পাহাড়ের ডিঙ্গি ধরে। কোন সুন্দরের খোঁজে?

বাপ গেল ওপারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে। সন্তান দেখে বাপের জমি শত্রুর জমি হয়ে গেছে। বাপ কেমনে শত্রু হয় তা-ই-বা কে জানে! পাড়ার লোকে বলে, এই দ্যাখ্, কাগজে লেখা, জমির মালিক ভারত চলে গেছে। বেশী কথা বলা জাতির বিবেক যায় বিদেশ-নির্বাসনে; বাপ হারিয়ে সন্তানেরা থাকে স্বদেশ-নির্বাসনে।

দুই ভাই। থাকে সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে। পাশাপাশি ঘর, চাওয়া-চাওয়ি নেই। কে কেমন আছে খবর লয় স্কাইপে টাইপ করে। বাইরে গেলে কানে ঝুনঝুনি ঠেসে হিপহপ করে হাঁটে। দেহ চলে মাটির দুনিয়ায়, মন ভাসে সাইবার আকাশে। বুঝা মুশকিল কোনটার হলো নির্বাসন—দেহ, না মন?

বাপের অঢেল সম্পদ। মরে গেলে কন্যার বিপদ। তবে শোন্ তিন গালি, তুই হোস্‌ না কেন যতই সম্পদশালী, তোর কন্যা নিঃস্ব, নিঃস্ব, নিঃস্ব। বিপন্ন কন্যার বাপ হলে তোর সম্পদ কোন্ কামে লাগে? ক্ষেপেছিস এখন? তা না হলে দেখতে থাক্ কেয়ামত তক কন্যার নির্বাসন।

ব্যাপারী টক-টক করে, হিস-হিস করে, ঘোঁত-ঘোঁত করে, করে মার-মার। আর করে গাতায় পড়া সাপ-বেজির চইদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার। সাপ-বেজি দুই গোষ্ঠী, আরেক গোষ্ঠী বানর। বলি, তালিকার তিন নম্বর থেকে নিজেকে আড়াল ক্যান? তাহলে কি তোমার আমার ঘটে স্বেচ্ছা-নির্বাসন?

বেটি লেখে বই। মদ্দরা হাঁকে, বেটির চুলের মুঠি কই। বেটি যায় নির্বাসনে। বলি, কলমের বদলে কলম না ধরে তলোয়ার ধরিস ক্যানে। বিভুঁইয়ে ভেসে গিয়ে ব্যাটা কী যে কী কয়। মদ্দরা হুঙ্কার দিয়ে বলে, এবার আসিস্ দেশে; বুঝবি কথার মজা কারে কয়। ব্যাটার বিদেশ ভ্রমণ এখন শুধুই নির্বাসন।