দি ভালচার এন্ড দি লিটল গার্ল

মোনেম অপু
Published : 15 August 2015, 05:56 PM
Updated : 15 August 2015, 05:56 PM
এ হচ্ছে উইল টু লিভ, উইল টু ওয়েইট এবং উইল টু ডাই কাহিনী। এ হচ্ছে সভ্যতার গল্প, অর্জনের গল্প ও বিসর্জনের গল্প। তিনটে চরিত্র: একটি শিশু, একটি শকুন ও একজন ফটোগ্রাফার। এ হচ্ছে কংকালের সংগ্রামের চিত্র, শকুনের প্রজ্ঞার চিত্র আর অসহ্য ভারে ভেঙে পড়া শিল্পীর চিত্র। শিশুটির জন্য মন কাঁদে, চোখ জলে আর্দ্র হয়। শকুনের ভাবনা দেখে বিস্ময় জাগে। শকুনকে মানুষ বলে মনে হয়। আর নিজেকে মনে হয় শকুন। শিল্পীর সংবাদে বুদ্ধি কিংবক্তব্যবিমূঢ় হয়।

শিশুটি ও শকুনটির নাম জানতে পারিনি। শিল্পীর নাম কেভিন কার্টার। জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে, ১৯৬০-এ। পেশায় ফটোসাংবাদিক। আফ্রিকার এক শিশুর ছবি তুলেছিলেন ১৯৯৩-এর মার্চে। সে-মাসের ২৬ তারিখে তা প্রকাশিত হয় নিউইয়র্ক টাইমসে। ছবিটি পুলিটজার পুরস্কার পায় পরের বছর ১৯৯৪-এর এপ্রিলে।

কেভিন সুদান গিয়েছিলেন দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের ছবি তুলতে। জীবনে প্রথম নিজের চোখে দুর্ভিক্ষ দেখা। খাবারের জন্য বড়রা-ছোটরা ছুটাছুটি করছিল। কেভিন বেশ কয়েকটি ছবি তুললেন—অনেক কষ্টে। পোজ দেয়ার জন্য বাচ্চাদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখার অবসর বাবাদের হাতে খুব বেশী ছিল না। এ ছিল অকুস্থল পরিস্থিতি।

একটি ছোট্টো বাচ্চা, কেউ নেই সাথে, নিজেই হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছিল। এতই কংকাল, যে এগুতেই পারছে না—তবু বাঁচতে তো হবে। সামনেই খাবার। পৌঁছতে তো হবে। এর মধ্যে এক শকুন নেমে এলো মাটির উপর, বাচ্চাটি থেকে একটু দূরে। সে মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকলো। একটু পরেই বাচ্চাটা মারা যাবে। সে পাবে তার আজকের খাবার। কেভিন দুটোকেই একসাথে ধারণ করার জন্য সতর্ক পায়ে অবস্থান নিলেন। দশ মিটার দূর থেকে তিনি ছবিটা তুললেন।

শকুনটিকে তাড়ানোর আগে তিনি বেশ কয়েকটি শট নিয়েছিলেন। ছবিটি প্রকাশের পর তীব্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। অনেকেই উচ্চ প্রশংসা করলো, অনেকেই আবার ছবিটির এবং কেভিনের তীব্র সমালোচনা করলো। অনেক পাঠক শিশুটির পরিণতি জানার জন্য পত্রিকা অফিসে খোঁজখবর নিলো। সমালোচকেরা অভিযোগ করলো, বাচ্চাটিকে বাঁচানোর জন্য কিছু না করে একটি ছবির জন্য কেভিন তাকে ব্যবহার করেছে। সমর্থকেরা বললো, দাপ্তরিক মানা ছিল—গায়ে হাত দিলে যদি কোনো রোগ সংক্রমিত হয়; তাছাড়া প্রতিদিন লঙ্গরখানায় ঘণ্টায় এককুড়ি লোক মারা যাচ্ছিল, কেভিনের পক্ষে কার্যকরভাবে কিছু করার ছিল না।

কিন্তু সেই স্মৃতি কেভিন কোনভাবেই ভুলে যেতে, ভুলে থাকতে পারলেন না। পুরস্কার পাওয়ার কয়েক মাস যেতে না যেতেই তিনি আত্মহত্যা করলেন। তখন তার বয়স মাত্র তেত্রিশ। দিনটা ছিল ২৭ জুলাই ২০১৪।

লঙ্গরখানা থেকে শিশু, শিশু থেকে শকুন—তিনটি বিন্দু, একটি সরলরেখা। একদিকে খাবারের জন্য সচল সংগ্রাম, অন্যদিকে খাবারের জন্য নিশ্চল প্রতীক্ষা। দৃশ্যটিতে আছে অভিব্যক্তি, দর্শকের আছে আবেগ। দর্শক যখন ব্যক্তি হয়, তখন তার মন থাকে, বিবেক থাকে, থাকে মমতা। এমন দর্শকেরা মিলে যখন সমাজ হয়, জাতি হয় এবং হয় রাষ্ট্র, তখন মন, বিবেক ও মমতাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। যে ছবি একজন ঠাণ্ডা মাথার খুনিকেও শিহরিত করে, সভ্য মানুষের সমাজ সে ছবির বাস্তব রূপকে সৃষ্টি করে।

দি ভালচার এন্ড দি লিটল গার্ল:


.
সুইসাইড নোট:
I'm really, really sorry. The pain of life overrides the joy to the point that joy does not exist… depressed … without phone … money for rent … money for child support … money for debts … money!!! … I am haunted by the vivid memories of killings and corpses and anger and pain … of starving or wounded children, of trigger-happy madmen, often police, of killer executioners … I have gone to join Ken if I am that lucky.