মজুরির সাথে সম্পর্ক কার? মর্যাদা, নাকি কাজের?

মোনেম অপু
Published : 12 Oct 2015, 06:02 PM
Updated : 12 Oct 2015, 06:02 PM

প্রাপ্য বেতনের চেয়ে কম দেয়া হলে অবিচার করা হয়। জাতির বিবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দ উচ্চ বেতন-স্কেলের জন্য লড়ছেন। তাঁরা নতুন সরকারি বেতন-কাঠামোয় তাঁদের অবস্থানকে বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাঁরা সেটিকে মর্যাদার সাথেও জড়িয়ে ফেলেছেন।

আমাদের মাথায় আজও জায়গা করে রেখেছে সনাতন বৈষম্যমূলক চিন্তা-ভাবনা—অত্যন্ত বেয়াড়াভাবে। সব শ্রমেরই কি সমান মর্যাদা নয়? তা যদি না হবে তবে মানুষে মানুষে সাম্যের দাবী টেঁকে কিভাবে? সব মানুষকেই কোনো না কোনো শ্রমের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। শ্রমের মর্যাদায় যদি ফারাক হয়, তবে অনুসিদ্ধান্ত হিসেবেই শ্রমের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে মর্যাদায় ফারাক হবে। শ্রমের ভিত্তিতে মর্যাদায় ফারাক করা বৈষম্যবাদীদের বেজায় পেয়ারের কাজ। যদিও আমরা সাম্যের বুলি আওড়ে মুখ ফেনায় ভাসাতে পছন্দ করি, তবুও শ্রমের সাথে সাথে জাত-পাত-মাল-কড়ি দিয়েও মানুষে মানুষে মর্যাদায় ফারাক করেই বাস্তবে চলি ও কথা বলি।

সবাই সাধ্যমতো কাজ করবেন, এবং সবাই প্রয়োজন মতো মজুরী পাবেন—এটাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি আর না-ই-বা পারি, অন্তত লক্ষ্য হিসেবে মনে-মাথায় তো রাখতে পারি। আর যতদিন সেই আদর্শে পৌঁছতে না পারছি ততদিন অন্তত এটুকুতেই নিজেদেরকে সীমিত রাখি যে, মজুরীতে অসমতা কাজের গুণ-পরিমাণের উপরই নির্ভর করুক, তা থেকে কোনোভাবেই মর্যাদায় ফারাক না আসুক।

আমরা যারা চাকুরী করি, ব্যবসা করি, রাজনীতি করি তারা না হয় মূর্খ, স্বার্থপর, এবং ফেরোওয়ের তাবেদার হামান-কারুন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ যখন বলে বসেন, তাদেরকে অসম বেতন দিয়ে অপমানিত করা হচ্ছে, তখন তাঁরাও মানুষে মানুষে সমমর্যাদার উপর আঘাত করছেন, 'বেতনের পরিমাণের উপর মর্যাদা নির্ধারণ' বা 'পূর্বনির্ধারিত মর্যাদা অনুসারে বেতন' নীতিকে প্রতিষ্ঠা দিচ্ছেন। এতে তাঁরা সুনীতি-সুবচনের ইমাম না হয়ে, মূল্যবোধের বলিষ্ঠ রিপোজিটরি না হয়ে হামান-কারুনের পথ ধরেছেন। এরকম কথায় মর্যাদায় বৈষম্যের সনাতন ভিত্তি যে এনডোর্সড হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখার সজাগতা হারিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দকে জাতির সর্বোচ্চ বিবেক বলেই আমরা মনে করি। আমরা তাঁদেরকে হামান-কারুনের ভূমিকায় দেখতে চাই না, দেখতে চাই লুকমান হাকিমের ভূমিকায়। তাঁরা বেতন, স্কেল, মজুরীতে 'শ্রমের গুণ-পরিমাণ-বিচারে সমতা' দাবী করার মধ্যে নিজেদেরকে সীমিত রাখলেই আমরা ভাল কিছু শিখতে পারতাম। কিন্তু মর্যাদার কথা তুলে ভুল শিক্ষাকেই জারী রাখা হচ্ছে, স্থায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।