পাকিস্তানের ‘সৌর শিশু’, ডাক্তাররা বিস্ময়ে হতবাক

মোনেম অপু
Published : 12 May 2016, 07:16 PM
Updated : 12 May 2016, 07:16 PM

তিন শিশু: শোয়েব, রশিদ ও ইলিয়াস; বয়স যথাক্রমে ১৪, ৯ ও ১ বছর। তারা পাকিস্তানের এক দরিদ্র বেলুচ পরিবারের তিন সহোদর ভাই। রাজধানী কোয়েটার কাছাকাছি এক গ্রামের বাসিন্দা। দিনের বেলায় আর দুটো কিশোর বা শিশুর মতোই স্বাভাবিক। শোয়েব ও রশিদ খেলছে, হৈচৈ করছে, পড়াশোনা করছে। কিন্তু সূর্য ডোবার সাথে সাথেই তারা তিনজন একেবারে নীরব, নিথর—যেন প্রাণী নয়, উদ্ভিদ। এসময় তারা পুরোই প্যারালাইজড। হাত তুলে ছেড়ে দিলে সে হাত ধুম করে পড়ে যায়। এমন কি হাসতে পর্যন্ত পারে না। সূর্য উদয়ের সাথে সাথে আবার সব স্বাভাবিক। সূর্যের উদয়াস্তের সাথে তাদের এ অবস্থার নিত্য পরিবর্তনের কারণে লোকে শিশু তিনটির নাম দিয়েছে সৌর শিশু বা সোলার কিডস।
.


.
ডাক্তাররা বিস্ময়ে হতবাক। কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। বিশ্বে এমন অসুখের কোনো নজির আগে মেলেনি বলে দাবী ডঃ জাভেদ আকরামের। শুধু পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাই নয়, তারা কাজ করছেন পশ্চিমা ডাক্তারদের সাথেও। জাভেদের নেতৃত্বে গঠিত পাকিস্তানি টিমের সাথে আছে একটি আন্তর্জাতিক টিমও। ইতোমধ্যে ২৩২টি মেডিক্যাল টেস্টের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা যায়, যার অনেকগুলো উন্নত বিশ্বে করানো হয়েছে ও হচ্ছে। রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে ১৩টি আন্তর্জাতিক সহযোগীর কাছে। যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মেয়ো ক্লিনিক, জন হপকিন্স মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং যুক্তরাজ্যের Guys হাসপাতালও রয়েছে। একটা টিম মিয়ান কুন্দি গ্রামের বালি ও পানি পর্যন্ত পরীক্ষা করতে নেমেছে রহস্যের পর্দা ছেড়ার উদ্দেশ্যে।
.


.
কিন্তু শতাধিক পরীক্ষায়ও রহস্যের জাল এখনও ছিন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে ডঃ জাভেদ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন।
.


.
শিশুদের বাবা মুহম্মদ হাশিম বলেন যে, তার সন্তানেরা দিনের বেলায় একদম স্বাভাবিক। বড় দুটো ক্রিকেট খেলে, স্কুলে যায়, মাঠে ভেড়া-ছাগল চড়ানোয় পর্যন্ত সহায়তা করে। সূর্য থাকতে থাকতেই তারা তাদের দরকারি সব কাজ শেষ করে, সূর্যাস্তের সাথে সাথে পেয়ে বসা অসামর্থ্য শুরু হবার আগেই। তারা নিজেদেরকে এই অদ্ভুত জীবন-ধারার সাথে মানিয়ে নিয়েছে।
.


.
দিন থেকে রাতে দশার পর্যাবৃত্ত রূপান্তরের কারণে বাপ-মায়ের ধারণা হয়েছে, শিশুগুলো সূর্য থেকে শক্তি নেয়। কিন্তু ডাক্তাররা এ ধারণাকে গ্রহণ করছেন না। কারণ দিনের বেলায় সম্পূর্ণ অন্ধকার কক্ষে রাখা হলেও তারা স্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। দুনিয়া নিউজ থেকে জানা যায় যে, এ পত্রিকা সংস্থাটি শিশু তিনটির চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করেছে।