খোপ ও খোঁপা

মোনেম অপু
Published : 6 July 2016, 08:45 AM
Updated : 6 July 2016, 08:45 AM

আ-কার লাগিয়ে দিলেই কোনো কোনো বাংলা শব্দ জেন্ডারে ফেমিনিন হয়। যেমন: সরল থেকে সরলা, অপরূপ থেকে অপরূপা। তাই বলে খোপের স্ত্রীলিঙ্গ কিন্তু খোপা নয়। শব্দার্থ বিচারে বেমিলটা যতই হোক, মজার বিষয় হচ্ছে, খোপের সাথে পুরুষের মস্তিষ্কের ও খোপার সাথে নারীর মস্তিষ্কের গড়নের নাকি বেজায় মিল আছে।

খোপ শব্দটা কানে এলেই মুরগির খোপ, কইতরের খোপ থেকে শুরু করে মৌমাছিদের চাক শুদ্ধ সব মনে পড়ে যায়। মৌমাছিরা হেক্সাগোনাল খোপ করে করে ঘর তৈরি করে আর তাতে জমা করে মধু। তাদের সমাজে পুরুষেরা সব শ্রমিক বলেই হয়তো তারা মগজ গুণে—বা দোষে, যাই বলেন—খোপ তৈরি করে। শ্রমিকরা যদি নারী হতো তবে মধু জমানোর আধার হিসেবে, কে জানে, হয়তো তারা চুলের বেণী ও কুণ্ডলায়িতবেণী খোপার মতো করে কিছু তৈরি করতো।


 
সে যাই হোক, কাজের কথা হচ্ছে, পুরুষ মানুষের মস্তিষ্ক কতকগুলো খোপের সমাহার। অন্যদিকে, নারী মানুষের মস্তিষ্ক খোপার মতো কুণ্ডলায়িত একটা সমগ্র। পুরুষের খোপগুলো ছন্নছাড়া ড্যাম কেয়ারে একটা অন্যগুলোকে তেমন আমলে নেয় না। আর নারীর খোপাটির যেকোনো অংশ বাকী অংশের সাথে জড়িয়ে থাকে যত্নশীলা আবেগের সম্পর্কে।


 
রিলেশন যেন নারীর মস্তিষ্কে বুনে রাখা হয়েছে বেণী-কবরীর আদলে; তাই যত্নশীলতাই কেবল নয়, মাল্টিটাস্কিংও তার স্বাভাবিক দক্ষতা। আর পুরুষের মস্তিষ্কে খোদাই হয়ে আছে ইন্ডিপেন্ডেন্স, বাক্স আকারে; এর আরেক ফল হয়েছে এই যে, সে অন্য-সর্ব-ভোলা গভীর মনোযোগে সিঙ্গলটাস্কিংয়েই পারদর্শী। বেচারা পুরুষ! সব কিছুকে নিজের মতো করে গড়ার তালে সে কম্পিউটারকে সিঙ্গলটাস্কিং করেই শুরু করেছিল। পরে সেটাকে মাল্টিটাস্কিং করে তুললেও নিজে রয়ে গেল সিঙ্গেলটাস্কিং হয়েই।


 
খোপা নিয়ে কবির মাতামাতির মাঝেও আপনি পুরুষ মনের দোলচাল ধরে ফেলতে পারবেন। অধরা প্রিয়ার মন ভজানোর নিমিত্ত পুরুষের মুখে যতই, 'দেব খোঁপায় তারার ফুল' গীতের ফুলঝুড়ি থাকুক না কেন, নিজের খোপ-খোপ মস্তিষ্কাংশের খোপবদ্ধ চিন্তার ফলশ্রুতিতে আসমানের তারা দূরে থাক, জমিনের দু'খানা ফুলের আশাও খুব একটা থাকে না। স্বপ্নে বিভোরা ধরা প্রিয়াকে পলকেই শুনতে হয়, খোপার বাঁধনে ফেঁসে যাওয়া পুরুষ মনের নতুন গীত, 'আলগা কর গো খোঁপার বাঁধন, দিল ওহি মেরা ফাস গ্যায়ি।'

ইদানিং নিয়োজিত দপ্তরের জনৈকা বিলেতী কর্মকর্ত্রীকে যখন নারীর 'রিলেশন এন্ড কেয়ার' ও পুরুষের 'রিলেশন এন্ড প্রফিট' তত্ত্ব দুটো বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম, বলছিলাম দেয়ার ইজ এ সিগনিফিকেন্ট ডিফারেন্স বিটুইন মাসকুলিন সাইকোলজি এন্ড ফেমিনিন সাইকোলজি, নারী দিতেই যেন বেশী পছন্দ করে আর পুরুষ যেন পছন্দ করে সব তাতে শুধু নিতেই—তখন তিনি বেশ আগ্রহের সাথে ইউটিউব থেকে একটা ভিডিও খুঁজে বের করে কম্পিউটারটা এগিয়ে দিয়ে দেখতে অনুরোধ করলেন।

ভিডিওটি নিচে সেঁটে দিলাম। মোটে দু'ঘন্টার ভিডিও, কিন্তু ফজিলতে তার মূল্য সারা জীবনের সমান হলে হতেও পারে। পুরো বিষয়টা আমার কাছে নতুন। তথ্যের যথার্থতা নিয়ে আমার জ্ঞান নেই। তবে ভিডিওটি খুবই মজার। তাই শেয়ার করার লোভ সামলানো গেল না।

https://www.youtube.com/watch?v=814eR5K7KD8#t=2815.713488
 

[অভিধানে 'খোঁপা' ও 'খোপা' দুটোই দেখেছি। সুবিধার্থে আমি চন্দ্রবিন্দুহীন 'খোপা' ব্যবহার করলাম। কিন্তু নজরুলের গানের বেলায় আমার স্বাধীনতা যেহেতু নেই, সেহেতু চন্দ্রবিন্দুসহ লিখলাম।]