শীতলক্ষ্যা ও পাড়ের গাছগাছালি

মোনেম অপু
Published : 27 Dec 2016, 03:35 PM
Updated : 27 Dec 2016, 03:35 PM

পানি শুকিয়ে তলা শক্ত হলে পরে আমরা বলি, এ নদী মরে গেছে। বুড়িগঙ্গার পানি শুকোয়নি। শুকোয়নি যখন, মাটিও নরম রয়েই গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে বেঁচে আছে কি? বুড়িগঙ্গা নামে বুড়ি হলেও একসময় ছিল মৎসগর্ভা। ছিল একধরণের ডলফিনও। পাড়ের লোকেরা তাকে শুশুক বলেই ডাকতো। শুশুক তো দূরের কথা, আজ মাছেরও অস্তিত্ব নেই। বুড়ি আজ বুড়ি হয়েছে। সন্তানের অনাদরের চোটে পানি হয়েছে বিবর্ণ বিষাক্ত। গা থেকে বেরুচ্ছে যন্ত্রণাকর গন্ধ। ছবির নদীটি কিন্তু বুড়িগঙ্গার নয়। এ হচ্ছে শীতলক্ষ্যা।

ভাবলাম বউ যখন স-কন্যা কন্যার মামার বাড়ি গিয়েছেন আর আমার নসিবে পরপর তিনদিনের একটা লম্বা ছুটি, তখন নদী দেখতে গেলে মন্দ হয় না। তবে মরে যাওয়া বুড়ি দেখে কাজ কী? শীতের দিনে লক্ষ্যার কাছে গিয়েই একটু পড়ে দেখা যাক না। দেখা একটু হয়েছে। আর মন ভরিয়ে দেখলাম পাড়ের কিছু গাছ-গাছালি।
.

এককালে কবির কত যন্ত্রণাই না ছিল! দেখতে পারেননি একটি ধানের শীষে একটি শিশির বিন্দু। সেকালে কবির কত আনন্দও না ছিল! স্বচক্ষে দেখেছেন, আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। একালে যন্ত্রণা পাইনে সরাসরি। দেখা হয় না কোনোকিছুই ঈশ্বরের দেয়া চোখে সরাসরি। দেখতে পাই, দুঃখ পাই—সে শুধু মানবের তৈরি ক্যামেরার দূতিয়ালিতে। এভাবেই দেখতে হয়, মেঘকে বালিশ করে ডাবগাছও যে আকাশে হেলান দিতে জানে।
.

কবি সাক্ষী, নাদুস-নুদুস পাওয়ালা সুপ্রতিষ্ঠিত তালগাছেরা একপায়ে দাঁড়িয়ে আকাশে উঁকি মারে। সেপাইরা চিলেকোঠায় ঠাঁই নিয়ে ঠায় বসে থাকে কি না জানা হয়নি। তবে দেখতে পেয়েছি, তালপাতার সেপাই মার্কা পা নিয়ে একপায়ে দুলতে দুলতে সুপারিগাছেরা আকাশে উঁকি দিতে শিখেছে।
.

রূপের উপর রূপ। শ্রীর উপর শ্রী। তবুও বাম-নিচ কোনে এসে খটকা লাগে চোখে। ভ্রমে রজ্জু সর্পবৎ দৃষ্ট হলেও জান যায় না। তবে সর্পকে রজ্জু ভেবে বসলে রজ্জুগ্রীবাসমদশা হয়। এখানে দড়িও নেই, সাপও নেই। তবে আলো-আঁধারের ইফেক্ট ঝুলে থাকা নষ্ট চট'কে লাফ দিয়ে ডাল ধরতে চাওয়া উচ্চ অভিসারি মাছ বলে বিভ্রম তৈরি করেছে।
.

ডান থেকে বামে: ১. সবুজ হয়েও সবুজ নয়। ২. ভগ্নাঙ্গুল ভি। ৩. চিরসবুজের সান্নিধ্য কোনো নিশ্চয়তা নয়।
.

শীতলক্ষ্যা: ক্যামেরার কৌশলে ১৬০ ডিগ্রি একসাথে। কিন্তু সোজা নদীটা গেছে বেঁকে। কাছের অংশটা গেছে ফুলে।
.

এখান থেকে গিয়েছিলাম জুবায়েরের সঙ্গে। সেখানে গিয়ে দেখা হলো নিতাই বাবুর সাথে। আমরা তিনজন। নিতাই বাবু আমাদেরকে নদী দেখালেন, গাছগাছালি দেখালেন। আরও পেলাম নিতাই বাবুর তিন বন্ধুর সাহচর্য, সকলের আতিথেয়তা। দিনটা ছিল ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬, রোববার।