রাজহাঁসের ইতিহাস, পাতিহাঁসের জীবনী

মোনেম অপু
Published : 25 Sept 2011, 01:28 PM
Updated : 25 Sept 2011, 01:28 PM

ইতিহাস কথা কয়। ইতিহাসের শিক্ষা: কেহ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। ইতিহাস কাওকেই ক্ষমা করে না। তুমি আমার শত্রু, তুমি ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হইবা। তুমি আমার মিত্র, তোমার কথা ইতিহাসের গায়ে সোনার অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। ইত্যাদি কত কথা যে আমরা শুনে থাকি তার ইতিহাস কে লিখে রাখে!

এদেশে যারা ইতিহাসের উপর নারাজ, তারা ইতিহাসকে উচিৎ শিক্ষা দিতে পারতেন। ইতিহাসের নিতম্বে দু'ঘা লাগিয়ে দিলে ইতিহাস ঠিকমতো গড়ে উঠতে পারত হয়তো। ছোট বেলায় পিট্টি খেয়ে আমি কত কিছু শিখেছি – শিক্ষকের পিট্টি তো ইতিহাস হয়ে গেছে। কিন্তু কি আর করবেন বলুন। লোকে বলে এদেশে না-কি ইতিহাসকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। পলাতককে দু'ঘা লাগাবেন কী করে!

কত লোকে ইতিহাস লেখে। ইতিহাস লিখতে গিয়ে কত লোকে যে নিজের জীবনী লেখে সে খেয়াল রাখে কয়জনে। আমি পাতিহাঁস, লিখে দিলাম রাজহাঁসের ইতিহাস। লোকে আমার লেখা পড়ে হাসে – এ যে পাতিহাঁসের আত্মকথা; আমার পাতিহাঁস মনের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ। বোকা ঐতিহাসিক আমি কেবলই লোক হাসাই। লোকের হাসি বেচারা আমি দেখতেও পাইনে। পরের নামে নিজের ইতিহাস রচনায় বিভোর আমি কত কিছুই যে দেখতে চাইনে, শুনতে চাইনে। রেল লাইনের পাশে যাদের বাড়ী তারা ট্রেনের শব্দ শুনতে পায় না। এয়ারপোর্টের পাশের মানুষেরা প্লেনের শব্দ শুনতে পায় না। যা আমি দেখতে চাই না, যা আমি শুনতে চাই না, তা আমার চোখ-কানে প্রবেশ করলেও মস্তিষ্ক পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে না।

গোলা ঘরের ইতিহাসও কম বৃহৎ নয়। সেখানে কত লোকে কলা নিয়ে ব্যস্ত। ডুবে ডুবে জল খাওয়া আর গোলা ঘরে বসে বসে কলা খাওয়া অনেকের মত আমারও নিত্যদিনের ব্যবসা। কেউ এসে কি যে একটা গলা খাঁকারি দিল মাত্র। আর অমনি সব গোলা ঘরে এক রা: আমি কলা খাই না। থলের ইতিহাসটিও থলে থেকে বেড়িয়ে আসে। আমার মত ইতিহাসরূপী বেড়ালগুলো সব দল বেঁধে প্রথম রাতেই মরতে হাজির হয়, বিষ খাওয়া মাছেদের মত এক সারে ভেসে উঠে। মরার জন্য বিড়ালদের পতঙ্গরূপী সামাজিক আকাঙ্ক্ষা 'প্রথম রাতেই বিড়াল মার' রূপী বাগধারার ইতিহাস হয়ে থাকতেও পারে, বিচিত্র কী!

দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে, শুনতে শুনতে লোকে অভ্যস্ত হয়ে যায়, অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। এই অভ্যাসের ইতিহাস লিখতে বসলে হয়তো উঠার আর সুযোগ হবে না; বসে থাকাটাই শেষে অভ্যাসে পরিণত হবে। তবে তাড়া খেলে অভ্যাসে পরিবর্তন আসে; উঠে দৌড়াতে হয়। এই পরিবর্তন বা বদলের ইতিহাসটাও বিচিত্র। এখানে বদলেরও বদল হয়। আজ যা সুবিধেমত বলে গেলাম, তা অসুবিধায় পড়ে কাল বেমালুম হজম করতে হবে হয়তো। অথবা আজ যা ডান দিক দিয়ে ঘুরিয়ে খাই তা হয়তো বাম দিক দিয়ে ঘুরিয়ে খাব অন্যদিন। মানুষের কত বাসনা থাকে। ছাই রঙের বাসনা, হলুদ রঙের বাসনা, লাল রঙের বাসনা, সবুজ রঙের বাসনা! কত মানুষ মরার আগে এটা খেয়ে মরতে চায়, ওটা দেখে মরতে চায়! আহা, আমি আমার সেই দশা দেখে মরতে পারতাম যদি!