নখ ছোট রাখার ফজিলত

মোনেম অপু
Published : 12 April 2012, 04:50 AM
Updated : 12 April 2012, 04:50 AM

নিয়মিত কেটে সবসময় নখ ছোট রাখার অনেক ফজিলত। তাই আমি সময়মত নখ কাটি। ডাক্তাররা নখ ছোট রাখতে বলেন এতে পরিষ্কার থাকা যায় বলে। নখ ছোট থাকলে খাবারের সাথে ময়লা পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে, সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। তাছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিজে থেকে এমনিতেই মূল্যবান। পরিচ্ছন্নতার সাথে নান্দনিকতার সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ নখ ছোট রাখলে থাকার মধ্যে সুন্দরের একটি উপাদান যুক্ত হয়। খাবারের জন্য চিল-শকুনের মত মানুষের বড় নখের প্রয়োজন পড়ে না। তাই নখের অনাবশ্যক অংশ ছেঁটেছুটে পরিপাটি হয়ে অতি সহজেই আমি নিজেকে চিল-শকুন থেকে আলাদা করে ফেলতে পারি।

নবীও তার অনুসারীদেরকে নখ ছোট রাখার উপদেশ দিতেন। মুসলিমদের অনেকেই শুক্রবার জুম্মার নামাজে যাওয়ার আগে নখ কেটে পরিপাটি হন। তারা একেবারে যাকে বলে ধুলোয় লুণ্ঠিত হয়ে নিজেদেরকে ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করে থাকে। অর্থাৎ তারা নামাজ পড়ে। এই নামাজের জন্য প্রস্তুত হতে অজু করতে হয়। নখ বড় থাকলে অজু কিছুটা দুষ্ট হয়ে পড়ে যদি নখের ভেতর ময়লা থেকে যায়। ঈশ্বরের কাছে যাবো বড় বড় নখ নিয়ে! তাই কি হয়? তাছাড়া লাভ কী বলুন। নখের জোরে তো আর ঈশ্বরকে পাবো না। ঈশ্বর সুন্দর, তাই তাঁর সামনে সুন্দর হয়েই যেতে হয়, সুন্দর হয়েই থাকতে হয়। শয়তানের মত সেজেগুঁজে তো আর যা-ই হোক ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারি না!

নখ ছোট রাখার একটি গোপন ফজিলত আছে। জ্ঞানীরা মুখ ফুটে বলেন না বলেই এটি গোপন হয়ে আছে। আমার তো আর মুখে কুলুপ এঁটে থাকার জন্য দরকারি পরিমাণ জ্ঞান নেই। কাজেই বলতে দোষ কী? আমি সবসময় ক্রোধকে সম্বরণ করতে পারি না। ফলে যাকে শত্রু বলে মনে হয় তাকে খামচি দিয়ে বসি। পড়শিরাও এ থেকে রক্ষা পায় না। নখটা ছোট থাকলে এখানেও উপকার পাওয়া যায়। আক্রান্তের চোটটা কম লাগে। এতে আরও যে ফলটা পাওয়া যায় তা হলো, পরে জ্ঞান ফিরে আসলে, যখন ক্ষমা চাইতে যাই তখন লজ্জাটা খানিকটা কম পেলেও সেজন্য আমাকে ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয় না।

যারা বন্ধুর মঙ্গলের জন্য ভেবে ভেবে হয়রান তাদের অনেকেই মনে করে থাকতে পারেন, আমার এই নখ ছোট রাখার তত্ত্বটা আখেরে শত্রুর কাজেই লাগে। শত্রুর ভাল নিয়ে অত ভাববার মুরদ আমার কই! আমার এ তত্ত্বের পেছনে আছে আমার বন্ধুর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ফিকির। আজ না হয় শত্রুর মুখ গেল, পড়শির মুখ গেল। কিন্তু অভ্যস্ত নখের স্বভাবটা যে নর-মাংসের স্বাদ পাওয়া বাঘের স্বভাবের মত। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে বাঘ শুধু মানুষ খুঁজে আর নখ খুঁজে মুখ। কাল শত্রুর অভাবে, পড়শির অভাবে মুখ পাওয়া না গেলে আমার আজকের বন্ধুর মুখের গতি কী হবে?

নখ ছোট রাখার মধ্যে এতো ফজিলত থাকায় আমি নখ ছোট রাখি। যদিও ছোট রেখেও তার ফজিলত হাসিল করার ভাগ্য আমার কমই হয়। এটা আমার নির্বুদ্ধিতার ফল। এতে আপনার বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আপনি তো আর আমার মতো নন।

কাজেই নখ ছোট রাখুন, নিজে সুস্থ থাকুন এবং বন্ধুর ভবিষ্যতকে নিরাপদ করুন।

[যারা নখ ছোট রাখেন তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানোর জন্য দুঃখিত। তবে পড়তে পড়তে এতদূর এসে পড়ার বোকামিটা যখন করেই ফেলেছেন তখন, সবিনয় আরজ, আমার আন্তরিক ধন্যবাদটুকু আপনার সাথেই থাকুক।]