কারেন আর্মস্ট্রং

মোনেম অপু
Published : 10 May 2012, 06:31 PM
Updated : 10 May 2012, 06:31 PM

কারেন আর্মস্ট্রং আমাদের কালের একজন মৌলিক প্রতিভাসম্পন্না লেখিকা ও উদ্যমী শান্তিকর্মী। তিনি নিজেকে একজন ফ্রিল্যান্স মনোথেয়িস্ট বলতেই পছন্দ করেন। তিনি মনে করেন মমতাই ধর্মের মূল শিক্ষা এবং সুবর্ণ বিধিই ধর্মের মূল নীতি। কারেন ১৯৪৪ সালে ১৪ই নভেম্বর ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ড অঞ্চলের উরসেসটারশায়ার কাউন্টির ওয়াইল্ডমুর'য়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের পর তাঁর পিতামাতা প্রথমে ব্রোমসগ্রোভ ও পরে বার্মিংহামে বসবাস করেন।

আঠার বছর বয়সে ১৯৬২ সালে তিনি রোমান ক্যাথলিক নান হিসেবে সোসাইটি আব দি হোলি চাইল্ড জিসাস'য়ে ভর্তি হন। তিনি সেখানে সাত বছর কাটান। তারপর তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধীন সেন্ট এ্যান'স কলেজে ইংরেজী সাহিত্যের উপর পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি প্রশংসনীয় ফলাফলসহ গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তবে পরবর্তীতে তিনি কবি টেনিসনের উপর ডিফিল অর্জন করতে পারেননি এবং এখানেই তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ইতি ঘটে।

১৯৭৬ সালে তিনি ডালউইচ'য়ের একটি কলেজে ইংরেজীর শিক্ষকতা শুরু করেন। এসময়ে তিনি তাঁর নান হিসেবে কাটানো প্রথম জীবনের অভিজ্ঞতার বিবরণ লিখেন। ১৯৮২ সালে Through the Narrow Gate নামে বইটি প্রকাশিত হয়। এবছরেই তিনি লেখক ও সম্প্রচার উপস্থাপকের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।

১৯৮৪ সালে চ্যানেল ফোরের হয়ে তিনি সেন্ট পলের উপর একটি টিভি ডকুমেন্টারী তৈরির প্রকল্প নিয়ে পবিত্র ভূমি পরিভ্রমন করেন। কারেন মনে করেন, এই ভ্রমনের অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনের মোড় তৈরি করেছে ও তাঁর পরবর্তী সকল লেখায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর সবচে বেশী সাড়া জাগানো A History of God: The 4,000-Year Quest of Judaism, Christianity and Islam বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তিন একেশ্বরবাদী ঐতিহ্য ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মর্ম ও ইতিহাস। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর Jerusalem: One City, Three Faiths বইটি।

কারেন আর্মস্ট্রং বিভিন্ন প্রধান প্রধান ধর্ম, তুলামূলক ধর্ম বিশ্লেষণ, ধর্মের ইতিহাস, বিবর্তন ও প্রভাব এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের জীবন নিয়ে কুড়িটিরও উপর বই লিখেছেন। তাঁর ভাষা, প্রকাশের ভঙ্গি ও বিশ্লেষণের গভীরতা পাঠককে নিবিষ্ট করে রাখে এবং নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। ধর্ম বিষয়ে লিখনীর অঙ্গনে তাঁকে তুলনা করা চলে বিজ্ঞান নিয়ে লিখিয়ে পল ডেভিসের সাথে। তাঁর রচিত বইগুলোর একটি তালিকা (বন্ধনীর ভেতর প্রকাশের সাল সহ) নীচে দেয়া হলো।

Through the Narrow Gate (1982)
The First Christian: Saint Paul's Impact on Christianity (1983)
Beginning the World (1983)
Tongues of Fire: An Anthology of Religious and Poetic Experience (1985)
The Gospel According to Woman: Christianity's Creation of the Sex War in the West (1986)
Holy War: The Crusades and their Impact on Today's World (1988)
Muhammad: A Biography of the Prophet (1991)
The English Mystics of the Fourteenth Century (1991)
The End of Silence: Women and the Priesthood (1993)
A History of God (1993)
Jerusalem: One City, Three Faiths (1996)
In the Beginning: A New Interpretation of Genesis (1996)
Islam: A Short History (2000)
The Battle for God: Fundamentalism in Judaism, Christianity and Islam (2000)
Buddha (2001)
Faith After September 11 (2002)
The Spiral Staircase (2004)
A Short History of Myth (2005)
Muhammad: Prophet For Our Time (2006)
The Great Transformation: The Beginning of Our Religious Traditions (2006)
The Bible: A Biography (2007)
The Case for God (2009)
Twelve Steps to a Compassionate Life (2010)

কারেন ধর্মের মর্মমূলে গিয়ে উপনীত হয়েছেন এবং একে উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেছেনে অসামান্য দক্ষতায়। তাঁর মতে মমতা ধর্মীয় জীবনের প্রধানতম প্রকাশ; এটাই ঈশ্বরের নিকট নিজেকে সমর্পনের প্রমাণ। যুক্তি দিয়ে বিরোধীকে পরাজিত করার মাধ্যমে নয়, বরং নিজ জীবনের শোভা ও আলো দিয়ে বিরোধীর সামনে উপস্থাপন করতে হয় বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্বকে। তাঁর বিবেচনায় 'আমি সঠিক' একথা বলার সামর্থ্যের চেয়ে 'আমি ভাল' একথা বলার সামর্থ্যের মধ্যেই জীবনের সার্থকতার প্রকৃত অভিব্যক্তির সারবস্তু নিহিত। তাঁর লেখায় ও বক্তৃতায় আমারা পাই নিজের জীবনকে উন্নত করার উপায়, অন্যদের সাথে সুন্দর কথার ও আচরণের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ মনোভাব।

তিনি নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে তিনি মুসলিম পাবলিক এফেয়ার্স কাউন্সিলের মেডিয়া এওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্ক ওপেন সেন্টার তাঁকে সম্মাননা প্রদান করে। ২০০৫ সালে রয়েল সোসাইটি আব লিটারেচার তাঁকে ফেলোশিপ প্রদান করে। ২০০৮ সালে তিনি লাভ করেন টিইডি পুরস্কার। এখানেই তিনি পারস্পরিক আচরণে মমতার নীতিকে বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য সকলের সহায়তা কামনা করেন। এবং এর ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় মমতা সনদ। সুইডেনের ন্যাশনালেনসাইক্লোপেডিন ২০১১ সালে তাঁকে ইন্টারন্যাশনাল নলেজ এওয়ার্ডে ভূষিত করে।

***
তথ্যসূত্র:
http://www.ted.com/speakers/karen_armstrong.html
http://www.tedprize.org/karen-armstrong/
http://en.wikipedia.org/wiki/Karen_Armstrong