বড় ব্যথা পাই মনে!

আবুল কাশেম
Published : 21 August 2016, 12:01 PM
Updated : 21 August 2016, 12:01 PM

অতি সম্প্রতি ৩৫মত বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল বের হয়েছে। হাজারো মেধাবী যু্বক তাঁদের যোগ্যতায় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শীঘ্রই নিয়োজিত হবেন তাঁরা দেশ ও জনগণের সেবায়।

অভিনন্দন এঁদের সবার প্রতি!!

কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত "নিজেকে বঞ্চিত মনে করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মেধাবী ফারুক" শিরোনামে একটি খবর পড়ে মনে বড় ব্যথা পেলাম! খবরটি হয়তো অনেকেই পড়েছেন। তবুও আমার বাড়ির পাশের এই অদম্য মেধাবী যিনি প্রতিবন্ধী, জীবনের নানান প্রতিকূলতায় নিজেকে তৈরি করেছেন সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায়। কিন্তু হায় ! তাঁর প্রতিবন্ধীত্বই কি তাঁকে এভাবে বঞ্চিত করলো?? উত্তরটা জানা নেই… খবরটি আপনাদের সাথে শেয়ার না করে থাকতে পারলাম না 🙁

খবরের মূল অংশটি হুবহু তুলে না ধরলাম :

তিনি স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করলেও নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় (১৯৯৬ সালে) তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরে অদম্য সাহস আর ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানে সমস্ত প্রতিকূলতা। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে তিনি মৌখিক পরীক্ষাতেও অংশগ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েও ক্যাডার বা ননক্যাডার পদে উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। এতে নিজেকে বঞ্চিত মনে করলেও আবারও ঘুরে দাড়াতে চান তিনি ।

সূত্র : জাগো নিউজ// বালিয়াডাঙ্গী২৪.কম

শুনুন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী এলাকার অদম্য যুবক ফারুক আহম্মেদের মুখেই –

''বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর আমি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি চলতি বছরের ১৫ মার্চ। প্রস্তুত হয়ে ভাইভা বোর্ডে গিয়েছি। প্রথমে আমার বিষয়ে সব কিছু ধারাবাহিকভাবে বনর্ণা করি। বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাকে বলেন, আপনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, যদি আপনি ক্যাডার হোন আপনার কর্মস্থলে কিভাবে যাতায়াত করবেন, সমস্যা হবে কিনা, এরক নানা ধরনের প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে একজন জাহানারা ইমাম সর্ম্পকে, সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে, ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি সব কিছুই ভাল করে ব্যাখ্যা দিয়েছি। পরে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন 'বেস্ট অব লাক' ফারুক সাহেব।'

ফারুক আরও বলেন, মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে আশা করেছিলাম, আমি ক্যাডার বা নন ক্যাডার পেয়েই যাব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক গত ১৭ আগস্ট ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হয়েছে। আমি যখন আমার রোলটি ক্যাডার অথবা ননক্যাডার লিস্টে না দেখি তখন মর্মাহত ও খুবই বিচলিত হই। ফারুক বলেন, আসলে আমি ভালোই করেছি মৌখিক পরীক্ষায়। ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, কোনো সমস্যা নেই আপনি সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আমি একজন দৃষ্ট প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও বিসিএসের সকল ধাপ পার করেও ভাইবা বোর্ড থেকে এভাবে বিমুখ হয়ে গেলাম। আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলাম বলে মনে করি।

তিনি আরো বলেন, ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় আবার অংশগ্রহণ করবো। আমি আমার কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে চাই। দৃষ্টি শক্তির হারানোর পর পরিবারের উৎকণ্ঠা ও হতাশার মাঝেই শুরু হয় ফারুকের পথ চলা। ২০০১ সালে জেনেছেন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলেও পড়াশুনা করা যায়। তারপরই আশান্বিত হয়ে নতুন করে জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন তিনি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়াশোনা ব্যয়বহুল। পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল ফারুক নিজ উদ্যোগে দিনাজপুর জুবিলি স্কুল রির্সোস সেন্টারে মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর ২০০৩ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।

পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ফারুক। তারপর ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এইচএসসি পরীক্ষার পর ফারুক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি এখন দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে পড়াশুনা ও সংসার চালান। বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত ফারুকের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পেছনে স্ত্রী তাহমিনার ভূমিকাই বেশী। অন্তঃস্বত্বা অবস্থায় পরীক্ষার আগে প্রতিটি বই পড়ে শুনাতেন তিনি । স্ত্রীর অবদান প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, এই রকম বন্ধন যেন প্রতিটি মানুষের জীবনে হয়। তাহলে সমাজ অবশ্যই একদিন আলোকিত হয়ে উঠবে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় আমার স্ত্রী তাহমিনা মন খারাপ করেছেন।"