সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: পুলিশের পছন্দ রাজবাড়ির ডাকাতদল?

আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক
Published : 1 March 2012, 02:01 PM
Updated : 1 March 2012, 02:01 PM

একটা প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করতে চাই। একেক জনের মুখে একেকভাবে শুনেছি। বলছি শুনুন:

তিন দেশ নিয়ে একবার এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করলো বাংলাদেশ পুলিশ। অংশগ্রহণকারী অন্যদেশ দুটো হলো আমেরিকা ও ইংল্যান্ড।
প্রতিযোগিতার বিষয়: সুন্দরবন থেকে সাতদিনের মধ্যে সাতটি স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর হরিণ ধরে আনতে হবে।

প্রথম প্রতিযোগী আমেরিকা প্রথমদিনই সুন্দরবনে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে সাতটি হরিণ ধরে আনলো। তবে সেগুলোতে খুঁত ছিলো ব্যাপক।
দ্বিতীয় প্রতিযোগী ইংল্যান্ড সময় নিলো সাতদিন। ব্যাপক যাচাই বাছাই করে আনা সাতটি হরিণই ছিলো একদম নিখুঁত। স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর।
শেষ প্রতিযোগী বাংলাদেশ পুলিশ সাতদিন পর ধরে আনলো সাতটা ছোটোখাটো ছাগল!

প্রতিযোগিতার জুরিদের মধ্যে এতে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হলো।
এতে লজ্জিত (?) হলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ক্ষিপ্ত মন্ত্রী পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন। বিব্রত পুলিশ মহাপরিদর্শক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শান্ত করার জন্য বললেন, স্যার, ছাগলগুলোকে রিমান্ডে নিলেই এরা স্বীকার করবে — আমি হরিণ, আমি হরিণ, আমি হরিণ।

একটু দম নিচ্ছি! এবার চলে যাচ্ছি প্রসঙ্গে।

সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের অনেক দিন পেরিয়েছে। পুলিশের বদৌলতে ইতিমধ্যেই সেলিব্রেটিতে (!) পরিণত হয়েছেন জজ মিয়া। সাগর-রুনির হত্যাকান্ডের পর নতুন জজ মিয়ার খোঁজে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা চষে বেড়িয়েছে পুলিশ। ধরাও হয়েছিলো পাঁচজন তালিকাভুক্ত ডাকাতকে। আর "হায়ার" করা হয়েছিলো জামিন পাওয়া একজন ডাকাতকে, যাকে দিয়েই সাগর-রুনির ভাড়া বাসার রান্নাঘরের এক ফুট আট ইঞ্চি ফোকর দিয়ে ডাকাতি সাজানোর "মক" মহড়া দিয়েছিলো ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ইতিমধ্যে সবাই তা জেনেছেন।

তালিকাভুক্ত এই ডাকাতের নেটওয়ার্ককে ডিবি পুলিশ বলছে "রাজবাড়ি আন্ত:জেলা ডাকাতদল"। ঢাকায় এর আগে যতগুলো বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সব ঘটনায় এই নেটওয়ার্ক এর জড়িত থাকার দাবি করেছে পুলিশ। (অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ বলেছে, সাগর-রুনি মামলায় গ্রেফতার করা হয়নি তাদের)

সেই ছাগলের হরিণ বানানোর মতোই!

সাগর-রুন হত্যাকান্ডের তদন্তেও জজমিয়ার মতো ঘৃণ্য সে নাটক বানানোর অপতৎপরতার খবর এখন মুখে মুখে। দেশের মানুষ শংকিত এমন অপতৎপরতার (সত্য হলে) খবরে!

তবে, জজ মিয়ার মতো রাজবাড়ির ডাকাতদল দিয়ে ছাগলের হরিণ বানানোর চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ বলেই মনে হচ্ছে।

কিন্তু ভয় একটু থেকেই যায়! আর তা হলো, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না কেউ। একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার অভিযোগে পুলিশের সাবেক আইজিসহ অনেক বড় কর্মকর্তা এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

রাজনীতিবিদদেরও একই অবস্থা! ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরের কয়েদীদের পরিচালিত বেকারীর পাশেই ভিআইপি হাজতীদের জন্য করা "রুপসা" নামের ভবনটিতে যেসব রাজনৈতিক নেতা বন্দি ছিলেন তাদের অনেকের কথাবার্তায় মনে হয় তারা সবকিছু ভুলে গেছেন!‍