অনুসন্ধান: এমএলএম ব্যবসা পদ্ধতি ও ফেঁপে উঠা ডেসটিনির গল্প

আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক
Published : 8 April 2012, 10:18 AM
Updated : 8 April 2012, 10:18 AM

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) মার্কেটিং পদ্ধতিকে একটি অপ্রচলিত বাজারজাতকরণ পদ্ধতি বলা চলে। বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যসহ ব্যবসায়িক জগতে এ্যাপল, মাইক্রোসফট, ওয়ালমার্ট, টাটা, টয়োটা, স্যামসাং প্রভৃতি কোম্পানিগুলো প্রচলিত বাজারজাত পদ্ধতি অনুসরণ করে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রথম যুগে মানষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি, খাদ্য প্রভৃতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যর ক্রয়-বিক্রয়ে প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও ক্রেতার নিজস্ব প্রয়োজনে বিক্রেতাকে খুঁজে বের করার মাধ্যমে বাজার পদ্ধতি সংগঠিত হত। সে সময়ে খাদ্য পুষ্টির পরিপূরক বিকল্প খাদ্য উপাদান, প্রসাধনী, ওজন বাড়ানো বা কমানো দ্রব্যাদি প্রভৃতি অপ্রচলিত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য দ্রব্যের গুণাগুণ, ব্যবহারের লাভ-ক্ষতি বেশী বেশী করে ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তৎকালীন সংবাদপত্র, টিভি মিডিয়া, বিজ্ঞাপনী মাধ্যম, বিল বোর্ড-পোস্টারের উদ্ভাবনী অক্ষমতার কারণে দ্রব্যের গুণাগুণ প্রচারের বিকল্প পদ্ধতিসহ বাজারজাতকরণ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা সামনে এসে দাঁড়ায়। সে সময়ে দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলে সবধরণের প্রচার প্রচারণা পৌঁছাবার ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে মানুষের মুখে প্রচারের মাধ্যমে বাজারজাত করণের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়। যেখানে কিছু ব্যক্তি কমিশনের বিনিময়ে দ্রব্যের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও গুণাগুণ মুখে মুখে তার নিকটজন ও পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করে। দ্রব্যটি কিনতে তাকে নানাভাবে আকর্ষণ করে দ্রব্যটি ক্রেতার কাছে বিক্রয় করবে। এ ধরণের মার্কেটিং পদ্ধতিকে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতি বলতো। কালক্রমে এ মার্কেটিং পদ্ধতির আরো নামকরণ হতে থাকে, যেমন ডাউনলাইন মার্কেটিং, ডিরেক্ট সেল মার্কেটিং, সেলুলার মার্কেটিং প্রভৃতি। সেই সময়কালীন অপ্রচলিত দ্রব্য বাজারজাতকরণ কোম্পানিরা তাদের দ্রব্য বাজারজাতের প্রয়োজনে ক্রেতা তথা ডিস্ট্রিবিউটর বা বিক্রেতা তথা জনসাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য পিরামিড পদ্ধতি, এরোপ্লেইন গেম পদ্ধতি, ওয়ান টু ওয়ান পদ্ধতি, ডোর টু ডোর পদ্ধতি, অর্ডার এ্যান্ড ডেলিভারি পদ্ধতি প্রভৃতি পদ্ধতির প্রচলন করে।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) এর আভিধানিক সংজ্ঞা ঃ

Business Dictionary অনুযায়ী এমএলএম বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বলতে সেই মার্কেটিং পদ্ধতিকে বুঝাবে যেখানে কোন কোম্পানীর দ্রব্য বা সেবার কোন স্বাধীন প্রতিনিধি সরাসরি নিজে বিক্রয় করবে এবং সে নিজেই তার দল তৈরি করে প্রশিক্ষণের মাধামে অন্যান্য স¦াধীন বিক্রয় প্রতিনিধিদের দলভুক্ত করার মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধির ব্যব¯হা করলে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কে ডাউন লাইন মার্কেটিং বা সেলুলার মার্কেটিং বা ডিরেক্ট সেল মার্কেটিং ও বলে।

কিন্তু মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ ডঃ জন এমএল টেয়লর ৪০০ বেশী এমএলএম কোম্পানী ও হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতার উপর ১৫ বছরের ধারাক্রম গবেষণা ও পর্যালোচনা করে বলেন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা পিরামিড পদ্ধতি বা এরোপ্লেইন গেম সেলিং পদ্ধতি বা ডাউন লাইন মার্কেটিং পদ্ধতি হতে ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতিকে সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের মার্কেটিং পদ্ধতি বলেছেন। ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতিতে যেমন অর্ডার এন্ড রিসিভ পদ্ধতি অনুযায়ী কোম্পানিকে ফোন করে বা ই-মেইল করে দ্রব্যর অর্ডার দিয়ে ঘরে বসে দ্রব্যটি পাওয়া যায়। ডোর টু ডোর পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট দ্রব্য নিয়ে মানুষের কাছে সরাসরি যেয়ে দ্রব্যের গুনাগুন বর্ননা করে বিক্রয় প্রতিনিধি ডোর টু ডোর দ্রব্য বিক্রয় করে। টেলিমার্কেটিং পদ্ধতিতে টেলিফোনে ক্রেতাকে দ্রব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরন দিয়ে আকৃষ্ট করে বিক্রয় করা হয়। এ সকল মার্কেটিং পদ্ধতি আইনগতভাবে স¦ীকৃত। রাষ্ট্র বা জনগন কারো এ ধরনের ব্যবসা নিয়ে কোন অভিযোগ থাকেনা। কিন্তু পিরামিড পদ্ধতি বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা ডাউন লাইন মার্কেটিং বা চেইন মার্কেটিং এ শেষের ক্রেতারা শূণ্য হাতে ফিরে বলে রাষ্ট্র ও জনগণের এ ধরণের মার্কেটিং নিয়ে এত আপত্তি।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর বাজারজাতকরনের পদ্ধতি সমুহঃ

(১) পিরামিড পদ্ধতিঃ

০১ জন ব্যাক্তি দুই জন ক্রেতা খুজে বের করবে, ঐ জন প্রত্যেকে আবার নুন্যতম দুই জন ক্রেতা খুজবে, এভাবে ১-২-৪-১৬ বাড়তে থাকবে। সর্বশেষে এই বাড়তির হিসাবটি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে আটকে যাবে যখন সংখ্যাটি পৃথিবীর সর্বমোট জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। যা প্রকৃত অর্থে কখনই সম্ভব নয়। এর অর্থ শেষের দিকের ব্যক্তিরা অবধারিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) মার্কেটিং দ্বারা প্রতারিত হবে। কেননা তারা আর নতুন ক্রেতা খুজে পাবে না।

(২) ৮ বল পদ্ধতি বা এয়ার প্লেইন গেম পদ্ধতিঃ

এখানে প্রত্যেক ক্রেতা দুই জন করে ক্রেতাকে খুজে বের করবে। এভাবে চলতে চলতে একটি নিদিষ্ট সীমায় গিয়ে শেষ হবে। এটি আসলে ঘুরে ফিরে পিরামিড পদ্ধতির দিকেই যাবে।

একে এয়ারপ্লেইন গেম (পাইলট- কোপাইলট-ক্র-প্যাসেঞ্জার) পদ্ধতিও বলা হয়। এই পদ্ধতির প্রথম ধাপের এরোপ্লেনের পাইলট, দ্বিতীয় ধাপের দুই জন ব্যক্তিকে কো-পাইলট, তৃতীয় ধাপের ক্রু ও শেষ ধাপের ব্যক্তিদের প্যাসেঞ্জার বলা হয়। এ পদ্ধতিতে শেষ পর্যায়ের ৮ জনের টাকা (ধরি ১০০০ করে) ৮০০০ টাকা উপহার বা লাভ হিসেবে শীর্ষে অব¯হানরত ১ম জন বা পাইলট পাবে। এভাবে পদ্ধতি এগুতে থাকবে। মুলতঃ ঘুরে ফিরে এটাও পিরামিড পদ্ধতির কাছাকাছি, পিরামিড পদ্ধতিতে বৃদ্ধি ঘটে জ্যামিতিক হারে (১+২+৪+৮=১৫) এভাবে আর ৮ বল পদ্ধতি বা এরোপ্লেন গেম পদ্ধতি বৃদ্ধি ঘটে গানিতিক হারে (১+২+৩+৪+৫=১৫) কিন্তু শুধুমাত্র বাড়ার গতি একটু শ্লথ।

(৩) ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিঃ

এটিও পিরামিড পদ্ধতির মত প্রতারনা মুলক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতেও সার্কেল জ্যামিতিক হারেও বাড়তে থাকে। এ পদ্ধতিতে একটি সুনির্দিষ্ট অপেক্ষমান তালিকা অনুযায়ী মার্কেটিং এগুতে থাকে। এ পদ্ধতিতে লাইনের শীর্ষের প্রথম জন ভাল ভাল দ্রব্য ক্রয় করতে পারে যেমন-টেলিভিশন, খেলনা, ডিজিটাল বই ইত্যাদি। যখন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক নতুন সদস্যকে রিক্রুট করা হবে ধরা যাক মোট ১০ জনকে চেইন আনতে পারলে শীর্ষ জন লাইন থেকে বের হতে পারবে। যদি লাইনের শেষের রিক্রুটেড সদস্যদের অধিক মুল্যে নিম্নমানের দ্রব্য বিক্রিয় করিয়ে দিতে পারলে।

(৪) ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতিঃ

ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতির মধ্যে নিম্নের পদ্ধতিগুলি সব থেকে জনপ্রিয় এবং বিশ্বের বিখ্যাত এমএলএম কোম্পানীগুলি তাদের বাজারজাতকরন পদ্ধতি হিসেব প্রয়োগ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

(ক) ওয়ান টু ওয়ান ঃ
এক্ষেত্রে ক্রেতা কোম্পানী থেকে কোন না কোন দ্রব্য কিনে সন্তুষ্ট হবে। অতঃপর যখন সুযোগ পাবে অন্যের কাছে ঐ দ্রব্যর গুনাগুন বর্ণনা করে বিক্রয় করার মাধ্যমে লাভবান হবে। এই পদ্ধতিতে ক্রেতা নিজেই ডিষ্ট্রিবিউটর। এখানে কোন ডাউন লাইন বিক্রয় কার্যক্রম থাকেনা। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা- ডিষ্ট্রিবিউটির আরো ডিষ্ট্রিবিউটির নিয়োগ দিয়ে বাজার সম্প্রসারন করতে পারে।

(খ) ই-মেইলে/টেলিফোনে অর্ডার ও হোম ডেলিভারীঃ
এ ক্ষেত্রে কোম্পানী কোন শো রুম বা আউট লেটের খরচ বহন করে না। ক্রেতা সরাসরি ই-মেইল বা টেলিফোনে কোম্পানীকে দ্রব্যটি কেনার জন্য অর্ডার দেয় আর কোম্পানীর সেলসম্যান দ্রব্যটি ডেলিভারি দেয়। বিজ্ঞাপন, শো রুম ও আউট লেটের খরচ লাভ আকারে সেলসম্যান/ডিষ্ট্রিবিউটরকে প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা- ডিষ্ট্রিবিউটির আরো ডিষ্ট্রিবিউটির নিয়োগ দিয়ে বাজার সম্প্রসারন করতে পারে।

(গ) ডোর টু ডোর মার্কেটিংঃ
এই পদ্ধতিতে কোম্পানী দ্রব্যর প্রচারে কোন খরচ করে না, কোন শো রুম বা আউট লেট খরচ বহন করে না। এমনকি পাইকারী বা খুচরা ব্যবসায়ীকেও লভ্যাংশ শেয়ার করে না। বিক্রয় প্রতিনিধি নিজেই সরাসরি ক্রেতার দরজায় চলে যাবে, দ্রব্যের গুনাগুন বর্ননা করে ক্রেতাকে মুগ্ধ করে ওখানেই বিক্রয় করে চলে আসবে। লভ্যাংশ বিক্রয়ের প্রতিনিধি/ডিষ্ট্রিবিউটর নিজেই পাবে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা- ডিষ্ট্রিবিউটির আরো ডিষ্ট্রিবিউটির নিয়োগ দিয়ে বাজার সম্প্রসারন করতে পারে।

(ঘ) টেলি মার্কেটিংঃ
এ পদ্ধতিতে কোম্পানী বিক্রয় প্রতিনিধি/ডিষ্ট্রিবিউটর নিয়োগ দেয়। তারা ক্রেতার ফোন ন¤¦রে ফোন করে দ্রব্যর গুনাগুন বর্ননা করে ক্রেতাকে মুগ্ধ করে বিক্রয় প্রতিনিধি নিজে গিয়ে হোম ডেলিভারি দিয়ে আসে। এক্ষেত্রেও কোম্পানী বিজ্ঞাপনের খরচ, শো রুম, আউট লেট, পরিচালনা খরচ, পাইকারী-খুচরা বিক্রেতা লভ্যাংশ বেচে যাওয়া অংশ বিক্রয় প্রতিনিধি বা ডিষ্ট্রিবিউটরকে ভাগ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা- ডিষ্ট্রিবিউটির আরো ডিষ্ট্রিবিউটির নিয়োগ দিয়ে বাজার সম্প্রসারন করতে পারে।

ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড কোম্পানীর অনুসরনীয় মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতিঃ

ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড কোম্পানী দাবি করে তাদের এমএলএম পদ্ধতি হল সার্কেল বা বৃত্ত পদ্ধতি, যেখানে একজন তার পাশের জনকে বিক্রয় করবে একটি পন্য, সে আবার তার পাশের জনকে বিক্রয় করবে, এভাবে এক সময় প্রথম জনও ঐ বৃত্তের সর্বশেষ জনের কাছ থেকে দ্রব্য কিনবে। কিন্তু অত্যন্ত বিস¥য়ের বিষয় সমগ্র পৃথিবীতে যে ক'টি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানী বিদ্যমান তারা কেউ এ ধরনের কোন পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করে না বা এমন কোন পদ্ধতির নামও তাদের জানা নাই। মুলতঃ এ পদ্ধতিটি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এর ব্যব¯হাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন উদ্ভাবিত, যার কোন এমএলএম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা এমএলএম বিষয়ক গবেষনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা কোন ধরনের স¦ীকৃতি নাই। শুধুমাত্র অখ্যত এক বিশ্ববিদ্যালয় ডড়ৎষফ টহরাবৎংরঃু তে কথিত পিএইচডি করা কালীন ব্যব¯হাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন তার পিএইচডির থিসিস হিসেবে এই নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি জমা দিয়েছেন এই পদ্ধতির এটুকু দাপ্তরিক স¦ীকৃতি তিনি দাবি করেন। অখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে ব্যব¯হাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন তার পিএইচডি অর্থের বিনিময়ে সম্পন্ন করেছেন বলে জানা যায়। তার এই উদ্ভট আবি¯কৃত পদ্ধতিকে নুন্যতম দাপ্তরিক স¦ীকৃত করার প্রয়াসে তার এই পিএইচডি করা। অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের বিনিময়ে প্রাপ্ত পিএইচডির থিসিসের ফসল, একটি অস¦ীকৃত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির হাতে সোপর্দ করা হয়েছে ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এর ৫০ লক্ষ সদস্য ও তাদের আমানত। উপরন্ত তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি একটি শুভংকারের ফাঁকি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রকৃত অর্থে এটি একটি নিষিদ্ধ পিরামিড পদ্ধতি যার শেষ পরিনতি অসংখ্য মানুষের নির্মম প্রতারনা। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানী ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড এর অনুসরনীয় মার্কেটিং পদ্ধতির ও কার্যক্রমের একটি তুলনামুলক চিত্র দেওয়া হলো (সংযুক্ত-০২ পাতা)।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর ইতিহাসঃ-

১৯৪১ সালে সর্বপ্রথম ক্যালফোর্নিয়ার একটি ভিটামিন কোম্পানী তাদের অপ্রচলিত ভিটামিন বাজারজাতকরনের জন্য মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির মার্কেটিং শুরু করে। সমসাময়িক অন্যান্য বিখ্যাত কোম্পানী যেমনঃ ফোর্ড, ক্যাটারপিলার প্রভৃতি, তারা এধরণের মার্কেটিং পদ্ধতির মাঝে কোন উৎসাহ খুঁজে পায়নি। কেননা ক্রেতা তার প্রয়োজনেই যাচাই বাছাই করে দ্রব্যটি কিনবে এ ব্যাপারে বড় বড় কোম্পানীগুলি আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু মানহীন অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানীদের এই আত্মবিশ্বাস ছিল না।

বিশ্বে এ পর্যন্ত যত এমএলএম কোম্পানী দেখা যায় তাদের বেশীর ভাগেরই দ্রব্য হলো অপ্রচলিত দ্রব্য যেমনঃ খাদ্য। পরিপূরক, বলবর্ধক, ওজনহ্রাসক , সৌন্দর্যবর্ধক প্রভৃতি। মূলতঃ এ ধরণের অপ্রচলিত দ্রব্যর বাজারজাতের ক্ষেত্রে এই এমএলএম পদ্ধতির মার্কেটিং বেছে নেওয়া হয়। অথবা বলা যায় এমএলএম ব্যবাসীয়রা এ ধরণের অপ্রচলিত দ্রব্য তাদের ব্যবসার বিষয় হিসেবে বেছে নেয়। অপ্রচলিত দ্রব্য যেহেতু মানুয়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নয় সুতরাং এ জাতীয় দ্রব্যর অনেক গুনাগুন বর্ণনা করে বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিশ্বাসকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে হয়। অন্যাদিকে অপ্রচলিত দ্রব্যর গুনাগুন ও মূল্য যাচাই করার সুযোগ খুব একটা থাকেনা। ফলে কোম্পানী তার বিক্রিত দ্রব্য ইচ্ছা মত মূল্যে বিক্রয় করে। যাতে বিক্রয় প্রতিনিধিকে খুশী করার পরিমাণ লাভ ঐ বিক্রিত দ্রব্য বিক্রয় করা থেকে কোম্পানীটি তুলে নিতে পারে।

বিশ্বের বেশীর ভাগ উন্নত রাষ্ট্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা প্রথম যখন তার যাত্রা শুরু করে সে সময় এই ব্যবসা পদ্ধতিটি অপ্রচলিত হওয়ায় দেশের সরকার বা জনগন এই ব্যবসার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছু জানতো না বা বুঝতে পারত না। পরবর্তীতে জনগন বার বার প্রতারিত হতে থাকলে রাষ্ট্র আইন করে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতি জনসাধারনের স¦ার্থ বিরোধী না হওয়ায় রাষ্ট্রসমুহ এ পদ্ধতির মার্কেটিংকে অনুমোদন দিয়েছে। যদিও ধুর্ত এমএলএম ব্যবসায়ীরা ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতির মার্কেটিং ও মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কে একই জিনিস বলার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে পদ্ধতি দুটির মাঝে সুক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। ডাইরেক্ট সেলিং মার্কেটিংকে ওয়ান টু ওয়ান পদ্ধতির মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বলা হয় যা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং এর অন্যান্য পদ্ধতি যেমন পিরামিড পদ্ধতি, ডাউনলাইন পদ্ধতি, চেইন পদ্ধতির চাইতে একেবারেই ভিন্নতর। মূলত মার্কেটিং পদ্ধতিগুলি এতই অপ্রচলিত যে, মার্কেটিং এর উপর পড়াশোনা করা ব্যক্তি বা গবেষকদেরও অনেক সময় বিষয় দুটির পরিস্কার পার্থক্য বুঝতে কষ্ট হয়। আর জনসাধারণ ও রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের ব্যক্তিদের জ্ঞানের ঘাটতির সুযোগ নেয় ধুর্ত এমএলএম ব্যবসায়িরা। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরণের ঘটনা দূর্ঘটনার পর রাষ্ট্র ও জনগন বুঝতে শিখে ও অতঃপর আইন করে এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স জার্মানী, স্পেন, ইতালী, নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পোলান্ড, পূর্তগাল, অষ্ট্রিয়া, জাপান, চীন, মালয়েশিয়া, থাই্যান্ড, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, নেপালসহ ৫২টি দেশে পিরামিড পদ্ধতির মাল্টি লেভেল মার্কেটিং সরকারীভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। এমএলএম ব্যবসার বিভিন্ন প্রতারনার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, পোলান্ড, সুইডেন প্রভৃতি দেশে এমএলএম কোম্পানীর বিরুদ্ধে দেশগুলির সরকার মামলা করেছে, কোম্পানী নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, জরিমানা আদায় করেছে। এমনকি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী Federal Trade Commision (FTC)ওয়েব পেইজে জনসাধারণকে এমএলএম কোম্পানীর প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকার নির্দেশনামুলক হুশিয়ারী দিয়ে একটি পেইজ বরাদ্ধ রেখেছে। চীনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ দিনের প্রতারনার পর এমএলএম ব্যবসা বন্ধের দাবীতে ১৯৯৮ সালে জনরোষ থেকে সমস্ত চীনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পরে। অতঃপর চীন সরকার এমএলএম ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আইন তৈরীর কাজ শুরু করে ও ২০০৫ সালে ডাইরেক্ট সেলিং আইন তৈরী করে। টেলিফোন বা ইন্টারনেটে অর্ডার দিয়ে হোম ডেলিভারী গ্রহন, ডোর টু ডোর মার্কেটিং, টেলি মার্কেটিং, ডিট্টো মার্কেটিং প্রভৃতি পদ্ধতির মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম)কে বৈধতা দেয়। আর অবৈধ ঘোষনা করে ডাউন সেলিং, চেইন সেলিং, পিরামিড পদ্ধতি প্রভৃতি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কে। বৈধ ঘোষনা করা ডাইরেক্ট সেলিং পদ্ধতির মার্কেটিং এ শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী ও সরকারী কর্মচারীরা অংশগ্রহন করতে পারবে না মর্মে আইন জারী করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর ইতিহাসঃ-

১৯৯০ সাল থেকে নগদ অর্থ দিয়ে সদস্য হয়ে আবার অন্যকে সদস্য করার মাধ্যমে প্রাপ্ত কমিশন থেকে নিজের মুলধন তুলে নিয়ে পরবর্তী দীর্ঘ ধাপগুলিতে রীতিমত কোটিপতি বনে যাবার স¦প্ন দেখিয়ে দেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠে নগদ অর্থকে দ্রব্যের হিসেবে পিরামিড পদ্ধতির উদ্ভোট এক মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা। এর পর সরকার জনগনের স¦ার্থ রক্ষার্থে ও পরস্পর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ লাঘবে নগদ অর্থ দিয়ে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। ঐ সময়ের র্ধুত এমএলএম ব্যবসায়ীরা ভোল পাল্টে নগদ অর্থের ¯হলে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত নিম্নমানের দ্রব্য, গাছ বিক্রয়, জমি বাড়ী বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানীর সদস্য করা প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে। মূলতঃ ঐ একই পদ্ধতি ব্যবহার করে একই রকমভাবে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করছে, শুধুমাত্র নগদ অর্থের বদলে গাছ বা নিম্নমানের দ্রব্যর নাম বলা হয়। বিক্রিত দ্রব্য কোন কাজে লাগুক বা না লাগুক, ক্রেতার ক্রয়কৃত গাছ আগামী ১০/২০ বছরে চোখে দেখা যাক বা না যাক লেনদেন হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কেউ আবার কল্পিত ব্যাংকে গচ্ছিত সোনা, কবর¯হান, বসবাসের জন্য জমি, বাড়ী, ফ্লাট বিক্রয় করেছে এমএলএম পদ্ধতিতে। সবারই লক্ষ ছিল একটাই জনগনের কাছ থেকে নগদ অর্থ, আমানত, সঞ্চয়ের অর্থ সংগ্রহ। তাতে যে দ্রব্য, যে নামে, যে পদ্ধতির কথা বলে পেরেছে, এমএলএম ব্যবসায়ীরা সেটাই করেছে। ক্রেতা হিসেবে জনসাধারনের কাছে কোম্পানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ধামা চাপা দেয়ার জন্য কোম্পানীগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবসার অংশীদার করেছে, চাকুরী দিয়েছে বা বড় বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠান বা কালচারাল ইভেন্ট স্পন্সর করেছে। জনসাধারনের কাছ থেকে প্রাপ্ত আমানত দিয়ে দেশ বিদেশে কোম্পানীর গুটি কতক ব্যক্তির নামে সম্পদ করেছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। আবার জনসাধারণ যখন তাদের আমানত ফেরত আনতে গেছে তখন কোম্পানীগুলি কিছুদিন পর অফিস বন্ধ করে গায়েব হয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে ওয়েবপেইজ নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্লিক ডট কম, সেল বাজার ডট কম প্রভৃতির ন্যায় ইন্টারনেট ভিত্তিক ডাইরেক্ট সেলিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ডোর টু ডোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমনঃ মার্কেট এ্যাকসেস, মার্কেট রিসার্চ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির অন্তর্গত ডাইরেক্ট সেলিং ব্যবসা (ডোর টু ডোর, অর্ডার এন্ড সাপ্লাই) পদ্ধতির মাধ্যমে কোন ধরনের প্রতারনা ছাড়াই দীর্ঘ দিন সুনামের সাথে এদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির নিজস¦ কোন অপরাধ নাই। ব্যক্তি বিশেষে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির অন্তর্গত প্রতারনা মুলক পদ্ধতি, বিভিন্ন নামে প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ পিরামিড পদ্ধতির ব্যবসা পরিচালনা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারনা করছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বিরুদ্ধে গৃহীত আইনগত পদক্ষেপঃ

(১) মার্কি যুক্তরাষ্ট্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপঃ

এ ব্যপারে যুক্তরাষ্ট্রের Federal Trade Commision (FTC) বিবৃতি দেয়-মাল্টি লেভেল ব্যবসার অর্থই আসবে নতুন রিক্রটেড ডিষ্ট্রিবিউটর থেকে, এর অর্থ ঘুরে ফুরে এটা অবৈধ পিরাবিমড পদ্ধতির, যার শেষ পরিনতি হলো অসংখ্য শুন্য হাত, যখন আর পরিকল্পনা সফল করার জন্য মানুষ খঁজে পাওয়া যাবে না, যদিও পিরামিড পদ্ধতির শুরুর মানুষগুলি লাভবান হবে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠানগুলি যতই বলুক তার পদ্ধতি পিরামিড পদ্ধতি নয়, অন্য পদ্ধতি। তার পদ্ধতিতে সর্বশেষ জনও লাভবান হবে। কিন্তু এই সর্বশেষ স্তরের কথিত লাভ দেখতে যেয়ে অসংখ্য মানুষকে পথে বসাবার ঝুকি আমরা কেউ মেনে নিতে পারিনা। এ ব্যাপারে Federal Trade Commision (FTC) তাদের নিজস¦ ওয়েব পেইজ-এ জনসাধারনের জন্য এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নিয়ে সতর্কতা জারী করে একটি পেইজ সংযুক্ত করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সময় মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ও বিভিন্ন মামলায় জরিমানা করে বা প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হয়। সেসকল মামলার সম্পর্কে নিম্নে বর্ননা করা হলোঃ

(ক) জুন, ১৯৭৩ United States Security and Exchange Commission অবৈধভাবে ৮০,০০০ লোকের কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার মুল্যের শেয়ার বিক্রির অপরাধে মামলা করে হলি ডে ম্যাজিক নামে একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর বিরুদ্ধে। অবশেষে কোম্পানীটিকে প্রতারনা মুলক কর্মকান্ড ও Federal Trade Commision (FTC) আইনের ৫ ধারা ও Calton Anti Trust Act এর ২(ক) ধারার আইন লংঘন করার অপরাধে কোম্পানীটিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।

(খ) ২০০৭ সালের মে মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বায়োফার্মান্স এমএলএম কোম্পানী থেকে Atorny General of Texas ৭০০০,০০০ ডলার জরিমানা আদায় করে। এখনও ৬.৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত চাইবার জনসাধারনের অনুরোধ এর্টনি অফিস প্রসাশনিকভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

(গ) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সব থেকে বড় এমএলএম কোম্পানী কুইক্সটার বা আমওয়ে এর বিরুদ্ধে Class Action Lawsuit মামলা হয় ২০০৭ সালে। এই মামলায় ৫৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয় ও ১৯৮৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী নির্ধারিত কমিশনের অধিক কমিশনের লোভ ক্রেতাকে প্রদর্শন করায় ১,০০,০০০ ডলার জরিমানা করা হয়।

(ঘ) ২০০৯ সালের ২৯শে মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের District Court of Arizona ‡Z Class Action Lawsuit মামলা হয়।

(ঙ) Atorny General of Florids ফুয়েল ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাষ্ট্রের একটি এমএলএম কোম্পানীর নামে Florida Unfair or Deceptive Trade Practices Act F.S 501.201ও F.S 849.091 এর ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে মামলা করেছে। যার মামলা নং- খ ০৬-৩-১০৯০. ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রদেশের এর্টনি এমএলএম পদ্ধতির মার্কেটিং এর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে।

(চ) হার্ভালাইফ ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাষ্ট্রের একটি এমএলএম কোম্পানীর বিরুদ্ধে Endless Chain Schemes, অস্পষ্ট মার্কেটিং পদ্ধতি, অন্যায়ভাবে কোম্পানী পরিচালনা ও প্রতারনার মামলা করে মিন্টন নামে জনৈক ক্রেতা যা California Class Action Lawsuit, Minton v Herblife Internationaনামে পরিচিত ও এই মামলার রায় হার্ভালাইফ ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে যায়।

(ছ) United States Security and Exchange Commission এমএলএম কোম্পানীগুলির কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে।

(জ) ফান্ড আমেরিকা-২০০০ নামে একটি এমএলএম কোম্পানীর ব্যবসা ১৯৮৭ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যানজেলস, ক্যালফোনিয়ায় কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্টের সরকার অনৈতিক ব্যবসা পদ্ধতি, প্রতারনার অভিযোগে ঐ কোম্পানীটি বন্ধ করে দেয়।

(ঝ) Federat Trade Commission (FTC) মার্চ/২০০৮ সালে প্রস্তাবিত Busineess Opportunity Rule থেকে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীগুলোর নাম বাদ দেয় কেননা এমএলএম ব্যবসা পদ্ধতির মধ্যমে বাণিজ্য বা দেশ বা নাগরিক কারোরই ভাল কোন সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা না দেখতে পাওয়ায় ।

(ঞ) ২০০০ সালে ২৫শে এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Federat Trade Commission (FTC) ইকুইনক্স ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এমএলএম কোম্পানীর বিরুদ্ধে নোটিশ প্রদান করে। মামলার রায়ে জরিমানা হিসেবে ৪০,০০০,০০০ ডলার জমা দিতে বলে। অতঃপর ২০০১ সালে কোম্পানীটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়।

(ট) ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Federat Trade Commission (FTC) ও Depertment of Justice মামলা করে NBTY I Daynamic Essatials নামের আড়ালে Royal Tongan Limu নামে এমএলএম কোম্পানী কেও ০২ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করে।

(ঠ) এমএলএম পদ্ধতির বিভিন্ন জনবিরোধী ইস্যু নিয়ে Western Journal & Communication জার্নালের কিছু আর্টিকেল উল্লেখ করা হলোঃ

1. ১. In China volunteers working to rescue people the schemes of MLM (Hopt & Hulsi, 1998)
2. MLM Orgnization have been described by some as cults (Butherfield, 1985)
3. Exploitian of personal relatianship for personal gain (Kitz & Reynil, 1997)
4. Quistionable use of evangelical discourse to promote the buiness (Hopft & Maddrell, 1996)
5. Pyramid Schemes (Fitzpatrick & Reynolds, 1997)
6. Organizations rife with misleadiug, deceptive and unethical behaviour (Carter, 1999)

(২) চীনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপঃ

১৯৯৮ সালে দীর্ঘ দিনের মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠানের প্রতারনার পর চীনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএ) বন্ধের দাবিতে জনরোষ সৃষ্টি হয় ও এই জনরোষ দাঙ্গায় রুপান্তরিত হয়ে সারা চীনে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় থেকে ডাইরেক্ট সেলিং আইন তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয় ও অবশেষে ২০০৫ সালে ডিসে¤¦র মাসে ডাইরেক্ট সেলিং আইন তৈরী করে টেলি মার্কেটিং, ইন্টারনেট অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারী, ডোর টু ডোর ও ডিট্টো পদ্ধতি জাতীয় মার্কেটিং পদ্ধতিকে ডাইরেক্ট মার্কেটিং বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত রেখে অবশিষ্ট সব ধরনের মাল্টি লেভেল মার্কেটিং নিষিদ্ধ করা হয়। ঐ ডাইরেক্ট সেলিং-এ আবার শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইন সম্পর্কিত ব্যক্তি, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, সরকারী কর্মকর্তা প্রভৃতি ব্যক্তিদের অংশগ্রহন নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।

(৩) ভারতে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপঃ

(ক) Reserve Bank of India অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সেপ্টে¤¦র, ২০০৬ সালে অন্ধ্র প্রদেশ পুলিশের সিআইডি বিভাগ অস¦াভাবিক মুল্য নির্ধারণ,অবৈধ আমানত সংগ্রহ ও অনৈতিক মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির কারনে আমওয়ে (ইন্ডিয়া)র সমস্ত অফিস ও ৮০,০০০ ডিস্ট্রিবিউটরের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

(খ) কেরালা হাইকোর্টের ২০১১ সালের ০৬ আগষ্ট তারিখের আদেশে ৯ই আগষ্ট কেরালা পুলিশ মাল্টি লেভেল কোম্পানী (এমএলএম) আমওয়ে (ইন্ডিয়া)র কোজিকাদো, কালুর, কোঢি, কোওায়াম, ত্রিশুর, কল্লাম এর অফিস সমুহ বন্ধ করে সরকারের অধিকারে নিয়ে নেয়। প্রধান বিচারপতি মাঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি সিএন রামা চন্দ্র নাইর গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ জারি করে।

(৪) যুক্তরাজ্য (ব্রিটেন) মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপঃ

২০০৭ সালের মে মাসে ইউ কে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (ডিটিআই) আমওয়ে (ইউকে), নেটওয়ার্ক টুয়েন্টি ওয়ান সহ বেশ কিছু মাল্টি লেভেল কোম্পানীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়।

(৫) পোলান্ডে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপঃ

১৯৯৭ সালে ওয়ারশ রিজিওনাল কোর্ট ও অন্য একটি রিজিওনাল কোর্টে বেশ কিছু মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।

(৬) সুইডেনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপঃ

১৯৭৩ সালে সুইডেনের মার্কেট কোর্ট হলিডে ম্যাজিক নামে একটি মাল্টি লেভেল মাকের্টিং (এমএলএম) কোম্পানীসহ কয়েকটি এমএলএম কোম্পানীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে ও প্রত্যেককে ০২ মিলিয়ন ক্রোনার জরিমানা প্রদান করে তাদের প্রতারনার জন্য।

মুলতঃ উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহে এমএলএম ব্যবসা জেঁকে বসে ১৯৬০ সাল থেকে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ১৯৯৫ সালের দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনসাধারণ বুঝতে পারে যে তারা প্রতারিত হচ্ছে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানীদের কাছে । এরপর তুমুল আন্দোলন ও জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। অবশেষে ২০০০ সালের পর থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রে এমএলএম ব্যবসা নিষিদ্ধ হতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে এমএলএম ব্যবসার স্বর্ণযুগ চলছে । নাম জানা না জানা অনেক এমএলএম কোম্পানী হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সুতরাং বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র সমূহ যেভাবে লক্ষ লক্ষ লোকের প্রতারণার পর এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা তাদের দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশেও এরই মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ এমএলএম কোম্পনীদের কাছে প্রতারিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন প্রভৃতি দেশের মত গণরোষ ও দাঙ্গা হাঙ্গামা হবার পর মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পূর্বে কম ক্ষতিকে মেনে নিয়ে যত অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসাকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জনসাধারণের বিশ্বাসের সুযোগ ব্যবহার করে তাদের প্রতারিত হবার হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন।

সামাজিক দায়বদ্ধতায় খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনুদান প্রদানের মাধ্যমে কোম্পানীর বিজ্ঞাপনি প্রচার ও ক্রেতা-ডিস্ট্রিবিউটরদের কোম্পানীর উপর আ¯হা বৃদ্ধি ঃ

২০০০ সালের পর থেকে সারা বিশ্বে ৫৩ টি উন্নত রাষ্ট্রে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয় । ১৯৮০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসার স্বর্ণযুগ হিসাবে ধরা হয়। এ সময়কালে উন্নত বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও এমএলএম ব্যবসার ক্ষতিকর দিকগুলি বুঝতে পারে নাই। পরবর্তীতে অসংখ্য মানুষের প্রতারণা, মামলা ও হামলার মাধ্যমে শেষ হয় এমএলএম ব্যবসার স্বর্ণযুগ। এই সময়ের মধ্যে উন্নত বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান গ্রহনকারী এমএলএম কোম্পানীগুলি তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের নামে ওয়ার্ল্ড ফুটবল চ্যালেঞ্জ আয়োজন, আমেরিকান যুব সকার প্রতিযোগীতা আয়োজন, ফুটবল দল এফসি বার্সেলোনা, ভ্যলেন্সিয়া সিএফ, সান্তোস এফসি, এফসি স্পরটেক মস্কো, মেক্সিকোর পুমা ও মান লুইস, ইসরাইলের ম্যককাবী, পোলান্ডের উইসলা কারলো ও ইটালির বোটাফাগো রেগাটাস এর ন্যয় দলের স্পন্সরশিপ করে। এভাবে তৎকালিন হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া এমএলএম কোম্পানিগুলি সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে বেছে বেছে এমন বিষয়ে অর্থ খরচ করতে থাকে যেখানে খরচ করলে সহজেই প্রচার পাওয়া যায়। এরপর ক্রেতা-ভোক্তা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের এ নবাগত ব্যবসার উপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনের জন্য বলতে থাকে যে- আমাদের কোম্পানি আর দশটি বড় কোম্পনির মত রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত ও গ্রহন যোগ্য কোম্পানী, না হলে আমরা কিভাবে সরকারের ও সকলের সামনে সরকারী ও বেসরকারী লোকদের নিয়ে এত বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারছি। এরপর ভোক্তা-ক্রেতা-ডিস্ট্রিবিউটররা কোম্পানীর উপর আস্থা অর্জন করে, একইভাবে এমএলএম কোম্পানীটি সমাজের ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের সংস্পর্শে যায় ও তার ব্যবসার নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে। কিন্তু এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। ২০০০ সালের পর সারা বিশ্বের প্রতারিত লক্ষ লক্ষ মানুষের জনরোষের কাছে ক্ষমতাশালী গোষ্ঠি ও সরকার মাথা নত করত বাধ্য হয়েছে। ঐ সকল দেশে এমএলএম কোম্পানীর প্রতারণামূলক ব্যবসাকে বন্ধ ঘোষণা করতে।

ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড ও নিওয়ে বাংলাদেশঃ

বাংলাদেশে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, নিওয়েসহ বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানীর সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে কোটি টাকা খরচ করে স্পন্সর প্রদান, কোটি টাকা খরচ করে বিপিএল, টি- ২০ টুর্ণামেন্ট আয়োজন, ভারতীয় চিত্রজগতের লোকদের এনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বড়- মধ্যম ও আঞ্চলিক পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগীতা আয়োজন করে। সরকারের উপদেষ্টা- মন্ত্রী- এমপি, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব, উচ্চ পদস্থ সামরিক- বেসামরকি কর্মকর্তা, এসপি, ডিসিদের দিয়ে ঐ সব অনুষ্ঠানাদি উদ্বোধন করিয়ে। তাদের সাথে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের কর্ণধার ও কর্মকর্তাদের ছবি তোলা ও ঐ ছবি জেলা, উপজেলা সহ সব স্থানের ডেসটিনির অফিসে বড় করে টাঙ্গিয়ে রেখে ও ছবি গুলির এ্যালবাম নবাগত আমানতকারী ক্রেতা-ভোক্তা-ডিস্ট্রিবিউটরদের দেখিয়ে বলা হয় যে, এত বড় বড় প্রভাবশালী মানুষেরা আমাদের কোম্পনীর সমর্থক, পৃষ্টপোষক ও কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ত । সুন্দর সুসজ্জিত অফিস, কোট-টাই পরা ভদ্রলোক, প্রাক্তণ সেনা প্রধান কোম্পানীর চেয়ারম্যান আর রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ততার ছবির প্রমাণ দেখিয়ে সাধারণ আমানতকারী-ক্রেতা-ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে কোম্পানীটি আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়। এ ভাবে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে কোম্পানীর সদস্য বানিয়েছে।

আমানত, সঞ্চয় ও ভবিষ্যত দ্রব্যের বাজারজাত/ প্রচার/ প্রবৃদ্ধিতে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির ধ্বংসাতœক প্রভাব ঃ

ভবিষ্যতে প্রস্তুত হবে বা ডেলিভারি দেয়া হবে এমন দ্রব্য, সঞ্চয়ের অর্থ, আমানতের অর্থ প্রভৃতি সংগ্রহের নিমিত্তে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবহার বিশ্বে যত এমএলএম পদ্ধতির কোম্পানি আছে তারা কেউ ব্যবহার করে না। যে ক'টি দেশে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা প্রচলিত আছে সেখানে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এমএলএম মার্কেটিং আইনত দন্ডনীয়। আমানত বা সঞ্চয়ের অর্থ সংগ্রহে এ পদ্ধতির ব্যবহার করা হলে, আপামর জনসাধারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপে আমানত বা সঞ্চয়ের অর্থ উক্ত এমএলএম কোম্পনিকে দিতে থাকলে দেশের সকল আমানত একমূখী হয়ে যায় ও দেশের সকল ব্যাংক, লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকটে ভূগতে থাকবে। তফশিলি ব্যাংকগুলি জনসাধারণের আমানতের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট একটি অর্থ থেকে কিছু অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমানতকারীর আমানত নিরাপত্তা গ্যারান্টি হিসাবে জমা দেয়। কিন্তু এসকল বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বিহীন এ সকল এমএলএম প্রতিষ্ঠানের কাছে আমানত রাখা অর্থের কোন নিরাপত্তা গ্যারান্টি অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা থাকে না। ফলে জনসাধারনের আমানতও ঐ প্রতিষ্ঠানের কাছে নিরাপদ থাকে না। যে কোন মুহুর্তে হায় হায় কোম্পানি হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।

মাল্টি লেভের মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার খসড়া আইন প্রস্তুত ও খসড়া আইনকে পূণাঙ্গ আইনে পরিণত করতে বাধা প্রদানঃ

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশীয়া, দঃ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, অষ্ট্রিয়া, ইটালি প্রভৃতি দেশ সহ ৫২ টি দেশে পিরামিড পদ্ধতি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গত ২০১১ সালে " ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১১" নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়, ডাইরেক্ট সেল ব্যবসার সাথে স¤পৃক্ত কোম্পনি ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা, পরিবেশক ও ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য।

অনুসন্ধানে জানা যায় , ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের নেতৃত্বে ঘবধিু সহ বেশ কয়েকটি বড় বড় এমএলএম প্রতিষ্ঠান প্রভাব খাটিয়ে " ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১১" এর খসড়ায় ধারা ০৪ (সংজ্ঞা) এর ১৩ নং এ সরাসরি বিক্রয় (উরৎববঃ ঝবষষরহম) এর সংজ্ঞায় পিরামিড সদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম (চুৎধসরফ ঝবষষরহম ঝপযবসব) এর মত জনবিরোধী, ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিকে অর্ন্তভূক্ত করিয়ে আইনগত ভিত্তি তৈরীর মাধ্যমে ভবিষ্যতে প্রতারণার পথ প্রসস্ত করেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইটালি, সুইডেন, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, দঃ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, অষ্ট্রিয়া, পোলান্ড, পর্তুগাল, চিন, জাপান, মালয়েশীয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ ৫২ টি দেশে পিরামিড পদ্ধতি বা অন্য নামের আড়ালে পিরামিড পদ্ধতি (আপাতঃ অন্য পদ্ধতির নামে পরিচালিত) মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা নিষিদ্ধ রয়েছে।

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড সহ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) পদ্ধতির প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলি প্রভাব খাটিয়ে আইনটির খসড়ায় এমন অনেকগুলি আত্মঘাতি, জনবিরোধী অংশ রেখেছে। তার পরও ডেসটেনি ২০০০ লিমিটেড " ডাইরেক্ট সেল আইন-২০১১" এর খসড়া নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারে নাই। ফলে ঐ খসড়া আইনকে তারা পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরীতে প্রভাব খাটিয়ে বাধা সৃষ্টি করে যখন তারা দেখতে পায় যে এ আইনের তফশীল-২, ধারা-১৭ তে ডাইরেক্ট সেল ব্যবসা নিষিদ্ধকরণের তালিকায়-
১) অবস্তগত বা অলিক পণ্য এবং সময়ের ধারা বাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া করণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপনন যোগ্য হবে এমন পণ্য বা সেবা ।
২) স্থাবর সম্পত্তি যেমন- গাছ, জমি, বাড়ী, ফ্লাট, দোকান বা অফিস স্পেস ইত্যাদি।
৩) সমবায় পদ্ধতির খামার বা সমিতি বা ব্যবসা এবং ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি ইত্যাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
৪) কমিশন বা বোনাস হিসেবে কোনরূপ শেয়ার ঋণপত্র ক্রয়- বিক্রয়।
৫) সকল প্রকার সঞ্চয় পত্র, বোনাস স্ক্রীম, কিস্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা সঞ্চয় বা বিলিবন্টন ইত্যাদি।

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড কোম্পানির অজনপ্রিয় নিম্নমানের কিছু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরিপূরক খাদ্য, ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য ব্যতীত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার দ্রব্য ও সেবা সমূহই হলো গাছ, জামি, বাড়ী, ফ্লাট, সমবায় পদ্ধতির সমিতি ও বোনাস হিসাবে শেয়ার। এজন্য ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড যখন বুঝতে পারে যে, এ খসড়া আইন পরিপূর্ণ আইনে পরিণত হলে তাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। তখনই ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড তাদের প্রভাব খাটিয়ে আইনটির খসড়া থেকে পরিপূর্ণ আইনে রূপান্তরিত হতে বাধা প্রদান করেছে বলে জানা যায়।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পনির (এমএলএম) কর্নধারদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ঃ

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পনি (এমএলএম) ব্যবসায় জনসাধারনের মাঝে স¦ার্থ সংশ্লিষ্ট একটি চেইন/সংযোগ তৈরী হয়। চেইনের সর্বশেষ ব্যক্তির সাথে চেইনের সর্ব প্রথম ব্যক্তির ব্যবসায়িক বিভিন্ন প্রয়োজনে নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। উপরন্ত ডিষ্ট্রিবিউটর প্রশিক্ষণকালীন চেইনের সর্বশেষ স্তর পর্যন্ত যে কোন রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম করার সুযোগ থাকে বলে এমএলএম ব্যবসার কর্নধারেরা এক সময় জন সংযোগের চেইনকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে নিজেরা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়। চীন ও আমেরিকা যুক্তরাস্ট্রসহ বেশ কিছু দেশে এমএলএম কোম্পানির রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ দৃশ্যমান। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পনি (এমএলএম) দ্বারা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের ঘটনা নিম্নে প্রদান করা হলোঃ-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পনির (এমএলএম) কর্নধারদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ঃ

১৯৯৪ সালে যুক্তরাস্ট্রের কংগ্রেস নির্বাচনে আমওয়া নামের একটি এমএলএম কোম্পানি তার একজন সেল্স রিপ্রেসেন্টেটিভ সুয়ে মায়রিক কে রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচনে দাড় করিয়ে কোম্পানীটি তার পেছনে ৬০,৬৯,৫২৫ ডলার খরচ করে তাকে নির্বাচিত করে। সুয়ে মায়রিক নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর কোম্পানী আরও বেশী আসনে তাদের ডিষ্ট্রিবিউটরদের নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া শুরু করে ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এমএলএম কোম্পানীর সদস্যদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করে, অর্থ খরচ করে আরও ০৫ জন ডিষ্ট্রিবিউটরকে কংগ্রেস সদস্য হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী করে আনে। তারা হলো নর্থ ক্যরোলিনা থেকে সুয়ে মায়রিক, নেব্রাস্কা থেকে জন ক্রিস্টেনসেন , মিশিগান থেকে ডিক ক্রিসলার, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে রিচার্ড রম্বো ও নেভাডা থেকে জন এনসিন। এ ধরনের নির্বাচনে কোম্পানীটি খরচ করে কোটি কোটি ডলার। ১৯৯৭ সালে ফোর্ট ওর্থ স্টার ম্যাগাজিনে মলি আইভিন্স তার একটি প্রতিবেদনে লেখেন " মার্কিন কংগ্রেসে এমএল এম ককাশ্ হলো এবারের নির্বাচনে ৫ জন এমএলএম ডিস্ট্রিবিউটর মার্কিন কংগ্রেস নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন''। ০৬ জন ডিষ্ট্রিবিউটরকে কংগ্রেসম্যান হিসেবে নির্বাচিত করার পর কোম্পানীটির রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ আরও বেড়ে যায়। এর পর কোম্পানীটির ব্যব¯হাপনা পরিচালক ডিক ডেভোস্ ও তার স্ত্রী বেট্সী ডেভোস্ রাজনৈতিক কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহন শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ডিক ডেভোস্ রিপাবলিক্যান দলের জাতীয় কমিটির অর্থ বিষয়ক প্রধান নির্বাচিত হয় ও তার স্ত্রী বেট্সী ডেভোস্ মিশিগান অঙ্গ রাজ্যের দলীয় প্রধান নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের মে মাসে মিশিগান অঙ্গ রাজ্যের প্রাদেশিক নির্বাচনে গভর্নর হিসেবে জেমনিফার গ্রাণহোম এর সাথে প্রতিদ্বন্দীতা করে হেরে যান। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের টনক নড়ে। মাল্টি লেভেল কোম্পনিগুলির রাজনৈতিক অভিলাষের কারণ অনুসন্ধান ও তার প্রতিকার করে।

চীনে রাজনৈতিক গোলোযোগঃ

১৯৯৮ সালে দীর্ঘ দিনের মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) প্রতিষ্ঠানের প্রতারনার পর চীনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএ) বন্ধের দাবিতে জনরোষ সৃষ্টি হয় ও এই জনরোষ দাঙ্গায় রুপান্তরিত হয়ে সারা চীনে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় থেকে ডাইরেক্ট সেলিং আইন তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয় ও অবশেষে ২০০৫ সালে ডিসে¤¦র মাসে ডাইরেক্ট সেলিং আইন তৈরী করে টেলি মার্কেটিং, ইন্টারনেট অর্ডার নিয়ে হোম ডেলিভারী, ডোর টু ডোর ও ডিট্টো পদ্ধতি জাতীয় মার্কেটিং পদ্ধতিকে ডাইরেক্ট মার্কেটিং বা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত রেখে অবশিষ্ট সব ধরনের মাল্টি লেভেল মার্কেটিং নিষিদ্ধ করা হয়। ঐ ডাইরেক্ট সেলিং-এ আবার শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইন সম্পর্কিত ব্যক্তি, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, সরকারী কর্মকর্তা প্রভৃতি ব্যক্তিদের অংশগ্রহন নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।

ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এর পরিচালকেরা প্রত্যেকেই প্রথমদিকে সাধারণ পিরামিড পদ্ধতির এমএলএম ব্যবস্থা চালু করে জনসাধারণের মাঝে মার্কেটিং চেইন সৃষ্টি করেছে। এরপর তারা গাছ বিক্রির নাম করে নগদ অর্থ আমানত সংগ্রহ করে। ধীরে ধীরে তারা ব্যাংকিং আইনকে পাশ কাটিয়ে আমানত সংগ্রহ করা ও তার মুনাফা দেয় ।

ইদানিং বিভিন্ন স্তর থেকে কোম্পানির কার্যক্রমের সমালোচনা উঠতে থাকলে কোম্পানির নিজস্ব মালিকানাধীন পত্রিকা " দৈনিক ডেসটিনি " ও " বৈশাখী টিভি চ্যানেল" এ যে ভাষায় ও যে ঔদ্ধত্ব নিয়ে পরিচালকদের বক্তৃতা বিবৃতি প্রকাশ পেয়েছে, বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেল র‌্যালি, খুলনায় ডেসটিনির কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করা পত্রিকা পোড়ানো ও বিভিন্ন সাংবাদিক সহ বিরোধীতাকারীদের ডেসটিনি'র কর্তৃপক্ষ ও সুবিধাভোগী দ্বারা হুমকি ধামকি প্রদান করে শক্তির মহড়া প্রদর্শন করা হয়েছে। তাতে তাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষিতার নিদর্শণ পাওয়া যায়।

নোট: এটি একটি সচেতনামূলক পোষ্ট। ইন্টারনেট, নাজিম ভাই, রোকন-উজ-জামান, অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদক সহ অনেকের সহায়তা নেয়া হয়েছে লিখতে। সহায়তা নেয়া হয়েছে সরকারী প্রতিবেদনের। এই লেখায় আমার কোন কৃতিত্ব নেই!!