সুন্দরবনের জলদস্যু ‘রাজু বাহিনীর’ সেকেন্ড ইন কমান্ড হাসান ওরফে আবুল হাসানকে ‘ক্রসফায়ার’ এ না মারার অনুরোধ করেছেন তার স্ত্রী।
নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে সাতক্ষীরা থেকে টেলিফোনে এ আবেদন করেন তিনি।
১৪ মাস আগে হাসানের সাথে বিয়ে হয় তার।
শনিবার টেলিফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গত ৩০শে মার্চ আমার স্বামী হাসানকে যশোরের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। আমার স্বামীকে ক্রসফায়ার এ না মেরে পুলিশের কাছে দেয়া হোক,’।
‘আমার স্বামী যদি কোন অপরাধ করে তাহলে তাকে পুলিশের কাছে দেয়া হোক। তার বিচার হোক। শাস্তি হোক। কিন্তু বিচার না করেই যেনো তাকে হত্যা করা না হয়,” আঞ্চলিক ভাষায় এ আবেদন করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
হাসানের শ্বাশুড়ি বলেন, হাসানের সাথে বিয়ের আগে আমরা তার পরিচয় জানতাম না।
‘সে কিভাবে এ পথে আসলো, কাদের কথায় এমন কাজ করতো তা না জেনে তাকে ক্রসফায়ার এ না মারার অনুরোধ করছি সরকারের কাছে,” সাতক্ষীরার আঞ্চলিক ভাষায় এ আবেদন করেন তিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে তিনিও পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
হাসানের পরিচয়:
বাগেরহাট জেলার রামপাইল থানার বাশুলি গ্রামের হাশমত আলীর ছেলে হাসান ছিলেন সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দস্যু বাহিনী ‘রাজু বাহিনীর’ সেকেন্ড ইন কম্যান্ড । ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল একটি প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেল’এ সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে ‘মামা’ হিসেবে পরিচিত হাসান গ্রামে পরিচয় দিতেন প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মচারী হিসেবে। টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে ‘রাজু বাহিনীর’ পক্ষ থেকে আত্মসমর্পনের আবেদন জানিয়েছিলেন হাসান। সরকার নিরাপদ ‘সারেন্ডার’ এর সুযোগ দিলে ৩৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ তাঁরা সারেন্ডার করবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। র্যাবের ক্রসফায়ার থেকে বাঁচতেই এই আবেদন করেছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদনও জানিয়েছিলেন রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু। সেই আবেদনের উত্তরে তাঁদেরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়। পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আরেকটি লিখিত আবেদন করেন সুন্দরবনের ‘দস্যু সম্রাট’ রাজু। তবে সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে আত্মসমর্পনের সুযোগ না পেয়ে রাজু বাহিনীর রাজু ভারতে চলে যান। তিনি এখন সেখানেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। রাজু পালিয়ে যাবার পর দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শহীদুল। বর্তমানে সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হিসেবে আছেন ফরহাদ।
এদিকে রাজু ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকেই সেই সময়ের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হাসান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। এমন অবস্থায় গত ৩০ মার্চ শুক্রবার তাঁকে যশোরের একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার তিনি গ্রেফতার হবার পর থেকেই নিখোঁজ হাসান।
একই ধরণের ঘটনা:
এর আগে একই ধরণের আবেদনের পরদিনই র্যাব এর তথাকথিত ক্রসফায়ার এ মারা যান মাদারীপুরের খায়রুল খালাসি।
২০০৯ সালের ১৪ নভেম্বর লুৎফর খালাসী এবং তার ভাই খায়রুল খালাসিকে ধরে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। লুৎফরের স্ত্রী জাহানারা বেগম এবং তার ছেলে বাবলু মাদারীপুরে একই দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে র্যাব এর কাছে অনুরোধ করেন, তাদেরকে যাতে ‘ক্রসফায়ার’ এ না মারা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের ৩৬ ঘন্টা পর, ১৬ই নভেম্বর দুই ভাইকে ‘ক্রসফায়ার’ হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় হাইকোর্ট এর বিচারপতি এ এফএম আবদুর রহমান এবং বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ এর বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে ২০০৯ সালের ১৭ই নভেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। রুলে জানতে চাওয়া হয় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে কেনো অবৈধ করা হবে না। এর আগে ২০০৬ সালে এবং ২০০৯ সালের জুন মাসেও হাইকোর্ট রুল জারি করে।
রাফে সাদনান আদেল বলেছেনঃ
ক্রসফায়ার চাই না। দেশত আইন আছে না !
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@রাফে সাদনান আদেল, আইনের প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন আছে!
আমি পথিক বলেছেনঃ
খবর টা পড়ে সত্যই আশ্চর্য হয়েছি । নিজের ভুল বুঝতে পেরে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় আমরা কি না তাদেরকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি ।
প্রাধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেও যদি কোনো সদুত্তোর পাওয়া না যায় তাহলে আর কোনো মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে কতোটুকু যে ভরসা পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমেয় ।
আজ এখানে ক্রস ফায়ার তো কাল ওখানে ! বিচার বহ্নিভুত এসব হত্যাকান্ড বন্ধে এখনই যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে পরে আর এর দুঃখ রাখবার জায়গা থাকবে না ।
–ধন্যবাদ সুফিয়ান ভাইকে
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@,আমি পথিক, ধন্যবাদ ভাই।
habib96 বলেছেনঃ
এভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড হলে এসব চুনপুটিদের সাথে জড়িত গডফাদার রা আইনের আড়ালেই থেকে যাবে। তাই ক্রসফাইয়ারের নামে এসব হত্যাকান্ড দেশের সার্থে অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@habib96, গডফাদারদের ধরতে হবে!
আরিফ হোসেন সাঈদ বলেছেনঃ
১। দেশের আইন আছে তবে তার বিচার সরকারি দলের বিরুদ্ধে গেলে খেয়াল খুশি মত পরিবর্তন করা যায়।
২। দেশে আইন নাই। আরএবি’এর হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ।
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@,আরিফ হোসেন সাঈদ, আইন এর যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে বিস্তার প্রশ্ন আছে!
আরিফ হোসেন সাঈদ বলেছেনঃ
১। দেশের আইন আছে তবে তার বিচার সরকারি দলের বিরুদ্ধে গেলে খেয়াল খুশি মত পরিবর্তন করা যায়।
২। দেশে আইন নাই। RAB’এর হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ।
সোহেল মাহমুদ বলেছেনঃ
‘আগুন’ পোষ্ট…
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@, সোহেল মাহমুদ, ধন্যবাদ।
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় বলেছেনঃ
ভালো পথে ফিরতে পারবে না কেউ? ফেরার অধিকার নেই?
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@,নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, সবার ভাগ্যে জোটে না! আশীবর্াদ থাকলে কথা নেই।
জসীম বলেছেনঃ
জানিনা কী আর বলব ????????????? কে শোনে কার কথা………….””
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@, জসীম, সত্যই সুন্দর!
রিফাত বলে বলেছেনঃ
আমরা প্রতিকার চাই.
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@রিফাত বলে , ধন্যবাদ।
শামীম রাহমান বলেছেনঃ
ক্রসফায়ারের কোন প্রয়োজন পড়ে না যদি না সঠিক সময়ে বিচার সম্পন্ন হয়। আমাদের দেশের লোকজন পারতপক্ষে পুলিশ এবং আদালতকে এড়িয়ে চলেন। কারণ এদের কবলে একবার পড়লে আর কোন রক্ষা নেই। পুলিশ আপনার কাছ থেকে ঘুষ নেবে, উকিল চেষ্টা করবে যত পারা যায়, বিচারকে বিলম্বিত করতে যাতে করে সে আরো বেশি করে টাকা খেতে পারে তার মক্কেল থেকে। এসব রক্তচোষাদের কোন জাতি নেই, ধর্ম নেই। একটা জিনিস আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা বা সরকার কেউ হয়তো জানে না যে “Justice Delayed is Justice Denied”। আর এসব কথা চিন্তা করলে র্যাবের কর্মকান্ডও খুব একটা খারাপ কিছু না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সন্ত্রাসী এসব নরপশুকে বাঁচানোর চেষ্টায় মত্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু একবারো কি তারা এসব ভেবে দেখে যে এই সন্ত্রাসীই গতকাল পর্যন্ত কত নিরীহ মানুষের জীবন নিয়েছে। বিচার বহির্ভুত এসব হত্যা পৃথিবীর কোন দেশে, কোন ধর্মেই স্বীকৃত নয়। আর এসব ঠেকানোর একটাই উপায়, বিচার ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু আর স্বতস্ফুর্ত করুন যাতে স্বল্প সময়ে যে কোন অপরাধের, যে কোন অপরাধীর বিচার করা যায়।
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@, শামীম রাহমান, ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।
শামীম রাহমান বলেছেনঃ
@ লেখক, আপনাকেও ধন্যবাদ এমন একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য।
Majed বলেছেনঃ
ওই মহিলার বিশ্বাস আছে যে, পুলিশের হেফাজতে দিলে এক প্রকার মুক্তি পাওয়া।
আবু সুফিয়ান_অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বলেছেনঃ
@Majed , ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন।
লাউ শাক বলেছেনঃ
যদি শুধু মাত্র প্রকৃত অপরাধী দের ক্রস ফায়ার এর আওতায় আনা যায়, তবে টা সন্ত্রাস দমনে গুরুত্ত পূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে, এই মহান সটটি কথা টা আমাদের শিকার করা উচিত.